ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

পরিবেশের হুমকি চবির ময়লা, অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

সহদেব চন্দ্র মজুমদার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
পরিবেশের হুমকি চবির ময়লা, অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সবুজের আচ্ছাদন আর উঁচু-নিচু পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (চবি) আলাদা করেছে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।

কিন্তু ১৭শ ৫৩ একরের এ সৌন্দর্যভূমি আবেদন হারাচ্ছে সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছে। যার মূল কারণ অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ফেলা গৃহস্থালি বর্জ্য।

এতে ক্রমান্বয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব। আপাত দৃষ্টিতে বোঝা মনে হলেও যথাযথ উদ্যোগে এই দৈনন্দিন বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে সম্পদ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী মিলে ক্যাম্পাসে বসবাসকারী জনসংখ্যা ৯ হাজারের বেশি।

বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কামাল হোসাইনের একটি গবেষণায় উঠে আসে, ক্যাম্পাসে দৈনিক জনপ্রতি ০.১৭ কেজি হারে গৃহস্থালি ময়লা উৎপন্ন হচ্ছে। এই হিসাব মতে শুধু ক্যাম্পাসে বসবাসকারীদের মাধ্যমেই প্রতিদিন গড়ে ১৫শ কেজির উপরে ময়লা উৎপন্ন হয়।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব ময়লা ফেলা হচ্ছে কাছাকাছি কোনো খোলা জায়গায়। বিশ্ববিদ্যালয় হল, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা, এমনকি শিক্ষকদের বাসস্থানের সামনেও একই চিত্র বর্তমান। পরিসংখ্যান মতে, বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে মোট ৬৪টি উন্মুক্ত স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা হয় এসব ময়লা, যার প্রতিটিই অস্বাস্থ্যকর ও অননুমোদিত।

‘দিনের বেলা কষ্ট করে থাকলেও, রাতের বেলা ডিউটি করাটা কঠিন হয়ে পড়ে ময়লার গন্ধে’ আক্ষেপ করে এমনটাই বলছিলেন দক্ষিণ ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় দায়িত্বরত এক গার্ড। এ যেন কুকুর আর কাকের তীর্থস্থান। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক বসবাসকারী জানিয়েছেন, অসচেতনতা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এ অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী।

ছোট পরিসরে স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অব এনভায়রনমেন্ট’ বিভিন্ন কার্যক্রম চালালেও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আলোর মুখ দেখছে না কোনো উদ্যোগই।

সঠিক পদ্ধতিতে গৃহস্থালির ময়লা ব্যবস্থাপনার তিনটি অংশ থাকে। প্রথমত, জনগণকে ভোগ্যপণ্যের পরিমিত ব্যবহার ও কম বর্জ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা, দ্বিতীয়ত, উৎপন্ন বর্জ্য থেকে বাছাই করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বস্তু আলাদা করা এবং কিছু কিছু বর্জ্য আংশিক পরিবর্তন বা প্রক্রিয়াজাত করে দ্বিতীয় কোনো পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা।

তাছাড়া জৈব পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য প্রচলিত পদ্ধতি। এই জৈব সার, রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে এবং মাটির কন্ডিশনার রূপে ব্যবহারযোগ্য।

গৃহস্থালির বর্জ্যের এই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে যেমন রাখে সুস্থ-সুন্দর, তেমনি কমায় প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য ফেলার স্থানের আয়তন।

চবিতে উৎপন্ন বর্জ্যের প্রায় ৬৮ শতাংশ জৈব পচনশীল হওয়ায় জৈব সার উৎপাদনের জন্য ইতিবাচক ও উপযোগী। এছাড়াও অন্য পণ্যের কাঁচামাল পাওয়া যাবে এমন বর্জ্যের পরিমাণ ২৮ শতাংশ। তাহলে দৈনন্দিন বর্জ্য কি বোঝা স্বরূপ নাকি সম্পদ! প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের যথোপযোথ উদ্যোগ আর সবার সহযোগিতা।

লেখক: সহদেব চন্দ্র মজুমদার
পরিবেশ বিজ্ঞান, বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।