অসংখ্য তথ্য-উপাত্তের ভাণ্ডার আর মাশরুম ক্লাউডের স্মৃতি দিন দিন তামাদি হয়ে যাচ্ছে। কেননা, ৭০ বছর আগের (১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট) ইতিহাস নিয়ে ইদানিং তেমন আর কেউ মাথা ঘামান না।
নানান দিবসের ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, ৬ এবং ৯ আগস্টের বীভৎসতার স্মৃতি!
প্রতি দিবসের নেপত্থ্যে যে ইতিহাসই থাকুক না কেন, তা পর্যালোচনা ব্যতিরেকে সামনে তাকালে দেখতে পাই, পরমাণু প্রতিযোগিতায় (Nuclear Race) রাশিয়া, ইসরাইল, ইরান, বলাই বাহুল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কী ভারত, কেউই কিন্তু পিছিয়ে নেই।
পৃথিবীতে এই পরিমাণ আণবিক বোমার মজুত আছে, যা দিয়ে বসুন্ধরা নামের এই গ্রহটিকে ধ্বংস করা যাবে অসংখ্যবার!
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট কর্নেল পল টি ব্যাটস জানতেন না যুদ্ধবিমান বি-২৯ সুপারফোর্টেসে আসলে তিনি কী বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন! তার কাজ কেবল চেইন অব কমান্ডের অংশ হিসেবে ‘Little Boy’-কে নির্দিষ্ট অক্ষে ‘drop’ করা। তিনি তা করেছিলেন সঠিকভাবেই।
Little Boy-এর ভূপৃষ্ঠ স্পর্শ করতে সময় লাগে .৫৭ সেকেন্ড! ততক্ষণে বি-২৯ সুপারফোর্টেস ইউটার্ন করে ফিরতি পথে।
আচমকা ফুঁসে ওঠা ‘Mushroom Cloud’-এর দৃশ্য দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। কিন্তু এর বেশি আর কিছুই তার করার ছিল না। একই ঘটনা ঘটে প্রয় তরুণ পাইলট মেজর চার্লস ডব্লু সুইনির ক্ষেত্রেও, যখন তিনি ‘Fatman’-কে বহন করেছিলেন।
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি জনপদকে ধুলায় পরিণত করে। প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসা জাপানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কেবল তার দম্ভ বা ক্ষমতাই প্রকাশ করেনি; নিশ্চিত করেছে, পুঁজিবাদী পৃথিবীতে তার নেতৃত্ব এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি হুমকিটাও ছিল লাগসই।
বিজ্ঞানের অসংখ্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধাপ পেরিয়ে আইন আইনস্টাইনের হাত ধরে মানুষ পারমাণবিক শক্তির ক্ষমতা অর্জন করে। কোনো ইতিবাচক কাজে এর তেমন প্রয়োগ লক্ষ করা না গেলেও গণহত্যায় অভূতপূর্ব ধ্বংসযজ্ঞ নিশ্চিত করার জন্য এর প্রয়োগ পৃথিবীবাসী দেখেছে। এর রেশ এবং তেজস্ক্রিয়তা জন্ম থেকে জন্মন্তরে বহন করতে হয়েছে বহু নির্দোষ সাধারণ মানুষকেই।
তুমুল সমালচনা ও প্রতিবাদের ঝড়কে সামাল দিয়ে একটির পর একটি যুদ্ধের দামামা কিন্তু বেজেই গেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রতি বছর লাভ করেছেন কেউ না কেউ। কিন্তু তাতে একটি নির্দোষ মানুষও কম নিহত হয়নি ভিয়েতনাম, বসনিয়া এবং গাজাসহ পৃথিবীর মানচিত্রের অনেক দেশ। যতবারই অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনা দেখা গেছে, ততবারই বিকশিত হয়েছে প্রথম বিশ্বের সমরাস্ত্র ভাণ্ডার।
প্রকৃতিতে ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম এখন স্বাভাবিকভাবে তেমন একটা দেখা যায় না। সেটা ইদানিং চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। কিন্তু ‘মাশরুম ক্লাউড’ পৃথিবীবাসী দেখেছে দু’বার। ঘটনাটি বিরল হলেও বিস্মৃত নয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকি দিবসকে ঘিরে মনে পড়ছে ফরাসি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক জঁ রোস্ট্যান্ডের কথা।
কোনো এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন- ‘Kill one man and you are a murderer. Kill millions of men, you are a conqueror and kill them all you are a GOD!’
আজকের যুগে এই শ্লেষোক্তি একটুও মিথ্যে নয়!
সামিয়া কালাম
goluban@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৫