বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষ এখন দিশেহারা। হরতাল অবরোধের নামে ওরা যে দানবীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তা কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সমপন্ন লোকের পক্ষে মেনে নেয়া মোটেও সম্ভব নয়।
জাতীয় পতাকা হাতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রতীকী অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তারা ব্যবসাবাণিজ্য, সর্বপরি অর্থনীতিকে বাঁচানোর দাবি জানালেন। তাদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কলকারখানার শ্রমিকসহ সাধারণ জনতাও যোগদান করেন। বিএনপি জোটের এক মাসেরও বেশি টানা হরতাল অবরোধের ফলে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও সংগঠনটি জানিয়েছে।
এভাবে অনির্দিষ্টকাল ধরে হরতাল অবরোধের নামে হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে যে ধস নামবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অর্থনীতি ধ্বংস হলে দেশও বেঁচে থাকবে না। তাই প্রয়োজনে আইন করে হলেও হরতাল অবরোধ নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানায় সংগঠনটি।
ব্যবসায়ী নেতাদের অবস্থান কর্মসূচির নিউজটি টিভিতে দেখে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি। দেশটার প্রতি মায়া জেগে উঠে। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে তাদের হাঁটার দৃশ্যটি সমস্ত শরীরে অজানা শিহরণ জাগিয়ে দিল। ধমনীর প্রতিটি শিরায় নাড়া দিয়ে উঠলো সুপ্ত দেশপ্রেম।
আমরা যারা রাজনীতি বুঝি না, দেশ নিয়ে ভাবি না, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করি না তারাও দেশের এ দুর্যোগময় মুহূর্তে হু হু করে কেঁদে উঠি। হৃদয়ের পীড়ন নিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে দেশটার দিকে তাকিয়ে থাকি। অথচ যারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা বলে রাজনীতি করেন, রাজনীতিকে পুঁজি করে ক্ষমতায় যাওয়া-আসা করেন তাদের পাষাণ হৃদয় মুহূর্তের জন্য হলেও এতোটুকু কেঁদে উঠে না।
এরা কেমন রাজনীতিবিদ! কেমন ওদের রাজনীতি! কি এদের দেশপ্রেম! ক্ষমতার জন্য ওরা বেছে নিয়েছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। যে রাজনৈতিক আন্দোলনে জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা পায় না, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কিংবা ইজতেমার মতো বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও হরতাল অবরোধ সাময়িকভাবে হলেও শিথিল হয়না, তা কোনো গণমুখী আন্দোলন হতে পারে না। ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যে পুরোপুরি জঙ্গিবাদের কাঁধের উপর ভর করে চলছে তা আর রাখঢাক করে বলার কিছু নেই।
বিগত দিনের রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজপথে মিছিল মিটিং বা সমাবেশ হতে দেখা যেতো। পিকেটিং হতো। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে তাদের দাবির সমর্থনে শ্লোগান তুলতেন। পুলিশের গুলিতে আহত বা নিহত হতেন রাজনৈতিক কর্মী বা নেতারাই। অথচ এখনকার আন্দোলনকারীরা বেছে নিয়েছে সময়ের নিকৃষ্টতম পন্থা হিসেবে চোরাগোপ্তা পেট্রোল বোমা হামলা। যে হামলায় প্রতিদিন নিষ্ঠুরভাবে আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে অসংখ্য সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে। বেছে বেছে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন বা পণ্যবাহী যানবাহনে আঘাত হানাই হচ্ছে বিএনপি জোটের এখন প্রধান দায়িত্ব। এ লক্ষে তারা প্রতিদিন রুটিন মাফিক পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে চলছে।
সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী তাঁদের এ মরনমুখি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুকুম দিয়েছেন। এমনকি পবিত্র জুমার দিন শুক্রবারেও হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারকে যতই বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করা হোক- এ ধরনের সহিংস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার পতনের রাজনৈতিক লক্ষ্য কি মোটেও সম্ভব? জনগণের ভোগান্তি বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
সেদিন এফবিসিসিআইয়ের আহ্বানে ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ ১৫ মিনিটের জন্য জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সবার উপরে দেশ। এ দেশে রাজনীতি থাকবে। প্রতিবাদ থাকবে। কিন্তু সহিংসতার জায়গা নেই। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবশ্যই এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে।
বিএনপি নেত্রী যে পথে হাঁটছেন তা কোন শুদ্ধ পথ নয়। এ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে জীবনের শেষ বেলায় তাকে চরম মূল্য দিয়ে যেতে হবে। দেশে বিদেশে “জঙ্গি নেত্রী” হিসেবে ইতোমধ্যে যেভাবে তাঁর বদনাম ছড়িয়ে পড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে হয়তোবা একদিন তাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েও নিক্ষিপ্ত হওয়া লাগতে পারে।
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী লেখক , Shajed70@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