কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের কোনও দিক নির্দেশনা নেই
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিগত সময়ে সরকারের নেওয়া বেশ কিছু প্রশংসিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু কৃষির এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট সমাধানে, তথা কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও দিক নির্দেশনা নেই এই বাজেটে।
২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার চেষ্টা হিসেবে খাদ্য মজুদের ক্ষমতা বাড়ানো ও কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহের কথা বলেছিলেন। কিন্তু কৃষকদের কৃষিপণ্য ক্রয় বা সংগ্রহ পদ্ধতিতে পরিবর্তন বা সংস্কার প্রয়োজন, কারণ সরকার যেভাবে পণ্য ক্রয় করে তাতে এর সুবিধা কৃষক পায় না, পায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। সরকার যখন কৃষি পণ্য সংগ্রহ করে, ততদিনে সেটা কৃষকের হাতছাড়া হয়ে যায়। এ পরিস্থিতির অবসানে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনও কিছুই আমরা দেখতে পাই না।
এক্ষেত্রে কৃষক বাঁচাতে এবং কৃষিপ্যণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় কৃষি পণ্য মূল্য কমিশন’ গঠন করতে হবে। এই মূল্য কমিশন কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণে কাজ করবে এবং সরকারি ও বেসরকারি কৃষি পণ্য ক্রয়পদ্ধতিতে সংস্কার আনবে।
ন্যায্যমূল্য প্রসঙ্গ গুরুত্বহীন! নেই অগ্রাধিকারেও
বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্যই পাচ্ছেন! খোদ কৃষিমন্ত্রীর এই উপলব্ধি এই আশংকা-উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে তেমন কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই, কারণ সরকার এটিকে কোনও সমস্যাই মনে করছেন না। এর প্রমাণও পাওয়া যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘মিডিয়াম টার্ম বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৫-১৬ টু ২০১৭-১৮’ নামের বিশাল একটি প্রকাশনাতে। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক আটটি কর্মসূচি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত মানের বীজ উৎপাদন, অর্গানিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, উন্নত মানের বীজের সম্প্রসারণ ইত্যাদির কথা থাকলেও কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারে এমন কোনও কর্মসূচির উল্লেখ নেই।
আনুপাতিক হারে কৃষির জন্য বরাদ্দ কমেছে
আগামী অর্থ বছরের জন্য বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১২,৬৯৯ কোটি টাকা, যা টাকার অঙ্কে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪২১ কোটি টাকা বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ২৩.১৩%, অথচ কৃষির জন্য বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ৩.৪৩%। গত অর্থবছরে কৃষিখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫.১২%, অথচ আগামী অর্থ বছরের জন্য এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৪.৩০%। মোট বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষির জন্য বরাদ্দ কমে গেছে ০.৮২%। গত পাঁচ বছরে এবারই কৃষি বাজেটের আকারের আনুপাতিক হারে সবচেয়ে কম বরাদ্দ পেল।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