ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সংবিধান, বনমালী ও সর্পরাজ

জাহিদ নেওয়াজ খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১১
সংবিধান, বনমালী ও সর্পরাজ

বিরোধীদল থেকে হুমকির পর আভিধানিকভাবে এখনো সংবিধান ছুড়ে ফেলা বা ডাস্টবিনে নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। তবে উচ্চ আদালতের বিচারকের দিকে যেভাবে প্রিন্টারের ভাঙ্গা অংশ আর পানির বোতল ছুড়ে মেরে নতুন করে ‘মহাপ্রলয়’ ঘটানো হয়েছে, তাতে দেশকেই না বঙ্গোপসাগরের অথৈ পানিতে ছুড়ে ফেলা হয় সেই আশংকায় আমজনতা।



এরকম ছুড়ে ফেলার ঘটনা মাত্র কয়েক বছর আগেই ঘটেছে। তারপর নৌকার সওয়ারীদেরনৌকা তীরে ভেড়াতে কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি। আর উৎপাদন কম হলেও অন্তত ক্ষেতটুকু ধরে রাখতে পেরেছে ধানের চাষীরা। কিন্তু সেই কষ্টের দিন তাদের ভুলে যেতে খুব বেশি দিন সময় লাগেনি।

দু’পক্ষ থেকেই আবারো এমন রণহুংকার যে, একপক্ষ মনে করছে তাদের ধানক্ষেতে অন্য কেউ লাঙ্গল দিয়ে চাষ করলে করুক, নৌকা ভরেতো কেউ ধান নিয়ে যেতে পারবে না। আর অন্যপক্ষের ধারণা, নৌকা কেউ নিয়ে গেলে নিয়ে যাক, নৌকা নিলেতো সাথে অন্যের কষ্টে ফলানো ধানও নিয়ে যাবে।

গণতন্ত্রে অনির্বাচিত কারো স্থান নেই, এমন কথা বলে টেকনোক্র্যাট কোটার আইনমন্ত্রীর উপস্থাপিত সংবিধান সংশোধন বিল শেখ হাসিনার তৃপ্তির হাসির মধ্য দিয়ে পাস হওয়ার দিন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো আড়াই বছরের টাইমবোমার কাউন্টডাউন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তার পূর্ণতা পেয়েছে কিছুদিন আগে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে অভিজাত এলাকায় হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে আবাস খুঁজে পাওয়া খালেদা জিয়ার সংবিধান ছুড়ে ফেলার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। তিনি তবু ছুড়ে ফেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু একসময় নারী নেতৃত্ব হারাম বলে পরে খালেদা জিয়ার আঁচল ধরে এমপি হওয়া ফজলুল হক আমিনী ছুড়ে ফেলার মধ্যেই আটকে থাকেননি, সংবিধান ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

এটা স্পষ্ট, তারা যে সংবিধান ছুড়ে ফেলা বা ডাস্টবিনে নিক্ষেপের কথা বলেছেন সেটা ১৫তম সংশোধনীর পর যে সংবিধান সেই সংবিধান। সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টকারী অথবা সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে আরেকবার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া কিংবা অষ্টম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানানো তাদের দিলের যে সংবিধান ওই সংবিধান নয়।

তবে সংবিধান ছুড়ে ফেলা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আবার যারা এখন সংবিধান ছুড়ে ফেলাকে মুসলমানের কোরআন অবমাননার মতো জাহান্নামি পাপ মনে করছেন তারাও যে সংবিধান ছুড়ে ফেলেননি এমনও নয়। এমনকি সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথায় যারা আদালতে গিয়েছেন, তারা যে আদর্শিক সংবিধানে বিশ্বাস করেন, সেই সংবিধান ছুড়ে ফেলার পর তারাও যে এ নিয়ে আইনি লড়াই করেছেন তাও নয়।

সংবিধান ছুড়ে ফেলা এবং ধরে রাখার পুরো বিষয়টিই আসলে ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে আদর্শের কোনো বালাই নেই। বড় দুই দলই সংবিধান নিয়ে সেই ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত। তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু কিছু সুবিধা-অসুবিধার অংশীদার।

