ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কী করছেন, কী বলছেন ভিসি ইফতেখার?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
কী করছেন, কী বলছেন ভিসি ইফতেখার?

৫০ বছর পূর্তি উৎসব করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক লাখ লোকের আবেগ-অনুভূতি জড়িত। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসেছেন, তেমনি বিদেশ থেকেও।

৫০ বছর পূর্তি উৎসব করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক লাখ লোকের আবেগ-অনুভূতি জড়িত।

অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এসেছেন, তেমনি বিদেশ থেকেও। এরা রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। কারও কারও অবদান ও ভূমিকা দেশ ছাড়িয়ে আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলেও পরিচিতি পেয়েছে।  

সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যারা যোগ দিয়েছেন, বিশেষ করে শিল্পী রুনা লায়লার গানের অনুষ্ঠান যারা উপভোগ করেছেন, তারা নেচেগেয়ে উৎসবে মেতেছিলেন। অনেক সুখস্মৃতি নিয়েই তারা ফিরে গেলেন সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব শেষে। কিন্তু কারও কারও মনে কিছুটা  ‘খটকা’ রয়ে গেল। কেন এই অস্বস্তি তাদের?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী শিল্পী রুনা লায়লার গান শুরুর আগে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে ওঠেন,  ‘হুররে, আমার বান্ধবী রুনা আসছে। আমার বান্ধবী গান করবে...। ’

নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারের এই গানের অনুষ্ঠানে ভিসির এসব কথা শুনে আমাদের মহান শিল্পী রুনা লায়লার মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল জানা যায়নি। কিন্তু অনেকের মনেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসির এই ধরনের বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪ হাজার।

শুধু সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এই ধরনের বক্তব্যের জন্য শুধু নয়, কথা হচ্ছে আরও অনেক কিছু নিয়ে। যেমন নগর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)বিদায় অনুষ্ঠানে গিয়েও তিনি অতিথির বক্তব্য দিয়ে এসেছেন।

এর আগে পুলিশ ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার একজন অফিসারের বিদায় অনুষ্ঠানে ভিসি পদে থাকা একজন শিক্ষাবিদের (সচিব পদমর্যাদা) বক্তব্য দেয়ার নজির আছে বলে আমাদের জানা নেই।

চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিকগুলোর পাতা ওল্টালে প্রায় প্রতিদিনই দুইজন ব্যক্তির ছবি দেখা যায়। এদের একজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। আরেকজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

মেয়র নগরীর এক নম্বর নাগরিক। কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমসহ নানা অনুষ্ঠানে তাকে যোগ দিতে হয়। তিনি খেলাধুলার সঙ্গেও যুক্ত। রাজনীতিতে বিশেষ পদেরও অধিকারী। ফলে তার সামাজিক যোগাযোগ অনেক বেশি। আর ভিসি হলেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। ভিসির পদটি বিধিবদ্ধ পদ, রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে কর্মচারিদের সমস্যা পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় ম্যানেজ করা, প্রশাসনযন্ত্র সচল রাখা, পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ও শিক্ষার মান বজায় রাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করতে হয় তাকে তার মেয়াদকালের মধ্যে।

চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। যানজট পেরিয়ে যেতে-আসতেই দিনের অনেক সময় পার হয়ে যায়। একজন ভিসি যখন নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যোগ দেন, বক্তব্য দেন তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবান্ধব অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন-অগ্রগতির কাজ তিনি কখন করেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এত ব্যস্ততা কেন তার? তিনি তো রাজনীতি করেন না। বিশ্বাস করছি যে, তিনি প্রচারকামীও নন।

এবার শোনা যাক ভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর আত্মপক্ষ সমর্থন। তার দাবি, রুনা লায়লা প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হিসেবে যা বলা হচ্ছে, তা নাকি স্রেফ রটনা। এই ধরনের কোনো কথা নাকি তিনি আদৌ বলেননি।

‘রেকর্ড আছে’ --একথা বলার পর তার জবাব, ‘অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এসব আমি দেখিও না, পড়িও না। বিদ্বেষপ্রবণ হয়ে যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তা-ই লিখে দিচ্ছে। টাকার বিনিময়েও কেউ কেউ এই ধরনের কাজ করে থাকতে পারে। ‘’

মিরসরাইয়ের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদের সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছেন একটি কারণে। ইমতিয়াজ ভিসির ছাত্র ছিলেন। তাই  তার বিশেষ অনুরোধে। মন্ত্রীরও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ভিসি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রীর সেখানে থাকবার কথা ছিল না।
এত আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া সম্পর্কে ভিসির একটি নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণেই তিনি যোগ দেন এসব অনুষ্ঠানে। অফিসের কাজ সেরেই। টেবিলে কোনো ফাইল জমা পড়ে থাকে না। দ্রুতই নিষ্পত্তি করেন। একটা বড় কনভোকেশন সুসম্পন্ন করেছেন। সুবর্ণজয়ন্তী করেছেন। যা মান আর গুণের দিক থেকে এশিয়ার সেরা। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর সীমানা দেওয়াল দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে।

ভিসি মহোদয়, সবই মানলাম। কিন্তু এরপরও আপনার পদের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কাজ করছেন কিনা সেটি নিয়ে সব মহলই কমবেশি সচেতন। আপনার আগে আরও অনেকেই এই পদে ছিলেন। তাদেরও অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে। কিন্তু ডিজিটাল যুগের প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীদের কিংবা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মনকে কিভাবে বুঝ দেবেন আর চোখকে কিভাবে ফাঁকি দেবেন যে আপনি যা যা করছেন, সবই যৌক্তিক?
 
লেখক
আবাসিক সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস।
ইমেইল: rafiqul_bahar@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।