ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জাগো বাহে, কোনঠে সবাই!!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১
জাগো বাহে, কোনঠে সবাই!!

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে সাফ সাফ একটা কথা: আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পন্ড করার যে পথে হাঁটা দিয়েছেন, সে পথে আর আগাবেন না। এতে করে আপনার বা দেশের কারোরই ভালো হবে না।

আর যদি নিয়ত করে থাকেন, বিচার পন্ড করার চলতি অপচেষ্টা বহাল রাখবেনই, তাও সাফ করে বলুন। ‘আমরাও বিচার চাই, তবে বিচার হতে নিরপেক্ষ’, জাতীয় ভন্ডামির কথা দেশের মানুষকে বলে বোকা সাজাবার চেষ্টা আনেক হয়েছে। এ নিয়ে আর লোক হাসানোর দরকার নেই। আর যদি পন্ডের নিয়তও করে ফেলে থাকেন, সেটিও সাফ করে বলে দেখুন যে, ‘হ্যাঁ, আমরা এই বিচার হতে দেব না’। সাহস থাকলে সাফ কথাটি বলুন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, শহীদ পরিবারের সদস্যরা আমাদেরটা আমরা ঠিক করে নেবো। ডু অর ডাই!

আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে আবার ৩৯ বছর পর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে স্বাধীনতার শত্রুদল জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ড করতে তারা এখন ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে! এরপর সোমবার (১৯-০৯-২০১১) বাংলাদেশ আবার দেখেছে তাদের জঙ্গি সন্ত্রাসী রূপ! ঢাকা-চট্টগ্রামে তারা আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলার স্পর্ধা দেখিয়ে বলেছে, পারলে মুক্তিযোদ্ধার বাচ্চারা আমাদের ঘাতক রাজাকার আব্বাদের বিচার কর! চট্টগ্রামে মিছিলে মোল্লা গুন্ডা গ্রুপটির সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় নামার ছবি প্রকাশ করেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এসব অস্পর্ধার হোতা খালেদা জিয়া। আর তাঁর মহাসচিব ঠাকুরগাঁও’র রাজাকার চোখা মিয়ার ব্যাটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে গত ইলেকশনের ফয়সালা উল্টে এ নিয়ে গত আড়াই বছরের লাজুক ভাবখানা ধুয়েমুছে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের নিয়ে আবার একমঞ্চে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি! সেই সাহসে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর ঘরে ঢুকে যাওয়া জামায়াত-শিবির নামধারী স্বাধীনতা বিরোধীদের পেইড লোকজন আবার তাণ্ডব চালিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামে! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যত মানুষ শহীদ হয়েছেন, যত মা-বোন এই সারমেয়দে’র হাতে ধর্ষিত হয়েছেন, তাদের সবার কসম লাগে, এই এজিদের আণ্ডা-বাচ্চাদের, তাদের দোসরদের রুখে দিন। এখনই সময়। এই বাংলাদেশ তাদের না। তারা যে দেশটির জন্য যুদ্ধ করেছে সে দেশটির নাম পাকিস্তান। বাংলাদেশ না। তাদের পক্ষ যারা নেবে গাইগুঁই না করে সবগুলোকে পাঠিয়ে দিন পাকিস্তানে। তাতে অন্তত শান্তি পাবে শহীদদের!

গত ইলেকশনের ফয়সালার কথা বলা হচ্ছিল। হ্যাঁ, এ ফয়সালাটি ছিল সোজাসুজি! অর্থাৎ আওয়ামী লীগ তাদের ও মহাজোটের ইলেকশন মেনিফেস্টোতে সোজা বাংলায় বলেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। আর বিএনপি তা বলেনি।
উল্টো আওয়ামী লীগ যাদের বিচারের কথা বলছে সেই দেশের চিহ্নিত সব যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহি˜ গংকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোটের ব্যানারে ইলেকশন করেছে বিএনপি! এর রেজাল্ট কী হয়েছে মনে নেই? ভোটের পর এ নিয়ে বিএনপির সদর-অন্দরে তোলপাড় আত্মসমালোচনা, অনেক দিন ধরে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সে কাহিনী আপনারা ভুলে যেতে পারেন, পাবলিক ভুলে নাই।

