ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এ কেমন সভ্যতা!

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪
এ কেমন সভ্যতা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে যেমন রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প, ঠিক তেমনি দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তিগুলোর একটি হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রবাসে থাকা মানুষগুলো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে টাকা পাঠানোর কারণে অনেক মন্দার পরেও দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েনি।



এবারে নজর দেয়া যাক কিছু ঘটনার দিকে। সাঈদীর মামলার রায় হলো; ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পেলাম হিন্দুদের বাড়িতে হামলা। কাদের মোল্লার ফাঁসিতে ফলাফল হিন্দুদের বাড়িতে হামলা। নির্বাচন হয়ে গেলো, এখন দেখতে পাচ্ছি আবারও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা। যেন দেশে যা কিছুই হচ্ছে সব দোষ ওই হিন্দুদের।

প্রতিবার নির্বাচন হয় আর হিন্দুদের উপর হামলা আমরা দেখতে পাই। কোন দল ক্ষমতায় এলো আর কোন দল গেলো তাতে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতার পালা বদল হয়, কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা আর বন্ধ হয় না।   এ বছর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে আর গত দু’দিন ধরে যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলো তাতে একটা বিষয় কিন্তু পরিষ্কার, তা হচ্ছে দেশে প্রবল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রয়েছে।   আর এভাবে যদি হিন্দুদের উপর হামলা হতে থাকে তাহলে যেমনটি অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের আনুপাতিক হার দিন দিন কমছে- সেই কমার হার আরও বাড়বে বলেই মনে হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যে- নির্বাচন হয়ে গেলো; এ নির্বাচনের পরে কেন আবার হিন্দুদের উপর হামলা শুরু হলো? বলা হচ্ছে ৩৯ ভাগ ভোট পড়েছে। তাহলে দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত? সবাই ভোট দিলেও তো পরে ৩৯ ভাগ হওয়ার কথা নয়! তাহলে কেন একটি জনগোষ্ঠীর উপর বার বার হামলা হবে?

কেন হচ্ছে, কি কারণে হচ্ছে এসব কোন কিছু ব্যাখ্যা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। এ বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা করতে গেলে ৪৭ এর বিভাজন; দ্বি-জাতি তত্ত্বসহ আরও অনেক ইতিহাস চলে আসবে।

তবে এটি যে সাম্প্রদায়িক একটি হামলা তা হলফ করে বলা যায়। এখন ধরুন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে যে বাংলাদেশিরা টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে; সে সব দেশের মানুষ যদি বলে বসে আমাদের দেশে মুসলমান দরকার নেই, তোমরা চলে যাও কিংবা কোন কালো মানুষ আমাদের দেশে থাকার দরকার নেই, অথবা সে দেশের কোন জঙ্গী গোষ্ঠী আমাদের মত চেহারার মানুষদের উপর হামলে পড়ে তখন আমাদের কেমন লাগবে? এ সবই কিন্তু সাম্প্রদায়িক হামলা বা চিন্তা-ভাবনা। এসব দেশে এরকম হয়না বলেই আমাদের দেশ থেকে মানুষ সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারছে বা পড়াশুনাও করতে পারছে।   একবার ভাবুন তো, এরাও যদি আমাদের দেশে হিন্দুদের উপর যা হচ্ছে সেরকম শুরু করে তাহলে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

স্বাধীন বাংলাদেশের একটা মুল স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। স্বাধীনতা পরবর্তী ’৭২ এর সংবিধানেও এটি ছিল। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী সময়ে সংবিধান পরিবর্তন হওয়ার পর সেটি আর আমরা ফিরে পাইনি। আমাদের অনেক বার বলা হয়েছে, ’৭২ এর সংবিধানে ফেরত যাওয়ার কথা। কিন্তু তার বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাইনি। নষ্ট রাজনীতি আমাদের সাম্প্রদায়িক করে তুলছে।

যারা হিন্দুদের বাড়িতে হামলা করছে অবশ্যই এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে। এটা নিশ্চিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা এই কাজ করছে। এখন খুঁজে বের করতে হবে কারা এই কাজগুলো করছে। এ ক্ষেত্রে কোন দলকে সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না। রাজনীতিতে সব সম্ভব।

এখনও তো দেশে হিন্দু আছে তাই এদের হয় মেরে, জ্বালিয়ে কিংবা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন। এর পর দেশ থেকে যখন `হিন্দু` বলে কিছু থাকবে না তখন আদি বাসিদের ধরবেন, মারবেন; এরাও যখন থাকবে না তখন তখন বিশেষ কিছু এলাকার মানুষদের মারবেন; নইলে জ্বালিয়ে দেবেন; এরাও যখন থাকবে না তখন দেশে গরীব দেখলে আপনাদের গায়ে জ্বালা উঠবে; গরীবদের মেরে, জ্বালিয়ে কিংবা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে আপনারা সুখী, সমৃদ্ধ ও ধনী বাংলাদেশ গড়বেন। এ কেমন সভ্যতা!

আমিনুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ই-মেইলঃ tutul_ruk@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।