ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ভুলের মাশুল জনগণ কেন দেবে?

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
ভুলের মাশুল জনগণ কেন দেবে? ফাইল ফটো

দেশে এসব কি চলছে? আগুনে পোড়ানো, বাস-ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয়া, পেট্রোল বোমায় মানুষকে পুড়িয়ে মারা নিত্যবেলার খবরে পরিণত হয়েছে। যারা জনগণের দোহাই দিয়ে, দেশের কথা ও দেশের মানুষের কথা বলে রাজনীতি করেন, তাদের কি দেশটার প্রতি কোনো মায়া নেই?

দেশটার প্রতি তাকিয়ে এদের প্রাণ কি একবারও কেঁদে উঠে না? ওদের অনুভূতি শক্তি কি একেবারেই ভোঁতা হয়ে গেছে? জনসাধারণের হৃদয়ের পীড়ন কি এদের এতোটুকু বিচলিত করে না? ক্ষমতার মোহে ওরা কি নির্দয়, পাষাণ বধিরে পরিণত হয়ে গেছে? সত্যি ক্ষমতা বড় বাজে জিনিস।

মানুষকে অসুর বানিয়ে দেয়। ভুল পথে পদচারিত করে। এমন দৃষ্টান্তের তো অভাব নেই।

বিএনপির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনঢ় থেকে গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি খালি মাঠে বল খেলল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলেন। শেখ হাসিনা আবারো তাদের নিয়ে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার কাজে মনোনিবেশ করলেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে। শেখ হাসিনার অধীনে সিটি কর্পোরেশনের যে কয়টি নির্বাচন হয়েছিল সেগুলোর সবগুলোতেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর‍াই বিজয় লাভ করেছিল। শেখ হাসিনার অধীনেও যে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বিএনপির ওই সিরিজ বিজয়ই ছিল তার প্রমাণ।
বিএনপি যদি তীব্র আত্মবিশ্বাস ও সাহস নিয়ে সেদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে তারা জনগণের ভোট পেয়ে হয়তোবা আবারো ক্ষমতায় চলেও আসতে পারতো। আর যদি সরকার গঠন করার মতো আসন নাই পেতো অন্তত বৃহৎ বিরোধীদল হিসেবে সংসদে ঠাঁই পেতো। সে সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে কেবল প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির বশে।

নির্বাচন যদি নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন না হতো কিংবা এতে স্থুল বা সুক্ষ কারচুপি হতো তাহলে জনগণ তা দেখত এবং তাদের প্রতি মানুষের একটা সহানুভূতি কাজ করতো। সরকার উৎখাতের জন্য আন্দোলনের নামে জনসম্পৃক্ততাবিহীন যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আজ তারা চালাচ্ছে তাও করতে হতো না। জনগণ স্বেচ্ছায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনে যোগদান করতো। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার যে বদনাম বাজারে ছড়াচ্ছে তা থেকেও তিনি মুক্ত থাকতেন।

বস্তুত গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচনে অংশ না নেয়া ছিল বিএনপি জোটের জন্য এক বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সেদিনও তারা মেতে উঠেছিলো মরণনেশায়। সারাদেশব্যাপি চালিয়েছিল সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম। নির্বাচনকে বানচাল করে দেশকে অকার্যকর করে দেয়াই ছিল মূলত তাদের লক্ষ্য। এ ভুল পথ বেছে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে তারা কোন ক্রেডিবিলিটি অর্জন করেছিল কিনা জানিনা, তবে সাধারণ জনগণকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছিলো তা জানি।

পক্ষান্তরে ৫ জানুয়ারিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কালো দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। সরকার সে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।

উপরন্তু ৪ জানুয়ারি বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি বালু ভর্তি ট্রাক ফেলে রেখে খালেদাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। যা কিনা একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সরকারের পরিচয় বহন করে না।

ওইদিন বিএনপি জোটকে সমাবেশ করতে দিলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? না হয় কয়েক লক্ষ লোকের সমাগম ঘটতো। ১৬/১৭ কোটি জনসংখ্যা সর্বস্ব একটি দেশে যেখানে ১০/২০ টাকায় ভাড়াটে লোকের অভাব হয় না সেখানে একটি সমাবেশে কয়েক লক্ষ লোকের উপস্থিতি ঘটলেইবা সরকারের কি এমন ক্ষতি হতো?

তাছাড়া সমাবেশ করতে না দেয়ার পেছনে সরকার যে অদৃশ্য কারণের কথা বলে থাকেন তাও জনসমক্ষে তারা স্পষ্ট করতে সক্ষম হননি।

বস্তুত  সমাবেশ করতে না দেয়াটা ছিল সরকারের জন্য এক হঠকারী সিদ্ধান্ত। যা কিনা বিএনপি জোটের নিভু নিভু আন্দোলনে কেরোসিন ঢেলে দেয়ার নামান্তর। সরকারের ভুলের দরুণ আজ জ্বলছে দেশ, পুড়ছে মানুষ।

বস্তুত আজকের চলমান সহিংস রাজনীতির জন্য কোন পক্ষই কম দায়ী নয়। ওদের ভুল রাজনীতির জন্য দেশের মানুষকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই আমার প্রশ্ন, ভুল করবে তারা আর সে ভুলের মাশুল সাধারণ জনগণকে কেন দিতে হবে?

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী লেখক, Shajed70@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।