ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কক্সবাজার-৩ আসনে লড়াই হবে নৌকা-ঈগলে

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
কক্সবাজার-৩ আসনে লড়াই হবে নৌকা-ঈগলে ডানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও বাঁয়ে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ

কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ সংসদীয় আসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন।

তবে ভোটারদের মতে, আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের।

শুরুর দিকে এখানে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ঢিমেতালে চললেও শেষ মুহূর্তে বেশ জমজমাট হয়েছে। এমনকি নৌকা ও ঈগলের প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। পাশাপাশি একের পর এক পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে উভয়পক্ষ। এতে ছড়িয়েছে উত্তেজনা, শঙ্কা জাগিয়েছে ভোটারদের মধ্যে।

নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের বাড়ি রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ের মন্ডলপাড়ায়। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তাকে ঘিরে এলাকায় ভোটারদের মাঝে এমন কথার প্রচলন আছে, প্রতিবারই ভোটযুদ্ধের চেয়ে মনোনয়ন পেতে আরও কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তবে কঠিন যুদ্ধ শেষে তিনিই মনোনয়ন পান।

কমলের সমর্থকদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকায়, নির্বাচনী এলাকায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে কমলের পা পড়েনি। দায়িত্বে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও মেলেনি। এছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে খুব কাছ থেকে মেলামেশার কারণে এবারও তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।

অন্যদিকে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের বাড়ি ঈদগাঁওয়ে। বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতা তিনি। নির্বাচনী এলাকায় একদম নতুন মুখ মিজান।

কারও কারও মতে, ভোটারেরা তাকে ভালো করে চেনেন না। দলীয় নির্দেশনা মেনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিলেও উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু নেতা মিজান সাঈদের পক্ষে মাঠে নামায় শেষ মুহূর্তে তার প্রচারণাও বেশ জমে ওঠে। তার সর্মথকেরা বলছেন, এবার ভোটারেরা নতুন মুখ মিজান সাঈদকেই বেছে নেবেন।

অনেকের ভাষ্য, এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকেরা দলীয় বিধিনিষেদের কারণে ভোট দিতে যাবেন না। যারা যাবেন, বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের লোকজন এবং দলীয় কর্মী-সমর্থক। তাই এদের বেশির ভাগ ভোট পড়বে কমলের পক্ষে।  

সচেতন মহল মনে করছে, প্রথমত এই এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের দলীয় ভোট বেশি। এমনকি পরপর দুই দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকায় লোকজন নৌকা প্রতীকের সন্তুষ্ট নয়। ভোটদানের সুযোগ পেলেই বিকল্প প্রার্থী, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা নৌকার বিপক্ষে রায় দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এ দুই দলের বড় অংশ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বিধায় সেটা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য ইতিবাচক দিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

যদিও দুজনের প্রচার-প্রচারণায় নৌকাই এগিয়ে থেকেছে বেশি। কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, পৌরসভার ঝিলংজা, পাহাড়তলী, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, জোয়ারিয়ানালা, উত্তর ফতেখাঁরকুল, ঈদগাঁওয়ের পালপাড়ার সংখ্যালঘু ভোটার আছেন অনেক। এসব এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল সশরীরে এবং তার পক্ষের লোকজন একাধিকবার এলাকায় গিয়ে প্রচার প্রচারণা চালালেও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীকে তারা এখনো চোখে দেখেননি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার শহীদ দৌলত ময়দানে শেষ জনসভা করেন সাইমুম সরওয়ার কমল। জনসভায় জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন এবং নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে মাত্র ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৭০ শতাংশ কাজ বাকি। এই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানাতে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নৌকা ও ঈগলের প্রার্থী পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তোলেন।

নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, শুরু থেকেই ভোটের মাঠে নানা রকম মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মিজান সাঈদ। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে নির্দিষ্ট সময়ের ৪০ মিনিট পর মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি ঢাকায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বলেন, আমরা নাকি তাকে অপহরণ করেছি। সে কারণে তার মনোনয়ন জমা দিতে বিলম্ব। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র জমা নেন।  

কমল দাবি করেন, মিজান সাঈদ প্রথমে ইসলামী ছাত্রশিবির করতেন। সেখান থেকে বিএনপি, আর ২০১৫ সালে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদে যোগ দেন। এলাকা চেনেন না, এলাকার নাম জানেন না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে জানাশোনা নেই, পরিচয়ও নেই তার। উড়ে এসে জুড়ে বসে এমপি হতে চান, ভালো কথা, কিন্তু ভোটারদের মাঝে নানা মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন।

‘এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে নিজের পরিবারকে সময় দিইনি, সন্তানদের আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছি। দৈনিক দুই ঘণ্টাও ঘুমাতে পারিনি। করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বছরের পর বছর এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে আজ এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। আশা করি ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ভোটাররা আমার এই ত্যাগের প্রতিদান দেবেন’, যোগ করেন সাইমুম সরওয়ার কমল।

অন্যদিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মিজান সাঈদ অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কমল এবং তার সমর্থকেরা ঈগলের নেতা-কর্মীদের ওপর একের পর এক হামলা করছেন। বুধবার (৩ জানুয়ারি) রামুর জোয়ারিয়ানালায় তার পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় চেয়ারম্যান কামাল সামশু উদ্দিন প্রিন্সের ওপর হামলা করেন। এর আগে তার প্রচার কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা ভেঙে দেওয়া হয়। হামলায় আহত দুইজন কর্মী এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ সময় তিনি প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলেও অভিযোগ করেন।

জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী বলেও জানান মিজান সাঈদ। তার বক্তব্য, নানা কারণে সাইমুম সরওয়ার কমলের ওপর সাধারণ ভোটাররা বিরক্ত। এবার তাকে বর্জন করবেন তারা। তাই কক্সবাজার, রামু ও ঈদগাঁও এলাকার মানুষ নতুন মুখ হলেও তাকেই বেছে নেবেন।

আরও যারা প্রার্থী
এই দুই প্রার্থী ছাড়াও মাঠে তৎপর জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল)। তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক। কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়ায় তার বাড়ি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী ও দলের মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুনও হাতঘড়ি প্রতীকে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার বাড়িও কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বাহারছড়ায়।  

এ আসনে বাকি দুজন প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান (কুঁড়েঘর) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪
এসবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।