ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জাতি হিসেবে পাকিস্তানের নির্লজ্জতা!

এমদাদুল হক তুহিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩
জাতি হিসেবে পাকিস্তানের নির্লজ্জতা!

যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াত ও তাদের মিত্র ছাড়া বাকি সবাই একমত। গত ১২ ডিসেম্বর ইতিহাসের দায়মুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

এ বিচার কার্যকর হওয়ায় কিছুটা হলেও নির্মল বাতাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।

অবশ্য পরের দিনই পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম তাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে আক্রমণের আহ্বান জানানোর মত ধৃষ্টতা দেখায়! নির্লজ্জ জাতির কোনো দিন লজ্জা হয়নি, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

৪৩ বছর আগের যে ক্ষত আমরা বয়ে বেড়াই, এ আহ্বান যেন তাতেই নতুন করে বিষাক্ত কোনো বর্জ্য পদার্থ ঢেলে দিলো।

স্বাধীন বাংলাদেশকে এই প্রথমবারের মতো হুমকি দেখানোর সাহস দেখাল কেউ,  যে নির্লজ্জ জাতি লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল ’৭১ এ, তাদের মুখে হুমকি শুনে একদিকে যেমন হাসি পায়, ঠিক তেমনই মন থেকে এদের ধিক্কার জানাই। ১৬ কোটি বাঙালিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার সাধ জাগে মনে।

১৯৭১ সালে পরাজিত হওয়ার পরও তারা অপরাধ স্বীকার করে নেয়নি কোনো দিন। কিন্তু এই বেহায়া নির্লজ্জ জাতির অনেক আগেই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন ক্রিকেটের ভুবনে নতুন তখন পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে ভালোবেসে আসছিল এ দেশের অনেক তরুণই! কিন্তু যে জাতি বাঙালিকে ছোবল দিয়েছিলো তাদের কোনো কিছুকেই বাঙালি হিসেবে আমরা সমর্থন জানাতে পারি না। সময়ের স্রোতে ক্রিকেটের আবহাওয়া পাল্টে গেল। বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যদু’টি দলের মধ্যে খেলা হলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সমর্থক বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭০ ভাগে উন্নীত হয়।

ইসলাম ধর্মের নাম করে জামায়াতের এজেন্টরা খেলার ক্ষেত্রে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেও সেই জোয়ার থেমে গিয়ে ভাটায় পরিণত হতে বেশিদিন লাগেনি!  

একসময়ের ক্রিকেট জগতের টপ হিরো ও পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ইমরান খান, কাদের মোল্লার ফাঁসিকে অনৈতিক বলে আখ্যা দেন।   তার বক্তব্যের মূল সারমর্ম বাংলাদেশে অবস্থানরত জামায়াতিদের মতোই!

মিথ্যে অভিযোগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, এই কাদের মোল্লা, সেই কাদের মোল্লা নয়- ঠিক এমনই পাগলের প্রলাপ বকেছেন রাজনৈতিক প্রতিবাদ সভায়। এখানে আবারো প্রমাণ মেলে পাকিস্তানি জামায়াতে ইসলাম ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলাম এক ও অভিন্ন! পাকিস্তানি মানেই জাতিগতভাবে পাকিস্তানি। তা খেলোয়াড় হোক আর যাই হোক!

বাংলাদেশে অবস্থানরত বাঙালি নামধারী জামায়াতি লোকগুলোর মন ও ভালোবাসা দু’টোই পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। ঠিক তেমনিভাবে এরও প্রমাণ মেলে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানো ইমরান খানও একজন নির্বোধ ও নির্লজ্জ মানব।

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলানো মূর্খতার শামিল। আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিচার হতে পারে। এই বিষয়ে হয়ত সামান্যতম জ্ঞানও তার নেই! জাতি হিসেবে বাঙালির অনেক আগেই পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলাকে বয়কট করা উচিৎ ছিল।

পাকিস্তান জামায়াতে ইসলাম ও ইমরান খানের নাক গলানোটা ছিলো আন-অফিসিয়াল। রাষ্ট্র হিসেবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিন্দা জানানো ছাড়া তেমন কিছুই করার ছিলো না বলে আমার অভিমত। কিন্তু যখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর শোক প্রস্তাব পাশ করা হয় তখন বাংলাদেশের দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে। তলব করা হয় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে। স্পষ্ট এবং কড়া ভাষায় জানানো হয় ‘বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক গলাতে আসবেন না। (তাহলে একাত্তরের মতো নাকটা কেটে দেওয়া হবে, বা নাকে খত দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে)।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, এক পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।  
 
তাকে উদ্ধৃত করে ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। তার মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত ও মর্মাহত।

অন্যদিকে ইমরান খান ও জামায়াতে ইসলামের মতে মিথ্যা অভিযোগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে।

পাঠক লক্ষ্য করে দেখবেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইমরান খান ও পাকিস্তান জামায়াত ইসলামের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত! ঠিক একই কাজ চলছে বাংলাদেশে। কাদের মোল্লাকে তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের আগে কাদের মোল্লা নামে দু’টি ভিন্ন লোক আছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, সাঈদীর রায়ের সময়ও একই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিলো। অর্থাৎ জামায়াত ও জামায়াতি মিত্ররা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চলছে এবং বর্তমান সময়ে দেশে যে জ্বালাও পোড়াও চলছে তা তারই বহিঃপ্রকাশ।

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ বাঙালিকে তারা হত্যা করেছিলো। ২৫ মার্চ ভয়াল অন্ধকারে যার শুরু, ১৪ ডিসেম্বর তার চূড়ান্ত ছোবল। সেই ডিসেম্বরেই ক্ষত স্থানে আবারো আঘাত করার মত ধৃষ্টতা দেখিয়েছে পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় মিত্ররা।

৭১’র বেদনাময় ক্ষতের প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা বাঙালি জাতিকে আবারও শক্তি জুগিয়ে দিলো। জাতি হিসেবে নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে তাদের এ দেশীয় মিত্রদের গুণগান গেয়ে যে যবনিকা পেশ করা হলো তাতে করে আবারও প্রমাণ মিলল কে বা কারা যুদ্ধাপরাধী ছিল।

১৪ ডিসেম্বর বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করে দিয়ে গেলেও, জাতির এ সহজ তত্ত্ব বোঝার মতো জ্ঞান রয়েছে।  

সরকারের সঠিক সময়ে হাইকমিশনারকে তলব করে উপযুক্ত ভাষায় জবাব দেওয়ার মাধ্যমে সঠিক জবাব পেল পাকিস্তান নামের মূর্খ জাতিটি। সেই মূর্খ জাতির চোখের সামনে অন্ধকারের যে পর্দা দেওয়া আছে দীর্ঘ দিন ধরে, সেই পর্দাকে সরিয়ে দিতেই বুধবার এদেশের তরুণরা পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করে, তাদের ধৃষ্টতার প্রতিবাদ জানিয়েছে।    

এমদাদুল হক তুহিন: কবি ও ব্লগার

বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।