প্রিয় পাঠক, দুনিয়া এখন নোবেল বিজয়ীদের আলোচনায় মুখর। বিজয়ীদের স্বদেশীরা গর্বে বুকের বোতাম টাস টাস করে ছিড়ে ফেলছেন।
তাদের ওয়েবসাইটে দেখলাম; বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কিংবা সাবেক নোবেল বিজয়ীরা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম মনোনয়নের জন্য পাঠান। সেই নামগুলো দিয়ে প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়। ওই নামগুলো থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে চুড়ান্ত নির্বাচনের জন্য বিশেষ কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু ঐ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারা? সাহিত্যের কথাই ধরা যাক, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী আর ব্যক্তি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপকরা।
আমার জানতে ইচ্ছে করে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো সাহিত্যিকের নাম কেউ প্রস্তাব করেছেন কিনা? ভারতের লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর নাম একবার সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছিল। সেটাও কম মর্যাদাপূর্ণ নয়। প্রিয় পাঠক, সত্যজিৎ রায়ের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। জীবনের শেষ সময়ে আমেরিকা প্রবাসী কয়েকজন বাঙালির প্রচেষ্টায় তার হাতে অস্কার ধরা দিয়েছিল। তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন, সম্মানিত হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র তথা পুরো ভারতবাসী।
এই মুহুর্তে এপার-ওপার মিলিয়ে বাংলা সাহিত্যের সবচাইতে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্য অনূদিত হচ্ছে। তার লেখার সাহিত্যমান সম্পর্কে কারো কারো দ্বিমত থাকতেই পারে, এরকম দ্বিমত রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারেও ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা তাকে বাক-বাকুম কবি বলতেন। সাহিত্যের অধ্যাপকরা কিংবা বাংলা একাডেমীর কর্তা ব্যক্তিরা কি একটি বার ভেবে দেখবেন? অন্ততঃ মনোনয়ন পাঠানো যায় কিনা? নোবেল পেয়েছেন এমন জীবিত ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা, ইমেইল সংগ্রহ করে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য সম্পর্কে জানানো যায় কিনা?
অনেকেই অভিযোগ তোলেন, হুমায়ূন আহমেদের পাঠকরা নাকি বয়সে তরুণ। সেটাও খারাপ না। প্রবীণরা যদি কালের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন; তরুন প্রজন্ম ব্যর্থ হবে না। যদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের তরুণরা আরব্য রজনীর অচলায়তন ভাঙ্গতে পারে। তাহলে বাংলাদেশের তরুণরাও পারবে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় বিশ লাখ এবং প্রতিদিনই বাড়ছে। বয়সে তারা অধিকাংশই তরুণ। বিপুল সম্ভাবনাময় একটি প্রজন্ম। তাই আহবান করছি; একটি জাতীয় গৌরবের সম্ভাবনা, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।
যদি বাংলাদেশের লাখো তরুণ ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আজকাল ফেইসবুক এবং ট্যুইটারের জনপ্রিয় ইস্যু সারা বিশ্বের সংবাদ শিরোনাম হয়। আমার বিশ্বাস, তরুণরা যদি ”নোবেল ফর হুমায়ূন আহমেদ” নামে একটি ফেইসবুক কিংবা ট্যুইটার এ্যাকাউন্ট খুলে আন্দোলন শুরু করে তাহলে লাখো মানুষের সমর্থন পেতে দেরি হবে না। আসুন নিজ দেশের মানুষকে সম্মানিত করি, নিজেরাও সম্মানিত হই।
প্রিয় পাঠক, বৃটিশ নাট্যকার, কবি হ্যারল্ড পিন্টার ২০০১ সালে টিউমার থেকে ক্যান্সারাক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার পান। কিংবদন্তী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ গত চল্লিশ বছর ধরে লিখছেন। এই দরদী লেখকের কাছে আমরা ঋণী, অনাদায়ী দেনাদার। সম্প্রতি টিউমার এবং ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন আছেন। কায়মনে তার আরোগ্য প্রার্থনা করছি।
শাখাওয়াৎ নয়ন। অষ্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত।
nayonshakhawat@yahoo.com
বাংলাদেশ সময় ১০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১