ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

হারে লজ্জা কেন? হার জিৎ চিরদিন থাকবে....

মাসুম বিল্লাহ, বাংলানিউজ পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১১
হারে লজ্জা কেন? হার জিৎ চিরদিন থাকবে....

বিজয় দিবস কী শুধু ১৬ ডিসেম্বর এই একটি নির্দিষ্ট তারিখে বা পুরো ডিসেম্বর জুড়েই কী আমাদের বিজয়ের ক্ষণ? কেন আমরা তা অনন্তকাল ধরে ভাবতে পারবো না? বিজয়ের মাসে খেলায় হারলে লজ্জা পাবো, অন্য মাসে হারলে লজ্জা পাবো না, তাই কী?
লজ্জা তো পাওয়া উচিত যখন বাংলার কিছু কুলাঙ্গার পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে লাফালাফি করে। তাই ক্রিকেট টিম আত্মহত্যা করছে বা খারাপ খেলছে, যাই করুক না কেন, আমাদের উচিৎ তাদের সাপোর্ট করা।

কিন্তু কিছু বাংলাদেশি নব্য রাজাকার কি করছে তখন? যখনই বাংলাদেশের উইকেট পড়ছে তখন মুখে পাকিস্তানি পতাকা আঁকা কুলাঙ্গাররা পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে নাচানাচি করছে। হায় খোদা, কোন দেশে আছি আমরা! আসলে পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মারা এদেশেই রয়ে গেছে, সেগুলো আজ মাঠে নাচানাচি করছে।

হার-জিত চিরদিন থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে- কিশোর বয়সে বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় গান আমার কচি মনে বেশ নাড়া দিয়ে যেত। এখন যেহেতু রেডিও তেমন একটা শোনা হয় না তাই গানটি শুনি না। আমি বলে রাখি, আমি হতাশাবাদী নই। তবুও মাঝে মাঝে রাগে ক্ষোভে নিজের মাথার অবশিষ্ট চুলগুলো টেনে তোলার চেষ্টার বাকি থাকে না। কিন্তু পরক্ষণে আশায় বুক বাঁধি, সামনের বার নিশ্চয় পারবে। আশা বা স্বপ্ন আছে বলেই মানুষ বেঁচে থাকতে পারছে।

একটা প্রমাণ দিই, প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারার পর, প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচেও কিন্তু লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে মাঠে নেচে-গেয়ে বাংলাদেশকে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু খেলার পুরো সময় শেষ হওয়ার আগেই দর্শকের সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছে ‌’বাংলার দামাল ছেলেরা’। তবুও দেখেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিতীয় ম্যাচে দর্শক আশায় বুক বেঁধে খেলা দেখেছে মাঠে গিয়ে, টিভির পর্দা থেকে চোখ ফেরায়নি। মনে মনে ভেবেছে, আজ নিশ্চয় ওরা পারবে। কিন্তু হায় আজও যে হল না! তখন খেলা শেষ হওয়ার সামান্য সময় আগে গ্যালারি থেকে এক দর্শক প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরেছে, আশা চিটাগাং আমাদের পয়মন্ত মাঠ, ওখানে নিশ্চয় পারবে। তারপর ৩য় ওয়ানডে ম্যাচেও জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও আমরা হেরে বসলাম।

পাকিস্তানের আফ্রিদি ও উমর আকমল যখন ব্যাট করছে তখন আমরা ভেবেছিলাম ওরা বুঝি দুইশত রান পার করে যাবে। দেখেন তা কিন্তু হয়নি, টপাটপ ওদের উইকেটগুলো পড়ে গেল। আর তাতে আমরা লাফিয়ে উঠলাম। মাত্র ১৭৮ রান তো টুকটুক করে নিয়ে নিতে পারবো। শুধু একটু ধরে ধরে খেলতে হবে, তাড়াহুড়া করা যাবে না। শুরুতে রিয়াদ ও নাফিস কিন্তু বেগ পেয়েছে রান করতে। এপর একটা পর্যায়ে রিয়াদ ও নাফিস কিন্তু বেশ সাবলিল হয়ে ব্যাট করছিল, মাঝে চড়াও হয়ে রানটাও বাড়িয়ে নিল। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেটগুলো পড়তে লাগল। হ্যাঁ, ওদের আর একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের ছেলেরা তো বিশ্ব কয়েকজন ভাল মানের বোলারকে মোকাবেলা করছিলো। যদি ভালো বোলারই না হত তবে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকত না। আবার উইকেটও বোলারদের পক্ষে ছিল।

ভুলে গেলে কী চলে, এই টাইগাররাই আমাদের মাঝে মাঝে এক সূতোয় বেঁধে ফেলে। এদের বদৌলতেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নামটা আরো একটু বেশি পরিচিতি পেয়েছে। খেয়াল করে দেখেন, কয়েক বছর আগেও কিন্তু আমরা কেউ অন্য দলের বিপক্ষে ম্যাচে জেতার কথা ভাবতাম না। বলতাম একটু ভাল খেলতে পারলেই হবে। এরপর বলতাম, সম্মানজনক ভাবে হারলেই চলবে। এখন আমরা জেতার কথা ভাবতে পারছি। এটা কী উন্নতির লক্ষণ নয়? হয়তো আরো চার/পাঁচ বছর আমাদের বিপক্ষে খেলতেই প্রতিপক্ষ ভয় পাবে। এবং আমরা দর্শকরাও অন্য দল নিয়ে হাসি ঠাট্টা করব এবং ধরে নেবো আমাদের কে হারায়? আজ তো আমরাই জিতব। বলে রাখি যেদিন খুব একটা দূরে নয়।

ধারাভাষ্যকার একটা অপ্রিয় সত্য কথা বলেছেন, ‘আমরা মুখেই পেশাদারিতের কথা বলি কিন্তু ভিতরে তার প্রয়োগ নেই। হলে আমাদের ক্রিকেট আরো এগিয়ে যেত। আসুন খেলোয়ারদের পাশে থেকে সাহস দেই। এখনো ওদের মুণ্ডুপাত করার সময় আসেনি।   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।