বাংলাদেশে প্রথম সংবিধান ছুড়ে ফেলা হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেদিন শুধু বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই সপরিবার হত্যা করা হয়নি, রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা স্বাধীন একটি দেশের আদর্শিক অবস্থানকেও গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এভাবে সংবিধান ছুড়ে ফেলার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উধাও, বিসমিল্লাহর সংযোজন, আর সামরিক শাসনের বৈধতা। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যাতে বিচার করা না যায় সেজন্য ইনডেমনিটিরও সাংবিধানিক স্বীকৃতি। এসবই যে খালেদা জিয়ার স্বামী প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে হয়েছে এমন নয়, এগুলো হয়েছে একটি প্রগতির আদর্শের বিপরীতে প্রতিক্রিয়ার স্বার্থের পরিপূরক হিসেবে।

মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জিয়া সেই প্রতিক্রিয়ার শক্তির নেতা হয়েছেন, তার ক্ষমতা সুসংহত করতে পেরেছেন। আগে পরে প্রগতির ব্যর্থতার কারণে এতোটাই সুসংহত করতে পেরেছেন যে নতুন এক আদর্শের নেতা হয়েছেন তিনি, তার উত্তরাধিকার আর নিজের ক্যারিশমা দিয়ে খালেদা জিয়া দুই দুই বারের প্রধানমন্ত্রী, এখনো সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ ভোটারের প্রতিনিধি। প্রকাশ্যে তাই সংবিধান ছুড়ে ফেলার হুমকিও দিতে পারেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রথমবারের মতো ছুড়ে ফেলা শক্তির এখনকার প্রধান নেতা খালেদা জিয়া।

জিয়া আর খালেদা জিয়ার মাঝখানে সেই নেতা ছিলেন এইচ এম এরশাদ। অন্যের বন্দুকের গুলিতে জিয়া ক্ষমতায় এলেও ৮২’র ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতায় এসেছেন নিজের বন্দুক জিয়ার বুড়ো উত্তরসূরীর দিকে তাক করে, আরেক দফা সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে তাকে সিলগালা করে রেখে।

এরপর সেই সংবিধানকে জিয়ার চেয়েও আরো বেশি ইসলামী করে গেছেন এরশাদ যার ব্যক্তিগত কাজকর্মে ইসলামের বিন্দুমাত্র লেশও নেই। সংবিধানকে ছুড়ে ফেলেই এরশাদের ক্ষমতা দখল, এরপর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে দফায় দফায় তাকে ছুড়ে ফেলা হয়। তবে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তার বিদায় হলেও সেসময়ের সংবিধান রক্ষা করে সাংবিধানিক পথেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে তাকে। এজন্য তার দল এখনো ৬ ডিসেম্বরকে এক ধরণের সংবিধান রক্ষা দিবস হিসেবে দেখতে চায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে তখনো আরেক দফা সংবিধান ছুড়ে ফেলার ইচ্ছা ছিলো তার। তবে রাজনীতিকদের শুভবুদ্ধি আর ঐক্যের কারণে সেদিন তা সম্ভব হয়নি। যে শক্তি তা করতে পারতো তাদের সেই সাহস হয়নি ৯০ সালে। কিন্তু রাজনীতিকদের কান্ডজ্ঞানহীনতায় ওই শক্তি ওয়ান ইলেভেনে ঠিকই সেরকম সংবিধান ছুড়ে ফেলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

বাংলাদেশে সংবিধান ছুড়ে ফেলার ঘটনা খুব কম নয়। তবে ৭৫’র ১৫ আগস্টই প্রথম সংবিধান ছুড়ে ফেলা হয়েছিলো কি না এ নিয়ে আর কেউ না হোক অন্তত এবারের সংবিধান সংশোধন কমিটির কো চেয়ারপার্সন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আপত্তি জানাতে পারেন। হয় তিনি বলতে পারেন স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে সংবিধানে সই না করে তিনিই প্রথম সংবিধানকে ছুড়ে ফেলেছেন। অথবা যে চেতনা ও আদর্শ থেকে ৭২’র সংবিধান হওয়ার কথা ছিলো তা না হওয়ায় প্রথমবারের মতো সংবিধান ছুড়ে ফেলেছেন তখনকার ক্ষমতাবানরাই।

