খুলনা: ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সময় লড়াই, সংগ্রামসহ জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল খুলনার ছাত্রদলের নেতারা, এমনটাই দাবে দলটির নেতাকর্মীদের। বর্তমানে নেতৃত্বহীন মহানগর ও জেলা ছাত্রদল কমিটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর আব্দুল মান্নান মিস্ত্রিকে সভাপতি ও গোলাম মোস্তফা তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে খুলনা জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ঘোষিত ৩১ সদস্যবিশিষ্ট খুলনা জেলা ছাত্রদল কমিটি ২০১৮ সালের ১০ জুন ২৫১ সদস্যের কমিটিতে বর্ধিত করা হয়।
অপরদিকে, ২০২১ সালের ২৪ মার্চ ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তিককে আহ্বায়ক এবং মো. তাজিম বিশ্বাসকে সদস্য সচিব করে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের এ দুইটি কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট (শনিবার) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো এত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রায় ১ বছর ধরে অভিভাবকহীন খুলনা জেলা ও মহানগর ছাত্রদল।
জানা যায়, বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল। এজন্য মাঠে নেমেছে সংগঠনটির নেতারা। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ছাত্রদল ঢেলে সাজাতে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সারাদেশে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
ছাত্রদলের নতুন কমিটির পদপ্রত্যাশীরা যে যার অবস্থান থেকে সংগঠনকে গতিশীল করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিশ্বাস দীর্ঘদিন আন্দোলন–সংগ্রামে সক্রিয় ছিল, কারা নির্যাতিত, মেধাবী ও সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন নেতাদের নিয়ে হবে খুলনা জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. তাজিম বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গত ১৭ বছর যারা আন্দোলন সংগ্রাম করে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে পরীক্ষিত করেছেন পুলিশ সহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দমন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদেরকেই দল মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশা করি।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো নাজিম উদ্দিন শামীম ভূইঁয়া বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রদলের দীর্ঘদিন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া আটকে আছে। সংগঠনের একটি কাঠামো নির্ধারণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে দেয়া দরকার। দীর্ঘ দিন সংগঠনে কমিটি না থাকায় যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে যে হতাশা তৈরী হয়েছে তা কেটে যাবে। সংগঠনের কার্যক্রমের গতি বাড়বে। নতুন নেতৃত্বে সৃষ্টি হবে।
খুলনা সদর থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাই অচিরেই নতুন কমিটি আসুক। নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটুক। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা অধীর আগ্রহে আছেন ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য। আশা করি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনে যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল দল তাদের মূল্যায়ন করবে।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন খুলনা জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি না থাকার কারণে সংগঠনকে গতিশীল এবং সুসংঘটিত করা যাচ্ছে না। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এমন অবস্থায় ত্যাগী অভিজ্ঞ ক্লিন ইমেজ ও দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে যাদের ভূমিকা ছিল, তাদের মধ্য থেকে ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হোক। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন ইউনিয়ন থেকে উপজেলা উপজেলা থেকে জেলা, ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করতে হলে। এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিজ্ঞ ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজ সমৃদ্ধ ছাত্র নেতাদের দিয়ে আগামী কমিটি করা হোক, এটা তৃণমূলের চাওয়া।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মাছুম বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা জেলা ছাত্রদলের কমিটি নাই বিগত ১ বছরের ও বেশি সময়। আরো একটা মূল বিষয় হলো ১০ বছর পরে কমিটি হবে। এর ভিতরে মহানগর ছাত্রদলের একটি কমিটি হলে ও কমিটি হয়নি জেলা ছাত্রদলের। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সকল আন্দোলন সংগ্রাম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। যার কারণে বার বার কারাবরণ করেছি। রিমান্ড খেটেছি মাসের পর মাস জেল জীবন পার করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের সাথে আপোষ করিনি অসংখ্যা মামলা খেয়েছি। নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার প্রত্যাশা যারা আন্দোলন সংগ্রামের সময় পালিয়ে ছিল। মাদকের সাথে জড়িত বিভিন্ন সমাজ বিরোধী কাজের সাথে জড়িত ইতোমধ্যে যারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছে তারা যেন কমিটিতে না আসে। এবং যারা ত্যাগী তাদের যেন যথাযথ মূল্যায়ন হয় আসন্ন কমিটিতে। ত্যাগীরা যদি মূল্যায়ন না হয় তাহলে আমি মনে করি দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রূপসা থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল রাজু বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি নাই। নতুন নেতৃত্ব নাই। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে কমিটির বিকল্প নেই। অচিরেই ছাত্রদলের কমিটি চাই। এবং সে কমিটিতে দুঃসময়ের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
খুলনায় সাংগঠনিক সফরে আসা খুলনা জেলা ও নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম প্রধান ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শাফি ইসলাম মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, মিটিংয়ে খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটি দেওয়া হোক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসেবে অচিরেই কমিটি দেওয়া হতে পারে। এবার কমিটিতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহন করা ও বিগত দিনে সর্বোচ্চ ত্যাগী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এমআরএম