এরপর যখন ইলেকশনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে পার্লামেন্টের প্রথম এজেন্ডায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব, বিচারের জন্য যখন গঠন করা হলো ট্রাইবুন্যাল, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামানের মতো বেয়াদব রাজাকার নেতারা যখন এক ফুৎকারে ট্রাইব্যুনাল উড়িয়ে দেবার কথা বলল, তখন যেন অফিসিয়েলি তাদের পক্ষ নেয়াটা দায়িত্ব করলেন খালেদা জিয়া! কারণ স্বাধীনতার শত্রু এই ঘাতকদের গাড়িতে পতাকা দিয়ে তিনি আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে বিদ্রূপ-উপহাস করেছেন। এরপর শুরু হয় প্রহসনের সেই গান, ‘আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, কিন্তু সে বিচার হতে হবে নিরপেক্ষ!’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কী আপনার কাছে দেশের মানুষকে নতুন করে শিখতে বলেন খালেদা জিয়া? আপনার মহাসচিব না হয় চোখা মিয়া রাজাকারের সন্তান। তাঁর রাজাকার পিতার কবর বাংলাদেশে হওয়াতে তিনি হয়তো ভাবছেন কবরে অশান্তি হচ্ছে প্রয়াত পিতার। কিন্তু আপনার স্বামী যে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, এই জামায়াতে ইসলামী, মতিউর রহমান নিজামি, সালাহউদ্দিন কাদেররা সে যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন? না বিপক্ষে ছিলেন? বা এই নিজামি, সাকা’রা মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি জিয়াকে ধরতে পারতো তাহলে তাঁকে আদর না কতল করতো?

নিরপেক্ষ বিচার বলতে মুক্তিযুদ্ধের কোন ইতিহাস আপনি আমাদের শেখাতে চান তা সাফ সাফ বলুন। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে কী আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আজকের এ অবস্থায় আসতে পারতেন? বারবার করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও কই কোনদিনতো আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর প্রাণের দাবি তথা আমাদের স্বজনদের হত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ নেননি! পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেবার কথা বলেন! কই ক্ষমতায় গিয়েতো কোনদিন তাদেরও ফিরিয়ে এনে বিচারের কথা বললেন না। উল্টা বরাবর আলগা পিরিত, দহরম-মহরম দেখালেন পাকিস্তানিদের সঙ্গে!
 
শেখ হাসিনার বেয়াইকে ইঙ্গিত করে বিচারে নিরপেক্ষতা কথা বলেন? কই একবারওতো সাহস করে বলেন না যে আবার ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বেয়াই’র বিচার করবেন? এই একটি অঙ্গীকারের ব্যাপারে কেন আপনার এত গড়মসি তা একটু পরিষ্কার করে বলবেন কী?
 
আহ’র দোহাই লাগে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সঙ্গে, শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে মশকরা বাদ দিন। আপনার ছেলেদের মামুন সহ এত মানুষের সঙ্গে খায়খাতির হয়! কোন একজন  মুক্তিযোদ্ধা বা সেক্টর কমান্ডারের ছেলেমেয়ে কারও সঙ্গে তাদের, কোন একজন মুক্তিযোদ্ধা বা সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রীর সঙ্গে আপনার কেন কোনদিন কোন খায়খাতিরের খবর কেউ কোনদিন শুনলো না, জানলো না? কেন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি আপনার এত অবহেলা-অবজ্ঞা, সব ভালোবাসা শুধু স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত শিবিরের জন্য, আর যদি কোনদিন আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তা আগে দেশের মানুষকে সাফ করে বলতে হবে খালেদা জিয়া।

আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ড করতে বিদেশে লাখ লাখ ডলারে লবিস্ট নিয়োগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দেশে তাদের প্রধান লবিস্টের নাম খালেদা জিয়া! যার স্বামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের একজন। বিএনপি বিসমিল্লাহ বলার আগে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে। তা জিয়া কোন দেশের স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন? বাংলাদেশের না পাকিস্তানের? বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হয়ে থাকলে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় মেরে ফেলল আমাদের স্বজনদের, তাদের জন্য আপনি খালেদা জিয়ার এত দিওয়ানা আচরণের মাজেজা দেশের মানুষকে স্পষ্ট করে বলতে হবে। এসব নিয়ে আর কোন ভনিতা, তালতিবালতি চলবে না।
 
এই সরকারের আড়াই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আড়াই বছরে অনেক কিছুতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও প্রত্যাশার দ্রুতগতি নেই। সরকারের এসব ব্যর্থতা, কয়েকজন ব্যর্থ মন্ত্রী নিয়ে দেশের মানুষজন কথা বলছে। কিন্তু এসব নিয়ে বিএনপি কোন আন্দোলন বা বিকল্প চিন্তা-স্রোতধারাও গড়ে তুলতে পারেনি। খালেদা জিয়া সহ বিএনপির এমপিরা নানা বাহানায় পার্লামেন্টে যাননি আড়াই বছর। কিন্তু বেহায়া-বেশরমের মতো কখনো পার্লামেন্টের বেতন-ভাতা নিয়েছেন; এক্ষেত্রে তো কোনো অরুচি দেখাননি!

 আড়াই বছরে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা খালেদা জিয়ার বাড়ি, দুই ছেলের দুর্নীতির বিচার নিয়ে বিএনপির যা পেরেশানি, তা জনস্বার্থে কখনো কোথাও দেখা যায়নি। সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে মানুষকে সঙ্গে পেতে চাইলেতো নিজেদের দোষগুলা, পোলাদের ওপেন সিক্রেট দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার, এসবের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে আগে মাপ চাইতে হবে! খালেদা জিয়া তা করেননি। বা তা তাঁর পক্ষে সম্ভবও নয়। এখন মিশন নিয়েছেন যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ফাটিয়ে ফেলবেন? প- করে দেবেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার?

এ ধরনের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নিয়তে আওয়ামী লীগের জোর যে উল্টো বাড়ে তা কী গত ইলেকশনের ভরাডুবি থেকেও শিক্ষা হয়নি? এখন দেশের মানুষের স্পর্শকাতর এ ইস্যুর উল্টা যে হাঁটা দিয়েছেন তাতে যে উল্টা আওয়ামী লীগের শক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছেন, এ সহজ-সরল অংকটিও কী আপনাদের মাথায় আসে না?
 
সবদেশের-জাতিরইতো নিজেদের একটা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা থাকে। বাংলাদেশের সে  ঘটনার নাম মুক্তিযুদ্ধ, আপনি খালেদা জিয়া বরাতে থাকলে আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও যেতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ তা কী পালটে ফেলতে পারবেন? না সম্ভব? তাহলে দেশের বিরুদ্ধে কেন এই উল্টা গেইম ? বোধ যদি না ফেরে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, শহীদ পরিবারের সদস্য, ৩৯ বছর ধরে যে বিচারের অপেক্ষা করে আসছি, সে বিচার পণ্ড করার আপনার গেইম সফল হতে দেব, তা কীভাবে আপনি এত সহজ পারলেন ম্যাডাম?

বাংলাদেশের সাহসী নতুন প্রজ্ন্ম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিটি মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদজায়া, শহীদের সন্তান, দৌহিত্র-প্রপৌত্ররা, বাংলাদেশের পুলিশ-র‌্যাব, সেনা, নৌ-বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড সহ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিটি সদস্য, বাংলার কবি, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক-চিকিৎসক-প্রকৌশলী সহ সব শ্রেণীপেশার মানুষজন, বাংলার কৃষক, জেলে মুটে-মজুর, খেয়াঘাটের মাঝি, গাঁয়ের গায়েন, পল্লীকবি সহ সবাইকে আবার আহবান, মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ডের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তা রুখে দিন। রুখে দিতে হবে। ‘ডু অর ডাই। জাগো বাহে..... কোনঠে সবাই!!!’
 
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় ১৭০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।