ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আর কোনো প্রহসন চাই না

অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২
আর কোনো প্রহসন চাই না

বড় বেশি করে মনে পড়ছে, ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর খুনের শিকার হওয়া ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম দাসের কথা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি এবং গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকায় এ আঘাত আরো বেশি করে বুকে বাজে।

 

মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার রুনির সঙ্গে আমার তেমন একটা পরিচয় বা হৃদ্যতা ছিলো না। গত এক সপ্তাহে তাদের নৃশংস-নির্মমভাবে খুন হবার এবং আগে-পরের ঘটনাবলির সচিত্র সংবাদ-প্রতিবেদনগুলো দৈনিক আর অনলাইন সংবাদপত্রে পড়ে বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেখে কিংবা স্বজন-সহকর্মীদের ভাষ্য শুনে আর সবার মতো আমারও মনে হলো, এ ঘটনা ঘটবার কথা ছিলো না, তবু ঘটেছে।

খুন হওয়ার সময় গৌতম ছিলেন দৈনিক সমকালের সে সময়কার ফরিদপুরে কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার। এরও আগে প্রথম আলো এবং সাংবাদিকতার শুরুতে ভোরের কাগজে কাজ করার সময় থেকেই টানা এক যুগ ধরে গৌতম ছিলো আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও বন্ধু এবং অভিন্ন আদর্শ-চেতনায় গড়ে ওঠা আত্মার আত্মীয়।         

সাগর এবং রুনির সহকর্মী-স্বজনেরা কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন, অমায়িক, বিনয়ী, বন্ধু বৎসল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দময় আর অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী সবার প্রিয় এ দুজন মানুষের ব্যক্তিগত কোনো শত্রু ছিলো না বা শত্রু তৈরি হবার কোনো সুযোগ ছিলো না, যারা তাদেরকে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বা শত্রুতা হাসিলে একেবারে জীবন থেকেই সরিয়ে দিতে পারে।

সাংবাদিক হিসেবে উভয়েই সৎ-সাহসী, দৃঢ়চেতা, পরিশ্রমী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ ছিলেন---তাদের ব্যাপারে এ মূল্যায়নই করেছেন অগ্রজ সহকর্মীরা। তারাই মনে করছেন, পেশাগত কারণে কোনো সংক্ষুব্ধ বিপক্ষ সৃষ্টি হয়নি, যারা সাগর-রুনির সাংবাদিকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাগে-ক্ষোভে তাদেরকেই শেষ করে দেবে বা ভাড়াটে খুনি পাঠাবে। এই সুখী দম্পতির এমন কোনো সম্পদও ছিলো না, যার লোভে বাসায় ঢুকে ডাকাতি করতে গিয়ে খুন করে ফেলবে দুর্বৃত্তরা।

সহজ-সরল কিন্তু সদা হাস্যময়, মিশুক আবার একইসঙ্গে অন্তর্মুখী স্বভাবের, কিছুটা আত্মভোলা কিন্তু নিঃস্বার্থ পরোপকারী গৌতমকেও সবাই তার মৃত্যুর পরে অজাতশত্রু বলেই অভিহিত করতেন বা এখনো করছেন। সম্পদবিহীন কিছুটা ছন্নছাড়া গৌতম মা-বাবা ভাই-বোনদের ভাঙ্গা উপজেলার বাড়িতে রেখে একা থাকতেন ফরিদপুর শহরে। ঘটনার রাতে ঘুমিয়েছিলেন সমকালের কার্যালয়ে।

সাগরকে বুক ও পিঠে অগণিত আর রুনির পেটে ও পাঁজরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে ঘাতকেরা।
লাশ উদ্ধারের সময় নিহত সাগরের শরীরে ২৫টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে বিদ্ধ অবস্থায় ২টি বাঁটবিহীন ছুরি পাওয়া গেছে। এর একটি ৫/৬ ইঞ্চি আরেকটি ৮/৯ ইঞ্চি লম্বা। আর রুনির পেটে ও পাঁজরে পাওয়া গেছে ২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। সাগরের হাত ও পা পিছন দিক থেকে বাঁধা ছিল। সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘ তার মতো করে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, কিংবা এ পর্যন্ত তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ যা জানাচ্ছে, তা থেকেও মনে হয়, চরম প্রতিহিংসার বশে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে খুনিরা!
 
