ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ভজঘট, ওয়ান ইলেভেন স্টাইল!

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২
ভজঘট, ওয়ান ইলেভেন স্টাইল!

রাজনীতির দলীয় বৃত্তের ‘অন্ধ’ সীমানা পেরুলে অনেক অসংগতি, স্বপ্নভংগ ‘স্বপ্ন’, সাফল্য ও ব্যর্থতা নজরে আসে। সাদাকে অনায়াসে সাদা বলা সম্ভব হয়।

কালোকে কালো। অতি সাধারণ আমাদের চাহিদার তালিকাটা খুব ‘ক্ষীণ স্বাস্হ্যের’। আমরা কেবল খুঁজি মাথার ওপর এক চিলতে ছাদ, সব্জি-তরকারির সহনীয় মূল্য, অফিস যাত্রায় বাসের ভাঙাচোরা একটি সিট, পছন্দের স্কুলে সন্তানের ভর্তির আশ্বাস, নিরাপদ সড়ক, ছিনতাইমুক্ত মহল্লা, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির আবশ্যিক প্রয়োজনের অব্যাহত সরবরাহ। যদি কোনোভাবে মালিকানা পাই এক টুকরো জমির সেটাকে ধরে নেই চূড়ান্ত সৌভাগ্য।
 
এই অতি সাধারণ আমরা নিত্যদিন স্বপ্ন দেখিনা। বরং নিত্যদিনের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে বাঁচি। মাঝে-মধ্যে আমরা বিরল সুদিনের দেখা পাই। অতি সাধারণ আমরা একাত্তরের ষোল ডিসেম্বর ভেবেছিলাম, এখন থেকে জীবন হবে সোনার পালঙ্কে শুয়ে বসে খাওয়া। মংগা আর দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে পাঁজরের হাড় বেরিয়ে উপহাস করেছে। পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর আবারো স্বপ্নাতুর হয়ে উঠেছিলাম হত্যা-হানাহানির অবসান কল্পনায়। স্বপ্নভঙ্গে এরশাদের স্বৈরাচারী পতনে আবারো স্বপ্ন জেগে উঠেছিলো। সেই ধারাবাহিকতায় ওয়ান ইলেভেন এসেছিলো রাজনৈতিক স্বস্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিশ্চিয়তার প্রত্যাশায়।
 
ওয়ান ইলেভেনের কুশলীবরা ‘আওকাত সে জাদা’ বেড়ে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে একসাথে অনেকগুলো ‘সস্তা ও জনপ্রিয়’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমে সবকিছু লেজেগোবরে করে দিয়েছিলেন। ভজঘটে ফেলে দিয়েছেন অতি সাধারণের স্বপ্নগুলোকে। হাজারো ব্যর্থতার পরও ওয়ান ইলেভেনের কয়েকটি অর্জনের প্রশংসা না করাটা অন্যায় ও অনৈতিক হবে। পরিচয়পত্রসহ নির্ভুল ভোটার তালিকা, জনজীবন ব্যাহত না করে নির্বাচনী প্রচারণার সুষ্ঠু নীতিমালা , অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। ওয়ান ইলেভেন জাতিকে জানিয়েছিলো, ক্ষমতাধরেরাও আইনের ঊর্ধ্বের কেউ নন।
 
দু’-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে এলে অতি সাধারণ আমরা ভেবেছিলাম দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ওয়ান ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকার গণমুখী ও জবাবদিহি হবে। কিন্তু অজ্ঞ ও তাবেদার মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ভিন্ন বার্তা দিলো। জাতির জনকের হত্যাকারীদের আইনি বিচারের প্রক্রিয়ায় এনে স্বপ্ন জাগিয়ে দিলেন, যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হবে। কিন্তু বিচারের প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় ও ‘দুর্বল সাক্ষী-তথ্য-উপাত্ত পেশ সরকারি সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী জামায়াত বিনা প্রতিবাদে, বিনা বাধায় ‘ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে’?  যুদ্ধাপরাধীদের মামলা পরিচালনার ধারাবাহিকতায় ‘মালুম’ হতে চায় যে বিচার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্তদের বিবেক ও মাথা বিক্রি হয়ে গেছে। মামলা পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আন্তরিকতা ও সততার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।   যতো সময় ক্ষেপণ হবে ততোই যুদ্ধাপরাধীরা ‘অস্তিত্ব’ রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে সেই ‘আলামত’ দৃশ্যমান হচ্ছে।
 
বিরোধী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের ন্যায্য দাবিতে রাজপথে ও প্রকাশ্যে রাজনীতিতে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন। অন্যদিকে সর্ব শক্তিতে সকল দৃশ্য-অদৃশ্য ফ্রন্টে জামায়াতিরা বুনছে ষড়যন্ত্রের জাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যাবার বদলে ক’দিন পর আওয়ামী লীগ ব্যস্ত থাকবেন নিজেদের ক্ষমতার পাঁচ বছর মেয়াদপূর্ণ করার ‘রাজনৈতিক সংগ্রামে’। আওয়ামীদের অহংবোধ সবকিছু ভজঘট করে ফেলেছে।
 
যুদ্ধাপরাধী জামায়াতিরা আসছে সকল অশুভ শক্তিমত্তায়। আর নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয়ের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। এই সামান্য সত্য বোঝার মতো স্বচ্ছতা ও অহংবোধ মুক্ত ভাবনা আওয়ামীদের মধ্যে দেখিনা।

ইমেলঃ abid.rahman@ymail.com

বাংলাদেশ সময় ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।