হয়তো স্থান পাল্টায়। কখনও দিল্লি, কখনও ঢাকা।
নারীর প্রতি সহিংসতায় কালিমালিপ্ত এমনই একটি বিপদসঙ্কুল কাল অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের পৃথিবীতে। মানুষও পাল্টে যায় পরিস্থিতির কারণে। শিক্ষক, গৃহস্বামী, কর্তাব্যক্তির দিকে উত্তোলিত হয় অভিযোগের অঙুলি। কেউ কেউ বিচারের আওতায় আসে, অনেকেই আসে না!
কিন্তু পরিস্থিতি মোটেও বদলায় না; একই থেকে যায়৷ রাজধানী থেকে শহর, নগর, গ্রামে নির্যাতনের রিপোর্ট লেখা অভ্যেসের পর্যায় পড়ে গিয়েছে সাংবাদিকদের৷
না। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, এই বিপর্যয় কিছু বিকৃত মানুষের সৃষ্টি৷ শিকার অসংখ্য যুবতী৷ বনানী কাণ্ডে বিকৃতকাম অপরাধীদের নিজস্ব পাপ, যা কালো করে দিয়েছে শুদ্ধ সমাজের শুভ্র চেহারা।
কী অপরাধ ছিলো তাদের? ‘অপরাধ’ গুরুতর৷ বিকৃত আনন্দে গা ভাসিয়েছিল তারা৷ ষড়যন্ত্র ও প্রলোভনের ফাঁদ পেতে ষোল কলা পূর্ণ করেছিল বলদর্পী বিকৃত উচ্ছ্বাসে।
এমন ঘটনা একটি নয়। অনেক। টিএসসিতে বৈশাখেও একদা নারীরা সম্মিলিত লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিল। সুযোগ পেলেই হামলা ও নির্যাতনে পিছ পা হচ্ছে না লুকানো অপরাধী ব্যক্তি বা চক্র।
বেঙ্গালুরুর ঘটনাটিও তেমনই। সবাই মেতে ছিলো বর্ষবরণে৷ পুরনো বছরের রাগ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দেনা-পাওনা সব ভুলে ডানা মেলতে চেয়েছিল নতুন বছরের মুক্ত আকাশে৷ তাও আবার এমন একটা শহরে৷ যা ভারতের গর্বের ‘আইটি হাব’ বলে পরিচিত৷
বেঙ্গালুরু৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরাও যেখানে আসেন পেশাগত সুযোগের আশায়৷ কাজ শেষে রাত-বিরেতে বাড়ি ফিরতেও যেখানে কোনোদিন দ্বিধাবোধ হয়নি এতোদিন৷
যেই স্থানের সাম্প্রতিক স্বাক্ষরতার হার ৮৮.৭১ শতাংশ৷ সেই ভরসাতেই বর্ষবরণের জন্য এমজি রোড ও ব্রিগেড রোডে বেশি রাত পর্যন্তই থেকে গিয়েছিল মেয়েরা৷
কিন্তু ‘নিরাপদ’ শহরের রাস্তা তখন বিষাক্ত৷ স্বার্থপর, লোলুপ দৃষ্টিগুলো এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো৷ প্রকাশ্য রাস্তায় শুরু হলো জোর-জবরদস্তি৷ পুলিশের চোখের সামনেই জান্তব লালসার শিকার হচ্ছিলেন মেয়েরা৷
এই নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত সবর্ত্রই দেখা যাচ্ছে। এবং সেটা ক্রমবর্ধমান গতিতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে।
দক্ষিণ এশিয়ার নারী নিগ্রহের অবসান ঘটিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ। এবং মানবিক মানুষের প্রধান দাবি।
লেখক: ড. মাহফুজ পারভেজ, কবি, লেখক ও অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ই-মেইল:
mahfuzparvez@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
এসএনএস