গৌতমকে সন্ত্রাসীরা তার নিজ কার্যালয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে এবং গলায় নাইলনের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল। তার লাশ উদ্ধারের সময় দু’হাত পিছমোড়া করে এবং দুই পা ওই নাইলন আর মশারির দড়ি দিয়েই বাঁধা পাওয়া যায়। কি নির্মম আক্রোশ ছিল খুনিদের, ভাবা যায়!

মনে পড়ে গৌতম হত্যাকাণ্ডের পর শোক প্রকাশে এবং বিচার দাবিতে ফরিদপুরে এবং তার জন্মস্থান ভাঙ্গার নানা সভা-সমাবেশে, মিছিলে-মানববন্ধনে বার বার বলতে চেয়েছি, শত্রুতা না থাকলে এভাবে একজন ভালো মানুষকে কেন খুন করা হবে? সাগর-রুনির খুনিরাও যে তাদের শত্রুই; তা যেদিক দিয়েই হোক না কেন।

তবে এ দুই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে যে মূল মিলটা আমার চোখে পড়ছে এবং যে কারণে এ লেখার অবতারণা, তা হলো, খুনের পরপরই পুলিশ আর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাজে ও কথায় বৈপরিত্য, খুনের বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়, আতঙ্ক আর ক্ষোভ নিয়ে। এটি শুধু গৌতম বা সাগর-রুনি নয়, যে কোনো হত্যাকাণ্ডের পরেই দেখা যায়। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা, আলামত নষ্ট বা গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা বলা, ঘটনা ক্লুলেস থাকা বা পুলিশের পক্ষ থেকেই অনৈতিক সুবিধার ভিত্তিতে শুরু থেকেই দুর্বল তথ্য-প্রমাণ দিয়ে রাখা, তদন্তে নানা বাধা আসা, বাদী বা নিহতদের স্বজনদের হুমকি দিতে থাকা এবং সর্বোপরি বছরের পর বছর ধরে মামলা চলা, বিচারকাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা অজুহাতে মামলার কাজ স্থবির বা দেরি করিয়ে দেওয়া ইত্যাদির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পান না ভিকটিম বা তাদের স্বজনরা, এটাই চলে আসছে এ দেশে।

গৌতমের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে আসছে গত ৬ বছর ৩ মাস ধরে। সন্তানের খুনিদের বিচার দেথে যাবার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আর শোকে-দুঃখে মারা গেছেন গৌতমের হতভাগ্য-অসহায় বাবা-মা। পুত্রশোকে এবং পুত্রহত্যার বিচার না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর গৌতম দাসের মা সতী রানী দাস এবং ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর বাবা বলরাম দাস পরলোকগমন করেন।

যদিও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক সপ্তাহ পেরিয়েছে, তবুও বিচার না পাবার শঙ্কায় আছেন তার স্বজনরা, আর এখন পর্যন্ত শুধু খুনিদের পরিচয় জানবার আকুল আবেদন জানিয়ে রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে সারা দেশে সাংবাদিক দম্পতির সহকর্মীদের।

তখনকার প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর ক্যাডারদের রাস্তা সংস্কার কাজের টেন্ডারবাজি ও পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, জালিয়াতি আর নিম্নমানের কাজ করে অর্থ আত্মসাতের রিপোর্ট সমকালে লিখে আর এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে মাত্র ৩৩ বছরে অকালে প্রাণ হারালেন গৌতম। প্রায় একই বয়সের সাগর-রুনির অপরাধ কি ছিল, আমরা তা জানতেই পারলাম না গত এক সপ্তাহেও, কারণ পুলিশ ‌’নজরদারিতে ‘ রাখলেও এখনো গ্রেফতার করে জনসমক্ষে হাজির করেনি খুনিদের।

বাঙালির আর সব দুর্ভাগ্যের মতোই সবার চাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু যে সাগর-রুনি হত্যার বিচার, সেটা নিয়েও বা এ দুজন ভিকটিম সম্পর্কে বিতর্ক আর অহেতুক সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। এ বিতর্কের মুখে বা সময়ক্ষেপণের কারণে আসল খুনিরা পালিয়ে যাবে বা আড়ালেই থেকে যাবে কিনা, এ আশঙ্কাই এখন সর্বত্র, সবার মাঝে দেখা দিয়েছে।          

