সিলেট: ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে সংবিধানকে দলীয় দলিলে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে নগরের একটি হোটেলে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ শীর্ষক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তখন নতুন সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কাঠামোকে মেরামত করা অপরিহার্য। এ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর বিএনপি কোন নীতিতে দেশ পরিচালনা করবে, এমন বিষয়কে সামনে রেখেই দীর্ঘ গবেষণার পর রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।
আর বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারলে সুশাসন নিশ্চিতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হবে। উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ থাকবে বলেও বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংসদ বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন করলে নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে। এ পদ্ধতিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। তাই জাতীয় নির্বাচনের তিনমাস আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া অপরিহার্য। কিন্তু সংবিধান থেকে এটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জনবান্ধব সংবিধান প্রণয়ন করতে হলে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই এটিকে সরকার বলা যায় না। সরকার হলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে আমাদের শত শত নেতাকর্মীদের গুম-খুন করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়েছে। বিএনপি তার পরেও শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। কারণ বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা চায় না, বিএনপি শান্তি চায়।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, দেশে বিচার বিভাগে কি হচ্ছে, তা সবাই দেখছেন। যেখানে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়, সেখানে সুবিচার পাওয়া দুঃস্বপ্ন। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের কথা বলেছি আমরা। তারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করবে, অন্যায় ভাবে দেশ চালাবে। এর নামই আওয়ামী লীগ।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে পেশাজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাজীবীদের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ ভোটার তরুণ। এ তরুণদের মধ্যে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। দেশ আজ যে গর্তের মধ্যে পড়েছে, তা থেকে উত্তোলনে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার, ভোটাধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নাই।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম, মহানগর লেবার পার্টির সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, সিলেট পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ডা. শামিমুর রহমান, শাবিপ্রবির শিক্ষক প্রফেসর ড. শাহ আতিকুল হক, প্রফেসর খালেকুর রহমান, সিকৃবির শিক্ষক প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, সিলেট জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমদ। এ সময় বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক জাহেদ আহমদের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত সভার শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এনইউ/এসআইএ