পর পর খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইজন ব্লগার হত্যার পর অনেকেই বলছেন খুব সহজে ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাওয়াতে যে যা-খুশি লিখছে। এতে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হচ্ছে, ধর্ম নিয়ে উস্কানির পাশাপাশি ধর্মান্ধ মানুষও তৈরি হচ্ছে।
ফেসবুক হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে; এসবের মধ্যে ফেসবুক বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুক থাকাতে যে কেউ তার মনের ভাব খুব সহজে চটজলদি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। অনেক সময় না-বলা-কথাগুলোও হয়তো অনেকটা ডাইরিতে লেখার মতো করে প্রকাশ করা যায়। ফেসবুক এমন একটা মাধ্যম যার সাহায্য শহুরে উচ্চশিক্ষিত মানুষ যেমন যে কারো কাছ থেকে একটা ভালো ধারণা, মতামত জানতে পারে, ঠিক সেই একই মতামতটা দেশের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলের খুব-একটা-শিক্ষিত-নয় এমন মানুষও পেয়ে যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জালটা এমনভাবেই তৈরি করা যাতে খব সহজে যে কারো কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফেসবুকের মাধ্যমে কি কেবল ভ্রান্ত ধারণা, উস্কানি কিংবা এই ধাঁচের লেখাই আমরা বাংলাদেশিরা লিখে থাকি?
অবশ্যই না। এই ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকেই গঠনমূলক আলোচনা যেমন করে, ঠিক তেমনি কারো যদি তাৎক্ষনিক রক্ত দরকার হয়, কোনো কারণে বিশেষ সাহায্য দরকার হয়--এমন অনেক কিছুতেই অন্তত আমরা বাংলাদেশিরা কিন্তু এখন ফেসবুক ব্যবহার করছি। এছাড়া এটি জনসচেতনা থেকে শুরু করে মুক্তমত প্রকাশের একটি মাধ্যমও বটে।
বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুক না ব্যবহার করার পক্ষে যারা অভিমত দিচ্ছেন, তারা দিচ্ছেন কেবল একটি দিক বিবেচনা করে। নানান সময়ে ব্লগার কিংবা অন লাইন অ্যাকটিভিস্টদের উপর যে হামলা হয়েছে সেগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সবক্ষেত্রেই চাপাতি ব্যাবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ এই চাপাতি এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে একটা মোক্ষম অস্ত্র হয়ে উঠেছে। তাহলে এখন কি বলা হবে, দেশে চাপাতির ব্যবহারই নিষিদ্ধ করা হোক? কেননা চাপাতি দিয়েই বারবার নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে! এই চিন্তা কিন্তু কারো মাথায় আসছে না। কারণ দৈনন্দিন কাজে চাপাতির আরও ব্যবহার রয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে, এর পরেও ধরা যাক চাপাতি বন্ধ করা হলো; এতে তো আর পশুপাখির মাংস কাটা বন্ধ হবে না। মানুষকে এর জন্য তখন হয়তো চাপাতির পরিবর্তে ছুরি ব্যাবহার করতে হবে কিংবা অন্য কোনো কিছু। যেটিই হয়তো আবার পরে মানুষ হত্যাকারীরা নিজেদের অস্ত্র হিসেবে ছুরি চাকু ব্যবহার করবে না ---এটা কি কেউ বলতে পারে? ঠিক তেমনি ফেসবুক বন্ধ করলে তো আর সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে না। এখন তো ব্লগ, টুইটারসহ আরও অনেক মাধ্যম রয়েছে। ফেসবুক যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন হয়তো লোকজন অন্য যে কোনো একটা মাধ্যমকে বেছে নেবে।
আসল বিষয় হচ্ছে সচেতনতা এবং কে কিভাবে একটা প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছেন। এখন যেহেতু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত সচেতন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং এটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই প্রায় বহুল প্রচলিত জনবান্ধব, হিতকর একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে, এটি বন্ধ করা হবে ভুল। বরং উচিত হবে এর ব্যবহার ও কোনটি গ্রহণ করতে হবে, কোনটি গ্রহণ করা উচিত না এই বিষয়ে ব্যবহারকারীদের নিজেদেরই সচেতন হওয়া।
আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক ও গবেষক
ইমেইল- tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময় ১৩৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৫