ঢাকা: চলমান সঙ্কটের সমাধান না হলে আন্দোলন শেষ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, অতীতের ইতিহাস দেখেন, পাকিস্তান আমলের ইতিহাস দেখেন, সেখানেও দেখবেন বহুবার আন্দোলন এসেছে, আন্দোলন একপর্যায়ে হয়ত সেটা স্তিমিত হয়েছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘নানা ঘটনা প্রবাহের পর চলমান আন্দোলনের সমাপ্তি হয়েছে কিনা’, প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এ সময় তিনি এ কথাগুলোর পাশাপাশি জানান, আন্দোলন শেষ হয়নি।
গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব বিবৃতির মাধ্যমে দলের বক্তব্য উপস্থাপন করলেও বুধবার কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল থাকার মধ্যে গণমাধমের মুখোমুখি হন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আন্দোলন শেষ হয়নি, কারণ আমার রুটি-রুজির ব্যাপার আছে। জিনিস পত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ছিল, অন্যদিকে সরকারের চরম ব্যর্থতা সর্বক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে, দুর্নীতি তারা নিজেরাই করে সবখানে তারা এত ব্যর্থ হয়েছে যে, রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সেই কারণেই জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েছে। হ্যাঁ, সাময়িকভাবে সেনা বাহিনী নামিয়ে, দমনপীড়ন করে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে, তারা এটাকে হয়ত থামিয়ে দিতে পারে। এটার যদি রাজনৈতিক সমাধান না করে তাহলে কিন্তু কখনো এটার শেষ সমাধান হবে না।
রাজনৈতিক সমাধানটা কি প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশের যে অবস্থা, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে এমন খারাপ অবস্থা দেখিনি। একটা আন্দোলনকে দমন করার জন্যে এ রকম চরম শক্তি প্রয়োগ করা, সেখানে শত শত মানুষকে হত্যা করা, পরবর্তীকালে কারফিউ দিয়ে আর্মিকে নামানো এটা ইদানীংকালে হয়নি। সরকারের চরম ব্যর্থতা সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিএনপির সমর্থন ‘এখনো আছে’ জানিয়ে ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কারের আমাদের সমর্থন ছিল, এখনো আমরা দিচ্ছি। তাদের যে দাবিগুলো ছিল তা এখনো পূরণ করা হয়নি। তাদের দাবি ৮ দফা, সেগুলো কিন্তু এখনো হয়নি। শুধু কোটা নয়, আরও যে দাবিগুলো আছে অবশ্যই সেসব দাবি সরকারের পূরণ করা উচিৎ।
ফখরুল বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তথ্য ঠিক মতো পাচ্ছি না, যোগাযোগ ব্যবস্থা সরকার বন্ধ করে রাখায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের অফিসগুলো আপনার দেখতেই পেরেছেন কীভাবে অভিযান চালিয়ে সব কিছু নিয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকদিন আগে কি করেছে। তালা লাগিয়ে দিয়েছিল, ক্রাইম সিন ফিতে লাগিয়ে দিয়েছিল। ফলে আমরা সব কিছু এখনো শুরু করতে পারিনি।
তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি, আমাদের প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ, বিরোধী দলের নেতা, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক, জামায়াতে ইসলামের মিয়া গোলাম, ডা. আবদুল্লাহ আবু তাহেরসহ জাতীয় নেতাদেরকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। বিএনপি মহাসচিব দলের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
ফখরুল বলেন, এটা খুব পরিষ্কার সারা বিশ্বের কাছে, বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের জনগণের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আজকে এই আন্দোলনে জনসাধারণকে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যাগুলোর ছবি বিদেশে গেছে, সেখানে গণতান্ত্রিক দেশগুলো, গণতান্ত্রিক দেশের নেতারা আছেন তারা তো কথা বলবেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
টিএ/এমজে