ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘বানিয়ে দিতে’ টাকা নিয়েছেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘বানিয়ে দিতে’ টাকা নিয়েছেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী!

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় এক ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘বানিয়ে দেওয়ার’ কথা বলে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহানের বিরোদ্ধে।  

সালেহা জাহান ৫ লাখ টাকা চুক্তিতে এক মাসের মধ্যে বেহালা বাদক গুরু চন্দ্র সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাইয়ে দেবেন বলে ওই টাকা নেন।

কিন্তু পরে সনদতো দূরের কথা, টাকা চাইলে উল্টো গুরু চন্দ্রকে চাপে রাখার অভিযোগও রয়েছে সালেহা জাহানের নামে। ভুক্তভোগী পরিবারের কাছের এক আত্মীয়ের সঙ্গে সালেহার টাকা নেওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২০২১ সালে সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালেহা জাহান মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেবে বলে টাকা নেন গুরু চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে। গুরু চন্দ্রের মেয়ে গীতা সরকার স্থানীয় রূপালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে সালেহা জাহানের ব্যাংক এশিয়ার একটি হিসাব নম্বরে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেন। আর নগদে দেন ২০ হাজার টাকা। চুক্তি হয়, মোট ৫ লাখ টাকা দিলে এক মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ম্যানেজ করে দেবে সালেহা। দুই বছর সাত মাস পার হয়ে গেলেও সনদ পাননি গুরু চন্দ্র সরকার। তবে টাকা চাইতে গেলে উল্টো চাপের মধ্যে রাখেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেত্রী। পরবর্তী সময়ে গুরু চন্দ্র সরকারের কাছে এক আত্মীয় ঢাকায় বেসরকারি একটি টেলিভিশনে কর্মরত আছেন। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হয় সালেহা জাহানের, পরে ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এই ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে।  

গুরু চন্দ্রকে মেয়ে গীতা সরকার বলেন, যেখানে এক মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে সালেহা জাহান, সেখানে আজ দুই বছর ৭ মাস পার হয়ে গেছে। এখন টাকা চাইতে গেলে সালেহা উল্টো আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এই টাকাগুলো স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের ফাঁকে টিউশনির জমানো টাকা, বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা দেড় লাখ টাকা। পুরো টাকা ম্যানেজ না হওয়ায় স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সালেহা জাহানকে টাকা দেই।  

গীতা আরও বলেন, বাবার বয়স হয়েছে ৭০ বছর, সালেহা জাহানের ফাঁদে পা দিয়ে এমন একটি কাজ করেছি, তা আমার ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আমার পরিবারের মান-সম্মানও হানি হয়েছে।  

অভিযোগের ব্যাপারে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহান বলেন, টাকা নিয়েছিলাম, তবে ফেরত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  

আপনি কি টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে থাকেন -এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদ উত্তর দিতে পারেননি। উল্টো বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করার জন্য বিভিন্ন তদবিরও করেছেন তিনি।  

বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক রোমেজা আক্তার বলেন, সালেহা জাহানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভানেত্রীকে জানিয়েছি। সত্যতা প্রমাণিত হলে সালেহার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।