কথা উঠেছে, প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় পুলিশ বা গোয়েন্দারা সব রহস্য উদ্ধার করেও খুনিদের ধরছে না। আবার তদন্ত সংস্থাগুলোই এখন পর্যন্ত একেকবার একেক ধরনের তথ্য দিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি প্রায় শূন্য বলে হতাশার খবর জানিয়েছে। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করে আরেকটি ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন সাংবাদিক সমাজ। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওযার পর আরো ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তা শেষে শনিবার থেকে সম্মিলিতভাবে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের শাস্তি ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে সমাবেশ করবেন সাংবাদিকরা। ওই দিন ঢাকায় সকাল ১১টা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং সারা দেশে স্থানীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের সব সংগঠন এ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে। ২২ ফেব্রুয়ারির আগে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে ওই দিন চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সবক’টি সংগঠন একতাবদ্ধ হয়ে চরম কর্মসূচি দেবার ঘোষণা দেওয়ায় আমরা আশাবাদী যে, সরকার বা তদন্তে নিয়োজিতরা এবার অন্তত এ দাবি উপেক্ষা বা কোনো রকমের ‘নয়ছয়’ করতে পারবে না।

ওদিকে এখন পর্যন্ত হত্যার কারণ উদঘাটন বা খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশি চরম ব্যর্থতায় হতাশ-ক্ষুব্ধ মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জা তার পরিবার-পরিজনদের নিয়ে আমরণ অনশনে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। বাকিদের পরিণতিও সাগর-রুনির মতোই হবে, এ ধরণের হুমকি পেয়েও মামলার বাদী রুনির ভাইও অন্তত খুনিদের বা খুনের কারণ প্রকাশ্য করতে আকুলতা দেখাচ্ছেন।    

গৌতম খুনের পরও প্রভাবশালীদের অপচেষ্টা আর হুমকি-ধমকি বা অর্থের মাধ্যমে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করার খেলা আমরা দেখেছি। ‘হুকুমের আসামি’ অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে গৌতম হত্যার বিচার চেয়ে সাংবাদিকদের অনশনমঞ্চে অনশন ভাঙাতে আর ‘মায়াকান্না মার্কা’ বক্তৃতা দিতে আসতে হয়েছিল তখনকার সেই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে। অনেক সাংবাদিক তার উপস্থিতিতেই সেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও তার হাত থেকে অনশন ভাঙানোর শরবত পান না করলেও আসল সত্য হচ্ছে, খুনির লেবেল গা থেকে টেনে খুলে ফেলতে গৌতমের কিছু সহকর্মীই(!) সেদিনকার সে আয়োজনে মন্ত্রীকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন নাটকীয় কায়দায়। এ কাজে এবং তদন্ত প্রভাবিত করতে, ‘ম্যানেজড’ রিপোর্ট করতে মন্ত্রীর বাসায় বসে তার এবং খুনিচক্রের কাছ থেকে বেশুমার অর্থ গ্রহণের খবরও সে সময় ফাঁস হয়ে পড়ে। কাউকে কাউকে আবার প্রত্যক্ষদর্শী, তথ্যদানকারী বা মামলার সাক্ষী সেজে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সে সময় বা পরবর্তী সময়ে মামলাটিকেই দুর্বল আর ঝুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করতেও দেখা গেছে।

তবে বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজ এবং জনগোষ্ঠী বিচার প্রার্থনায় ‘গৌতমের লাশ বিক্রি’ করার প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন এবং এখনো মামলাটির চূড়ান্ত পরিণতি লাভ এবং অন্তত প্রকাশ্যে খুনের মিশনে থাকা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাতে কাজ করছেন। তারপরও বিচার শেষই হচ্ছে না! কারণ, প্রভাবশালী আসামিপক্ষ বারবার নানা অজুহাতে বিচারকাজ ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছে।

এদিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গত এক সপ্তাহে প্রকাশিত-প্রচারিত নানা সংবাদ-প্রতিবেদনের বিষয়ে নানা সমালোচনাও করছেন সাংবাদিকরাই। এটিকে আবার প্রভাবশালী, খুনিপক্ষ বা পুলিশের দ্বারা নানা ধরণের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করিয়ে আসল খুনিদের আড়াল করার ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। বৃহস্পতিবারের এক মানববন্ধনে তারা সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘কোনো খাওয়ানো তথ্য যেনো আমরা উপস্থাপন না করি। একটি মহল ভুল তথ্য দিয়ে পরিস্থিতি অন্য দিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার (ডাইভার্ট করার) চেষ্টা চালাবে। সাংবাদিকরা যেন এতে বিভ্রান্ত না হন। ’ একই মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, তদন্ত সংস্থার সঙ্গে র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। ফলে প্রকৃত খুনিদের ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত খুনীদের ধরার পরিবর্তে বরং নানা রকম গুজব ও কুৎসা রটাচ্ছে পুলিশ। তদন্তে ব্যর্থতার পর পুলিশ এখন সাজানো নাটক তৈরি করার চেষ্টা করছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। ‘নোয়াব’ও একই আবেদন জানিয়েছে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি।

একই রকম বিষয় গৌতম হত্যার পরও আমরা দেখেছি। স্থানীয় এবং জাতীয় অনেক সাংবাদিকই পাঠককে অধিক তথ্য জানাতে গিয়ে, নিজের কৃতিত্ব প্রকাশের লোভে বা বিভ্রান্তির কবলে পড়ে অতিরঞ্জিত বা অসত্য তথ্য দিয়ে না জেনে ঘটনাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।  

সাগর-রুনির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটবে না, বা ঘটলেও শুধরে নিয়ে আগামী দিনে আমরা সাংবাদিকরা সঠিক পথে থাকবো, সঠিকভাবে দুর্বার আন্দোলনে-সংগ্রামে প্রাথমিকভাবে অন্তত খুনিদের পরিচয় উদঘাটনে এবং প্রকাশ্য করতে বাধ্য করাবো পুলিশ-গোয়েন্দাদের, এটাই সবার প্রত্যাশা। আসলে প্রভাবশালী হোক আর যেই হোক, খুনি ধরা পড়বে সঠিক প্রক্রিয়ায় এ চাওয়া যখন সবার, তখন সঠিক পথ অবলম্বন করে সে চাওয়া পূরণ করতে হবে সঠিকভাবেই।

এরপরও কথা থেকে যায়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থেকেও গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার ৬ বছর ৩ মাসেও শেষ হয়েও হচ্ছে না। বিচারিক প্রক্রিয়ায় যাবার পর কিংবা চূড়ান্ত বিচারকাজ শুরু হবার পর তা যেন দীর্ঘসূত্রতায় না পড়ে, যেন বিচারের গতি রুদ্ধ না হয়, আইনের ফাঁক খুঁজে নিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা যেন রেহাই পাবার ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়, সাগর-রুনি হত্যা মামলার ক্ষেত্রে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় দ্রুততম সময়ে খুনিরা শাস্তি পেলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব হবে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শুরু থেকেই প্রকৃত খুনিদের আইনের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপনে মামলার ভিত্তিকে শক্ত করে গড়ে দিতে হবে। তাদের এ ব্যাপারে বাধ্য করতে সাংবাদিক সমাজ এবং সাগর-রুনির স্বজনদের সজাগ-সচেতন পদক্ষেপ জরুরি। কাউকে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে দিয়ে কিংবা আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে আসার সুযোগ দেওয়া যাবে না। অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতে হবে চূড়ান্ত সময়কাল পর্যন্ত।

মেঘের বয়স এখন মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। জীবনের মানে বোঝার আগেই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হারানোর পর তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বজনরা। বড় হয়ে বুঝতে শিখে যদি বাবা-মা হত্যার বিচার না পাওয়ার বেদনা ওকেও বয়ে বেড়াতে হয়, তার প্রশ্নের জবাব কি হবে? আর যদি ছোট্ট মেঘ বড় হয়ে জানতে পারে, এ দেশে জাতির জনক হত্যার কিংবা যুদ্ধাপরাধের(ততোদিনে গোলাম আযম গং তাদের পাপের যথাযথ শাস্তি পাবে, এ আশাবাদ থেকেই বলছি) বিচারের মতোই সাধারণ মানুষও আইনের ন্যায্য অধিকার পায়, সেটাই হবে মেঘেদের জন্য জাতির দায়শোধের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত।       

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।