ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ট্রেনে ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
ট্রেনে ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতা

আহ্ কী সুন্দর বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা? দিনের বেলা ট্রেনে ফ্যান চলে না, টয়লেটে পানি নেই। টিকিট কাউন্টারে টিকিট নেই অথচ কালোবাজারিদের কাছে টিকিটের অভাব নেই। আবার টিকিট থাকলেও ট্রেনে যুদ্ধ করে উঠে সিটে বসতে হয়। সিটে বসেও শান্তি নেই। কারণ স্ট্যান্ডিং টিকিটধারী, ভিক্ষুক ও হকারদের দৌরাত্ম্যে ট্রেনের ভেতরেও অতিষ্ঠ দূরযাত্রা। 

এই সেদিন ২৯ আগস্ট ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে আখাউড়া যাত্রা করলাম। কিন্তু শুরুতেই আধঘণ্টা লেট ট্রেনের।

ট্রেনে সুলভ শ্রেণীর বগিতে যাত্রা করি ঠিকই, কিন্তু এই গরমে শত শত স্ট্যান্ডিং ও টিকিটবিহীন যাত্রীর ঠাসাঠাসিতে আমরা অস্থির। তারপর ভিক্ষুক, হকার ও উপাসনালয়ের নামে চাঁদা চাওয়া লোকজনের দৌরাত্ম্যে যেন দম ফেলাই দায়। এর আগে কমলাপুরে ফিরতি বা রিটার্ন টিকিট চাইলেও কোনো টিকিট মিললো না। যা  হোক, আখাউড়া নেমে রেলওয়ে মাস্টার সাহেবের কাছে ৩১ আগস্টের জন্য রির্টান টিকিট অগ্রিম চাইলে তিনিও খোঁজ নিয়ে বলেন টিকিট নেই।  

৩১ আগস্ট আগরতলা থেকে আখাউড়া রেলস্টেশনে মাত্র আধঘণ্টা যাত্রায় চলে আসি সকাল ১১টায়। আবারও টিকিটের খোঁজ করি কাউন্টারে, শুনতে হয় টিকিট নেই। যে রিকশায় বর্ডার থেকে আখাউড়ায় আসি টিকিটের জন্য, সেই রিকশাচালকের শরণাপন্ন হলে তিনি মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে টিকিট ব্ল্যাকারকে নিয়ে হাজির। কোনো টিকিট নেই, তবে বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটের চট্টলা এক্সপ্রেসে আখাউড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার প্রতিটিকিট ৮৫ টাকার জায়গায় ২৫০ টাকায় কিনতে বাধ্য হই। এখন শুরু হলো নতুন জটিলতা। এই ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে এসে রসূলপুর নামক স্থানে পৌঁছালে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। আখাউড়া থেকে ইঞ্জিন পাঠালে সে ট্রেন ১২টা ৪৮ মিনিটের জায়গায় বিকেল ৪টায় আসে। স্টেশনে বসার কোনো জায়গা নেই। ভিআইপি ওয়েটিং রুম বন্ধ। এই গরমে ট্রেনের যাত্রাপথে আমাদের মতো সব যাত্রীকে খুবই কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।  

আখাউড়া স্টেশন থেকে শেষ পর্যন্ত এত ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে একপ্রকার যুদ্ধ করে উঠেছি ঠিকই, এখন দেখি আমাদের সুলভ শ্রেণীর ‘ছ’ কোচ কেন, ট্রেনের কোনো কোচেই ফ্যান চলে না। এমনকি রাত গড়াতেই দেখা যায়, কোনো বাতির ব্যবস্থাও নেই। টয়লেটে গন্ধ, নেই কোনো পানির ব্যবস্থা। ডিজিটাল যুগে ট্রেনের ভাড়া ডবল করার পরও যাত্রীসেবা বলতে ট্রেনে ন্যূনতম কিছু নেই। ট্রেনের কোচে এমনিতে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে অতিষ্ঠ, তারপর ঢাকা আসতে ট্রেনে কোনো লাইট-ফ্যান না থাকাটা ছিল আরও বিরক্তিকর ও কষ্টসাধ্য।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরে বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো অনেক পেছনে পড়ে আছে। ট্রেন স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের জন্য নির্মিত টয়লেটের অবস্থাও করুণ ও বেহাল। টিকিট কাউন্টার ও স্টেশনগুলোতে সেবাতো দূরের কথা, দুর্ব্যবহারই যেন যাত্রীদের প্রাপ্য। কমলাপুর ও আখাউড়া স্টেশন মাস্টার আমাকে ৩১ আগস্টের আখাউড়া-ঢাকার কোনো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দিতে পারেননি। অথচ টিকিট ব্ল্যাকার আমাকে চট্টলা ট্রেনে ‘ছ’ কোচ-এর ৫৪, ৫৫ ও ৫৬ সুলভ শ্রেণীর টিকিট দিয়ে দেয়। এসব কীসের আলামত? 

পৃথিবীর সব দেশে, এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও রেলওয়ে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাগরিকদের কাছে সুখ্যাতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশে রেলওয়ে লাভাজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়েই কেবল এক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম’ থেকে গেলো। যেন দেখার কেউ নেই।

ট্রেনে করে আখাউড়া যাওয়া-আসা কেন কষ্টকর, কেন যাত্রী-দুর্ভোগ হয়, কেন টিকিট কাউন্টারে মেলে না বরং কালোবাজারে মেলে এবং কেন ট্রেনে ফ্যান বা বাতি থাকে না, এসব বিষয় তদন্ত করা দরকার। সংশ্লিষ্টদের বলবো, ট্রেনের ইঞ্জিন বাড়ান ও বগি বাড়ান, যেন যাত্রীরা স্বাছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন। আশা করি আগামীতে রেলযাত্রা সুন্দর করার ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

লেখক
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
গণমাধ্যমকমী
ইমেইল: unescoclubbd@yahoo.com

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।