ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ছাত্রলীগ সম্মেলনঃ অভিনন্দন নতুনদের, তবে....

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৫
ছাত্রলীগ সম্মেলনঃ অভিনন্দন নতুনদের, তবে.... সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসেন

ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে গত কয়েক দিন দেশের গণমাধ্যমে নানান সংবাদ এসেছে। এবারের সম্মেলনে সরাসরি ভোটেই নতুন সভাপতি হিসেবে সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকির হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।



ভোট কতটুকু গণতান্ত্রিক হয়েছে, কোন উপায়ে হয়েছে, সিন্ডিকেট হয়েছে কিনা- এ নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে অন্তত এতটুকু বলা যায়, সম্মেলনটি মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দেশের সবচেয়ে পুরনো ও বড় এই ছাত্র সংগঠনটি প্রকৃত ছাত্রদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ২৯ বছরের বেশি বয়সি কারো হাতে আর থাকছে না, সেই সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিলো। এর বাস্তবায়ন এখন দেখা যাচ্ছে।

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েই তো এতবড় সংগঠনটিকে বিচার করা যায় না। এই সংগঠনটির স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতৃত্ব রয়েছে। তারা কেমন করছে, তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা কেমন, পত্রপত্রিকায় ছাত্রলীগ সম্পর্কে ভালো না খারাপ সংবাদ বেশি আসছে- এসব পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির খবরের জন্যই ছাত্রলীগ সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে!

এর একটা কারণ হয়তো, কেন্দ্রে আমরা যাদের নেতা হতে দেখি, স্থানীয় পর্যায়ে ঠিক সেই উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় না। কেন্দ্রে হয়তো মেধাবী ছাত্ররাই শেষপর্যন্ত নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন, স্থানীয় পর্যায়ে কারা নেতা হচ্ছে, তারা কি করছে, তাদের মনিটর ঠিকভাবে করা হচ্ছে কিনা এসব নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলাই যায়।

যারা খারাপ কাজে জড়িত, নানান সময়ে অনুপ্রবেশকারী বলে কেন্দ্র পার পেয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা করে কিংবা বহিষ্কারের একটা লিস্ট ধরিয়ে দেয়। এতে করে সাধারণ ছাত্রছাত্রী কিংবা মানুষের কতোটা আস্থা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে আমার ঠিক জানা নেই।

মাগুরাতে অতিসম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, ছাত্রলীগের দুইপক্ষের জের ধরে এক অন্তঃসত্ত্বা মা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেই গুলি আবার তার পেটের বাচ্চার শরীরেও লেগেছে; সাথে সাথে সেই মাকে অপারেশন করতে হয়েছে; বাচ্চাটি বেঁচে থাকলেও, দেড় মাস আগেই এই বাচ্চা পৃথিবীতে এসেছে বন্দুকের গুলি শরীরে নিয়ে! এই  লজ্জা তো আমাদের সবার, আর ছাত্রলীগের তো অবশ্যই।  

ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকিরের তো উচিত হবে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগেই এই মা ও শিশুর কাছে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং শপথ করা- যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন ঘটনা না ঘটে।

ভুল যে কেউ করতে পারে, পৃথিবীতে কোন মানুষ যেমন ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তেমনি কোন সংগঠনও ভুলের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। ভুল স্বীকার করে নিয়েই বরং সামনে এগুনো ভালো। তাতে নিজের সংগঠনের সদস্যরা যেমন বিষয়টা শিখতে পারে, তেমনি সাধারণ জনগণের মাঝেও আস্থার একটা জায়গা তৈরি হয়।
দেশের প্রায় সব ঐতিহাসিক অর্জনের সাথে জড়িত পুরনো এই ছাত্র সংগঠনটির কাছে দেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের যে চাওয়া সেটির সাথে প্রাপ্তির একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

নতুন সভাপতি সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকিরের কাছ থেকে চাওয়া থাকবে অন্তত প্রাপ্তির এই দূরত্বটুকু তারা যেন ঘুচানোর চেষ্টা করেন।

আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক ও গবেষক, tutul_ruk@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।