ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যে গল্পের শেষ নেই!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১
যে গল্পের শেষ নেই!

শাসকদলের এমপি গোলাম মাওলা রনির বলা একটি গল্পকে কেন্দ্র করে দলটির সদর অন্দর এখন বেশ গরম! বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের বৈঠকে বিষয়টি উঠেছিল। তোফায়েল আহমদ বিষয়টি তোলার পর তা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রনিকে ডেকে-দাঁড় করিয়ে গালমন্দ করেছেন বলে খবর এসেছে মিডিয়ায়।

রনি যে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, সাম্প্রতিক আলোচিত ডাণ্ডাবেড়ি তত্ত্বের প্রস্তাবক বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র সঙ্গে ব্যবসা করেন সেটিও বেরিয়ে এসেছে দেশের হর্সেস মাউথের জবানিতে। আরেকটি সত্য জানা গেল, শেখ হেলালের মেয়ের জামাই হওয়াতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঞ্চে বসে খালা’র (শেখ হাসিনার) দলের মন্ত্রীদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর ফতোয়া দিলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে কিন্তু পার্থ’র কোনও অসুবিধা হচ্ছে না! এটি কী  আত্মীয়করণের সুফল, না দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অগ্রগতি? সুবিধাভোগী ব্যরিস্টার পার্থই এর সঠিক জবাব দিতে পারবেন।
 
চ্যানেল আই’র জনপ্রিয় টকশো ‘তৃতীয়মাত্রা’য় আবুল মন্ত্রীর গল্পটি বলেছিলেন রনি। তৃতীয়মাত্রার উপস্থাপক জিল্লুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময় বাসদ (মাহবুব) এর ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত এ’দলগুলোর সঙ্গে জড়িত না থাকায় এ’দলগুলোর আনন্দ-বেদনা তাকে স্পর্শ করে না। তৃতীয়মাত্রার জনপ্রিয়তা-সাফল্যের অন্যতম সূত্র বুঝি সেখানেই! সেই তৃতীয়মাত্রায় বলা গল্পে রনি বলেছিলেন, কী করে চীনে গিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা বাঁশি বাজালেন, সাবের হোসেনদের পেছনে ফেলে দৌড়ে ফার্স্ট হয়ে কী করে সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রী হয়ে গেলেন!
 
বৃহস্পতিবারের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকের জিজ্ঞাসাবাদে রনি বলেছেন তিনি এক সাংবাদিকের কাছে গল্পটি শুনেছিলেন। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গল্পের পুরোটা ঠিক নয়। দৌড় একটা যে হয়নি তাও তিনি দাবি করেননি। তবে বলেছেন রনি দৌড়ের ভেন্যুটি ঠিক বলেননি। ঘটনাটি একটি স্পোর্টস সেন্টারে ঘটেছিল। সে স্পোর্টস সেন্টার তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। তবে বাঁশির ঘটনাটিও ঠিক নয়। তিনি বাঁশি বাজাননি। আরেকটি কথার আভাস আছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে, তাহলো দৌড়ে ফার্স্ট হওয়ার কারণেই আবুল মন্ত্রী হয়ে গেছেন তথ্যটি ঠিক নয়নি। সে দৌড়ে অংশ নেওয়া সত্ত্বেও সাবের হোসেন চৌধুরীকে তিনি মন্ত্রী বানাননি। তাহলে কী সেই দৌড়ে ফার্স্ট হয়েছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী? অমিমাংসিত থেকে গেল প্রশ্নের উত্তর।

