শেরশাহর মারের চোটে মোঘল সম্রাট হুমায়ুন কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দিলেন। সাঁতার না জেনে পানি খেয়ে যখন ডুবতে বসেছিলেন, তখন ভিসতি নিজাম নামে এক ফকির তাঁকে বাঁচায়।
সত্যিই একদিন দুপুরে সম্রাট ভিসতি নিজাম নামের সেই ফকিরকে ডেকে এনে বসিয়ে দিয়েছিলেন তার সিংহাসনে। আধবেলার সম্রাট ফকির নিজাম। নতুন সম্রাট পুরনো ময়লা কাপড় গায়ে জড়িয়ে সিংহাসনে বসে আছে। নতুন জুতো জোড়া পায়ে লাগান নি। বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। সবাই হুমায়ুনের পাগলামী দেখে টিপ্পনী কাটছিল। তার বোন গুলবদন তাকে বোঝাচ্ছিল, এটা স্রেফ পাগলামী। অযৌক্তিক। হুমায়ুন বলেছিলেন, `যুক্তিই সবকিছু নয়। যুক্তির উপর অবস্থান করে হৃদয়। ` সম্রাট হুমায়ুন সময়মতো কঠোরও হতে পারতেন। আমরা তাকে দেখেছি, বার বার বিদ্রোহ ও অপরাধের কারণে তার প্রিয় ভাই কামরান মির্জার চোখ উৎপাটন করতে। এর আগে বহুবার ক্ষমা পেয়েও কামরান নিজেকে সংশোধন করেননি। ইতিহাসে রাজা বাদশাদের এসব স্বেচ্ছাচারিতা, জনগণের ভাগ্য নিয়ে হঠকারিতা, পাগলামীর সাথে আমরা পরিচিত।
এই ঘটনার প্রায় চারশ বছর পরে এমন একটি কাহিনী আবার শুনলাম চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় সাংসদ গোলাম মাওলা রনির মুখে:
রনি বলছিলেন: ``আপনারা জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা সরলতা কাজ করে। অনেক সময় তিনি গান শুরু করেন, আলাপ-আলোচনা করেন, একটা পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করেন। ওয়েস্ট লেকে গিয়ে হঠাৎ তার কী যে মনে হলো, তিনি বলেন যে, ‘একটা বাঁশি ম্যানেজ করো তো। যেভাবেই হোক একটা বাঁশি ম্যানেজ করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরী ছিলেন, ওবায়দুল কাদের ছিলেন এবং সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমি বাঁশিতে একটা ফুঁ দেব। তোমরা তিনজন দৌড় দেবে। দৌড়ে যে ফার্স্ট হবে, তাকে আমি মন্ত্রী বানাব। ` এখন যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাই ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরী উনারাও ...দৌড় দিলেন। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেন টুক ইট ভেরি সিরিয়াসলি। সে জোরে দৌড় দিল, দৌড় দিয়ে সত্যিই সে ফার্স্ট হলো। ফিরে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, ‘আপনি আমাকে কমিটমেন্ট করেছেন, আমাকে মন্ত্রী বানাতে হবে এবং যোগাযোগমন্ত্রী। ’ প্রধানমন্ত্রী যতই বারবার বলেন না কেন, আমি তোমার সঙ্গে দুষ্টামি করেছি। .... তিনি বললেন, ‘না আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন। ``
রনি বলছিলেন: ``এমপি হওয়ার পর তিনি আবারো প্রধানমন্ত্রীকে সেই কমিটমেন্ট স্মরণ করিয়ে দিলেন। এই হলো তাঁর যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার সত্যিকার ইতিহাস। এর বাইরে যা কিছুই বলেন, ‘ইটস নট দ্য রিয়েলিটি’ (কিছুই সত্য না)। আমরা তো কাছাকাছি থাকি, অনেক জিনিসই জানি। ``
রনির মতে এই হচ্ছে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রীর মন্ত্রী হওয়ার শানে নুযুল। গলাচিপার এই সাংসদ গলাটিপা খাওয়ার মতো গল্প ফাঁস করে দিয়েছেন বৈ কি। তিনি টিপা খান বা না খান এই মন্ত্রীকে নিয়ে যে আমরা `মাইনকার চিপা`য় আছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় সড়ক ও যোগাযোগ খাত বেহাল। পদ্মাসেতু-দুর্নীতে তার পরিবার ও তার প্রতিষ্ঠান (সাঁকো) জড়িত বলে প্রমাণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বন্ধ হয়েছে এই সরকারের অন্যতম প্রধান প্রকল্প। তার অকারণ দন্ত প্রদর্শন, অতিকথন, অদক্ষতায় আমরা অতিষ্ঠ। তার পদত্যাগ দাবিতে মিটিং হয়েছে, মিছিল হয়েছে, শহীদমিনারে ঈদ হয়েছে। কিন্তু তিনি আছেন বহাল তবিয়তে ।
ভিসতি নিজাম আধবেলা দিল্লীর সিংহাসনে বসলেও যোগাযোগমন্ত্রী আমাদের ঘাড়ে চেপেছেন পাঁচ বছরের জন্য। তাকে সরানোর কোনও লক্ষণ দেখছি না। তাকে নিয়ে জনগণের `ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি` অবস্থা । বাদশা হুমায়ুনের মতো প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ের সরলতা আমরা দেখেছি। আশা করছি, হুমায়ুনের মতো সরকার ও সাম্রাজ্য বাঁচাতে শিগগিরই তার নেতৃত্বের কঠোরতাও দেখব।
- মনোয়ার রুবেল।
একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ও তরুণ ব্লগার।
monowarrubel@yahoo.com