ছুড়ে ফেলা শব্দটি কেউ নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন কি না এটা তার ব্যক্তিগত রুচি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সংবিধান ছুড়ে ফেলার ঘটনা বারবারই ঘটেছে। তার জন্মদাতা বারবারই ক্ষমতাবানরা। আর বিপরীতে যখন যারা এর বিরোধিতা করেছেন তারা আসলে ক্ষমতাসীনরা যে সংবিধান ছুড়ে ফেলেছেন সেই সংবিধান আর তার আদর্শকে ধরে রাখতে চেয়েছেন; ক্ষমতাবানরা আগের সংবিধান ছুড়ে ফেলার পর নতুন যে কুদরতি সংবিধান দিয়েছেন বাস্তবে না হলেও অন্তত মনে মনে সেই নতুন সংবিধান ছুড়ে ফেলেছেন।

ছুড়ে ফেলার বিষয়টি তাই আসলে কোনো পরিবর্তনের পর এক ধরণের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়। সুস্থ চিন্তার মানুষের এর সঙ্গে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নও জড়িত। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ৭ক অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়েছে তাতে সেই বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়টি থাকলো কি না তা আইনজ্ঞদের বিচারের বিষয়। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: কোনো ব্যক্তি ‘শক্তি প্রদর্শন’ বা ‘শক্তি প্রয়োগে‘র মাধ্যমে বা ‘অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়’ ‘এই সংবিধান ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে, তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে’।

এই দোষের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ক্রসফায়ার না হলে বাংলাদেশে যেহেতু আইনি মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় ফাঁসির মাধ্যমে, লক্ষীপুরের তাহেরপুত্রের যে ফাঁসির আদেশ হয়েছিলো, সংবিধানের সমালোচনার মাধ্যমে নাগরিকের আস্থা বা বিশ্বাসে ঝামেলা করলে সেই ফাঁসিই এখন শাস্তি। কি ভয়ংকর বিষয় হবে যদি ভবিষ্যতে আবারো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো একটি বিধান ফিরে আসে আর সংবিধানে ৭ক অনুচ্ছেদও বহাল থাকে। তাহলে ওই ইনডেমনিটির সমালোচনা করার মানে হবে মৃত্যুদণ্ড।

এক্ষেত্রে সংবিধান নিয়ে এখন একমাত্র যার বিশ্লেষণ সৎ এবং নিরপেক্ষ মনে হয় সেই সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের লেখার একটি প্যারা এখানে হুবহু তুলে ধরা যায়। তিনি লিখেছেন: সংসদের আইন ও বিচারবিষয়ক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে বললাম, ৭ক অনুচ্ছেদের ওই অংশ কী উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে, তা জাতীয় সংসদে আলোচিত হয়নি। আইনমন্ত্রী কোথাও তা বলেননি। আমরা জানতাম, শুধু সামরিক শাসন ঠেকাতেই ৭ক যুক্ত হচ্ছে। তাহলে একই অনুচ্ছেদে এসব কথাবার্তা ঢোকানো হলো কেনো? ওই প্রবীণ সাংসদ জবাব দিলেন, সংবিধান ছুড়ে ফেলার মতো উক্তি শায়েস্তা করতেই ওই অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে।

