ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সাগর-রুনি হত্যা মামলার টার্নিং পয়েন্ট ১৪ মার্চ

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১২
সাগর-রুনি হত্যা মামলার টার্নিং পয়েন্ট ১৪ মার্চ

১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। দু’জন তরুণ সাংবাদিক নিজ ঘরে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন।

এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারছে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় মিডিয়াও মামলার অগ্রগতি বা তদন্তকাজে সহযোগিতা তদন্ত সংস্থাকে করতে পারছে না।

এ অবস্থায় মিডিয়া কর্মীরা তাদের সহকর্মী সাগর-রুনির খুনের কারণ বা হত্যাকারীদের গ্রেফতারের বিষয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছেন। ২৮ ফেব্রæয়ারি সরকারকে দেওয়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় দুই সপ্তাহের দিন এই হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের আদালতে উপস্থাপন করতে হবে।

১৩ মার্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হবে। ১৪ মার্চ নতুন মোড় নেবে সাগর-রুনি হত্যা মামলা। জাতি তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, মহামান্য আদালতের নির্দেশে নির্দিষ্ট সময়ে সাগর-রুনির প্রকৃত হত্যাকারীরা বিচারের মুখোমুখি হবে।

এদিকে, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তকাজে নিয়োজিত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে পারছে না। আদালতের নির্দেশনা থাকায় পুলিশ ও মিডিয়া এ হত্যা মামলা সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করতে অপারগ। ফলে এ মামলার অগ্রগতিও অন্ধকারে অবস্থান করছে।

অসংখ্য পাঠক ও শুভাকাঙ্খীরা সাগর-রুনি হত্যা মামলা সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ই-মেইল পাঠাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অবগতির জন্য বিনয়ের সঙ্গে বলছি যে, মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় এ মামলা সম্পর্কে অনুসন্ধান করা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা যারা বাংলাদেশে কাজ করি, আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হয়। মিডিয়া অবশ্যই সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিডিয়া সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে না। মিডিয়ার প্রতি কারো না কারো বিরূপ দৃষ্টি থাকতে পারে, কিন্তু মিডিয়া কারো প্রতি দৃষ্টি খারাপ করে না। আমি একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবে বলতে পারি, যিনি আমার মৃত্যু কামনা করেন আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

সাংবাদিকদের অনেকে প্রতিপক্ষ মনে করেন। একটি সেমিনারে বলেছিলাম, কোনো ঘটনা না ঘটলে যদি সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেন তবে সাংবাদিকদের দোষ। একজন সাংবাদিক ইতিবাচক সংবাদ লেখার জন্য সকালে ঘর থেকে বের হন। কিন্তু নেতিবাচক সংবাদ এলে ওই সংবাদটি লিখতে সাংবাদিক কষ্ট পান।

রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে সাংবাদিকতা। অপরাধীদের কল্যাণে নয়। অপরাধীরা অবশ্যই সাংবাদিকদের মন্দ বলবেন। এজন্য সাংবাদিকদের কিছু যায় আসে না। একজন অপরাধী যদি একজন সাংবাদিকের প্রশংসা করেন, তবে বুঝে নিতে হবে আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছি।

সুতরাং মিডিয়াকে খারাপ মনে করলে বুঝতে হবে, বক্তা কোনো না কোনো অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিস্কার। আমরা চাই প্রকৃত হত্যাকারীরা চিহ্নিত হয়ে আদালতে উপস্থাপিত হোক। আদালত আশা করি, ন্যায় বিচার করবেন। আর যদি ন্যায় বিচার না হয়, তবে সাংবাদিক সমাজ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক।

বর্তমানে দেশে-বিদেশে যে ভাবে সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ সাগর-রুনি হত্যার ন্যায় বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তাতে মনে হয়, ন্যায় বিচার হবে। ১৮ মার্চ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দিন সারা বিশ্বে একই সময়ে সমাবেশ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। যদি তাই হয়, তবে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন- এটা মনে না করার বিকল্প নেই।

আমরা আশা করি, সরকার আমাদের মনের অবস্থা বুঝে ভালো সিদ্ধান্তটিই নেবেন।

reponansary@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।