বাংলাদেশে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট হচ্ছে, প্রথম খেলায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। ভাবলাম দ্বিতীয় খেলাটা মজা করে দেখা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, কক্সবাজার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া কোন খেলা টেলিভিশনে দেখানো সম্ভব হচ্ছে না টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে। স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তিরা কি বিষয়টি জানতেন না? তাহলে কক্সবাজারে কেন বাংলাদেশের ম্যাচ আয়োজন করা হলো। দেশের কোটি কোটি মানুষকে এভাবে বঞ্চিত করার কোন মানে হয় না। প্রথম খেলা বাংলাদেশ খেলেছে চট্টগ্রামে, পরের ম্যাচ আবার কক্সবাজারে। অথচ স্বাগতিক দেশ না হয়েও ভারত গ্রুপ পর্বের সব খেলা খেলছে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। স্বাগতিক দেশ হয়ে এতটুকু সুবিধা কি বাংলাদেশ পেতে পারতো না?
ক্রিকেটে তিন মোড়লের কথা বহুল প্রচলিত। ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড একরকম নিজেদের কুলীন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এমনকি অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও এদের খেলা থাকলে টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে, অথচ স্বাগতিক হয়েও বাংলাদেশের খেলা দেখানো হচ্ছে না। ক্রিকেটকে যদি বৈশ্বিক খেলায় রুপান্তরিত করতে হয় তাহলে এই মোড়লদের আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে এমন আরও অনেক মোড়ল।
আমরা বাংলাদেশিরা ক্রিকেট খেলা শুধু দেখি না, প্রাণেও ধারণ করি। ক্রিকেট দর্শক হিসেবে বাংলাদেশের একটা আলাদা জায়গা আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ সেটি মেনেও নিয়েছে যে বাংলাদেশের দর্শকরা শিক্ষিত দর্শক। অর্থাৎ লেখাপড়ায় তারা কোন ক্লাস পাস করেছে কি করেনি সেটা ব্যাপার না, কিন্তু ক্রিকেটটা তারা ভালোই বুঝে। এই দর্শকরাই কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ ভোমরা। এর কারণেই এখন বাংলাদেশে বিপিএলের মতো ক্রিকেট আয়োজন হচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে স্পন্সরও। এখন আমাদের বিভিন্ন কোম্পানিকে দেখা যায় জিম্বাবুয়ে থেকে শুরু করে এমন আরও কিছু দলের স্পন্সর হতে। জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রা যখন বাংলাদেশের কোন কোম্পানির বাংলা লেখা লোগো তাদের জার্সি’তে লাগিয়ে খেলতে নামে, তখন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে এই ভেবে যে, শুধু বাংলাদেশ নয়, এখন আমাদের স্পন্সররা অন্য দেশের ক্রিকেটেও অবদান রাখছে। তাহলে আমরা কেন বিশ্বক্রিকেটে মোড়ল হয়ে উঠতে পারবো না! এর শুরু কিন্তু নিজ দেশ থেকেই করতে হবে। নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করা হচ্ছে, অথচ বাংলাদেশের খেলাই টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে না, এ রকম হলে দর্শকরা মনঃক্ষুণ্ণ হতেই পারে। তাই ক্রিকেট কর্তা ব্যক্তিদের এই বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।
আর বিশ্ব ক্রিকেট যে শুধু দশ কিংবা বারোটি দেশের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না, এটা তো এই অনুর্ধ্ব বিশ্বকাপেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। নেপালের পর আজ নামিবিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে। অথচ টেস্ট খেলুড়ে দেশ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে। ক্রিকেটের এই ছড়িয়ে যাওয়ার সময়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে আসতে হবে নিজেদের আরও একধাপ উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করতে। যেখানে আগামী দিনের ক্রিকেটে নেতৃস্থানীয় একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হবে।
আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক ও গবেষক, aminulislam80@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
জেডএম/