যদি শুধু মানুষের, বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের ভাষা পরিশীলিত করতে ওই অনুচ্ছেদ ঢোকানো হয়ে থাকে তাহলে আর বলার কিছু নেই। কিন্তু সর্বনাশের জায়গা হচ্ছে এটা যদি সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ অমান্য বা সমালোচনার জন্য হয়, তাহলে হাইকোর্টে আমিনীর অশালিন বক্তব্যের বিরুদ্ধে রিট করা শাহরিয়ার কবিরও অভিযুক্ত হয়ে যেতে পারেন। আওয়ামী লীগ তার ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু দুই দশক ধরে জেল-জুলুম পরোয়া না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনমত ও আন্দোলন সংগঠিত করা শাহরিয়ার কবির সংবিধানে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার বিরোধী। তার সব বক্তৃতা-বিবৃতি এবং লেখালেখিতে  সেই লড়াইও তিনি অব্যাহত রেখেছেন।

সুতরাং শাহরিয়ার কবির কিংবা তার চিন্তার অনুসারীরা তাই এটাও মনে করতে পারেন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও ৭২’র সংবিধানের মূল কাঠামোতে ফিরে না গিয়ে মহাজোট সরকারই ৭২’র সংবিধানকে ছুড়ে ফেলেছে। হয়তো ভোট বাক্সের হিসাবের কারণে এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ সরকারের কাছে খুব আরামদায়ক মনে হয়নি। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগেই তিন বাক্যের আদেশে খুব আরাম লেগেছে।

এ তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে অতীতেও কম সাংবিধানিক বিতর্ক দেখেনি বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার যুক্তি ছিলো, তিনি যাই করুন সংবিধানের বাইরে যেতে পারবেন না, কারণ তিনি সংবিধান ছুড়ে ফেলতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত তাকে তার ভাষায় শেখ হাসিনার অসাংবিধানিক দাবি মানতে হয়েছিলো, ছুড়ে ফেলতে হয়েছিলো তখনকার সংবিধান। আর এখন আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে সেই ব্যবস্থা ছুড়ে ফেললেন তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির প্রস্তাবক শেখ হাসিনা নিজে। এর বিরোধিতা করছেন খালেদা জিয়া। কোনোভাবে খালেদা জিয়া যদি আবার ক্ষমতায় আসেন আর যদি তখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল থাকে, তাহলে নতুন কোনো ওজর খুঁজে তিনিও তা বাতিল করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। আর যদি বহাল না থাকে তাহলে শেখ হাসিনা এর পুনর্বহালের পক্ষে আন্দোলন করলে তার বক্তব্য হবে, তিনি সংবিধান ছুড়ে ফেলতে পারেন না। তখন হয়তো শেখ হাসিনা একটু ঘুরিয়ে বলবেন, তার চাওয়া যাই হোক, দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া সংবিধান ছুড়ে ফেলেছে। জনগণের দাবি পূরণে তাই ওইরকম ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভাগ্য তারাই দেশের নিয়ন্ত্রক যারা ক্ষমতায় থাকার সময় নিজেদের ইচ্ছামতো সংশোধন করা সংবিধানের ধারক-বাহক; আর ক্ষমতায় না থাকলে তা ছুড়ে ফেলার পক্ষে।

এখন সেই ছুড়ে ফেলাদের সঙ্গে থাকা আমিনী শুধু ছুড়ে ফেলা নয়, ডাস্টবিনেই ফেলে দিতে চান সংবিধান। বাংলাদেশ সাক্ষী, ৭২’র সংবিধান থেকে বিচ্যুতির কারণেই ডাস্টবিন থেকে উঠে আসতে পেরেছে আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট। একই কারণে পল্টনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে সাপ গলায় নিয়ে মিছিল করে ‘সর্পরাজ’ আর পরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন আহমদকে জুতা ছুড়ে মেরে ‘জুতা চৌধুরী’ উপাধি পাওয়া মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর আরেক ইসলামী ঐক্যজোট ফুলের মালা উপহার দিয়ে এখন আওয়ামী লীগের মিত্র। সংবিধান বা জুতা কোনো কিছু ছুড়ে ফেলা কিংবা সাপ বা ফুলের মালা কোনো কিছু জড়িয়ে ধরার মাজেযা তাই অনেক।

জাহিদ নেওয়াজ খান, বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল আই।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।