খুব স্বাভাবিক আবুল মন্ত্রী যেহেতু এই মূহুর্তের সুপার-ডুপার আলোচিত-সমালোচিত, সে কারণে তাকে নিয়ে বলা রনির গল্পটি দেশের আর সব মিডিয়া লুফে নিয়েছে। ফেসবুক সহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটগুলোতে এরমাঝে ভিডিও লিংকটির শেয়ার লাখ ছাড়িয়েছে! বাংলা ব্লগগুলোতেই শুরু হয়েছে আবুল সাহিত্যের নতুন এপিসোড! হায় আবুল, আয় বাবুল, বাহ আবুল! কারণ কোনকিছুতেই তার ক্ষয় নেই! আসুক যত বিপদ, আসুক যত ঝড়, বলেই চলেছে আবুল: ‌‌``উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই!``

যার চরিত্রের কথা এর আগে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারিয়ার্টির পাঠানো নথির সূত্রে উইকিলিকসে এসেছে, তার নাম ধরে কীনা বিশ্বব্যাংক আটকে দিয়েছে দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু! এরপরও আবুল অটল অক্ষয়! অব্যয়! চারদিকে শুধু একটাই ফিসফাস, কারণ কী? কারণ কী? আবুলের কী এমন খুঁটির জোর-কারিশমা যে, আগেরবার মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হয়েও এবারে উল্টো ফুল মিনিস্টারের পুরস্কা পেয়ে গেছেন! তাকে নিয়ে একের পর এক এত সমস্যা, খোদ অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন গিয়েও চেষ্টা করেছেন কোনোভাবে বিশ্বব্যাংককে ম্যানেজ করা যায় কীনা। এত সবকিছুর পরেও তার কোন ক্ষয় নেই! হারাবার ভয় নেই! ভয়টা তাহলে কার?
 
বিশ্বব্যাংক ক্ষমতাসীন কেবিনেটের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। সরকারকে চিঠি দিয়ে আটকে দিয়েছে পদ্মাসেতুর ঋণ। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি মিডিয়া কনফারেন্স করে বলছেন, না এতে দেশের ভাবমূর্তির কোন ক্ষতি হয়নি! অবাক ব্যাখ্যা! এমন ব্যাখ্যা এর আগে কেউ কী শুনেছে কভু? কী কী পরিস্থিতি হলে একজন মানুষ, একটি সমাজ, একটি দেশের জন্য তা শরমের-লজ্জার হয়? মাথা হেট হয়? বিব্রত হতে হয়? দিপু মনির ভাবমূর্তি জ্ঞানটি কী মন্ত্রী আবুলের চেয়েও লৌহবর্ম মার্কা টনটনে? যার কিছুতেই শরম-টরম করে না!

তৃতীয়মাত্রা’ টকশো’য় আবুলকে নিয়ে এমপি রনি’র গল্পটির পিছনের উদ্দেশ্যটি বোঝা গিয়েছিল। চারদিকের ফিসফাস বন্ধ করতে রনি হয়ত বলতে চেয়েছিলেন, যা সন্দেহ করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। এর পিছনে কোনও লেনদেনের সম্পর্ক নেই। স্রেফ শেখ হাসিনা চীন  সফরে গিয়ে মজা করে একটি কথা দিয়ে ফেলেছিলেন। সে কথাই তিনি রেখেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে খোদ শেখ হাসিনা বলতে চেয়েছেন, রনির গল্পটি ঠিক না। এ কারণে তিনি আবুল হোসেনকে মন্ত্রী করেননি। সে দৌড়েতো সাবের হোসেনও ছিলেন। কই তাকেতো মন্ত্রী করা হয়নি।

আবার আরেকটি গোলমাল! তবে কী চীনের স্পোর্টস সেন্টারের সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় সৈয়দ আবুল হোসেন ফার্স্ট হননি? ফার্স্ট হয়েছিলেন মন্ত্রিত্ব বঞ্চিত সাবের হোসেন চৌধুরী? রনির বলা আবুলের মন্ত্রী হওয়ার গল্প নিয়ে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে যা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ দাঁড়ায় গল্পটির সেখানে শেষ হয়নি। এ গল্পের যেন এখনই শেষ নেই! আবুলের জীবনের গল্পের।

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।