ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেটবাসী এখনও সবক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার: আরিফুল হক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
সিলেটবাসী এখনও সবক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার: আরিফুল হক বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সিলেটবাসী সবক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরের কুমারপাড়াস্থ নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ আটকে থাকা নিয়ে আরিফুল হক জেলা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখেন- কোন কারণে জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না? ১৭ বছরেও যাচাই-বাছাই শেষ হচ্ছে না কেন? কেন এত বিলম্ব, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হোক। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে জিজ্ঞাসা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক লালাবাজার এসে কেন জাফলংয়ের দিকে চলে যায়। লালাবাজার থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত সড়ক এক্সটেনশন করে রিভার্স করা হোক, তাতে যানজট কমবে।

তিনি আরও বলেন, আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়ক বলা হয়েছে ছয় লেন, আবার কখনও বলা হয়েছে চার লেন। আমার কাছে যে তথ্য আছে তাতে দেখা যায়, প্রকল্পটি একনেকে পাঠানো হয়েছিল। পরে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এটি মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়। এর মানে প্রকল্পটি যেন অর্থবছর থেকে বাদ পড়ে যায়, সেজন্য কখনো মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়, কখনও একনেকে পাঠানো হয়, কখনও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ১৭ বছরেও কেন এ যাচাই-বাছাই শেষ হচ্ছে না।

বাংলাদেশের সব জায়গায় বিমানবন্দরের সড়ক ছয় লেন, চার লেন হয়ে গেছে। শুধু সিলেট এখনও বঞ্চিত। অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে ১৭টি এলএ প্রস্তাব রয়েছে উল্লেখ করে আরিফুল হক বলেন, এর মধ্যে ১১টি চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে, ছয়টি নোটিশ করা হয়েছে। ১১টি হতে পারলে বাকি ছয়টির জন্য আর কত বছর লাগবে।

এছাড়া সিলেট-তামাবিল প্রকল্পে ৩০টি এলএ প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে সাতটির প্রস্তাব করা হলেও তিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। আমরা কি এ অবস্থার মধ্যে থাকবো- প্রশ্ন রাখেন আরিফুল হক।

তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দিতে বিলম্বের কারণে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে দিন দিন নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। কারণ প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ে।

লাক্কাতুড়া থেকে বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং সিলেট-সুতারকান্দি সড়ক প্রকল্পের ছাড়পত্র এখনও দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া সহজীকরণের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি বলে জানান তিনি।

আরিফুল হক বলেন, বর্ষাকাল আসছে। সিলেটে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, বিদ্যমান সড়কসমূহ রক্ষায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, প্রয়োজনীয় বাজেট দেওয়া এবং সমন্বয় সাধন করতে হবে। সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ ও বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যার সময় আমরা নড়াচড়া করি। কিন্তু বন্যা থেকে বাঁচার জন্য যা করা প্রয়োজন সেখানে আমরা খুব একটা খেয়াল রাখি না। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে নিয়মিত বন্যা দেখা দেয়। আগামী বর্ষা মৌসুমেও বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। এ ব্যাপারে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবেক মেয়র বলেন, সিলেট পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা। কিন্তু এখানকার সড়কগুলো মোটেও মানসম্মত নয়। ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর থেকে পাহাড় ঘেঁষে তামাবিল, জাফলং পর্যন্ত একটি পর্যটন সড়ক করা হলে পর্যটক বিপুল পরিমাণে বাড়তো। কিন্তু এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বরাবরে আমি একটি আবেদন দিয়েছিলাম। আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ৩০ অক্টোবর বিউবোর সচিব ও চেয়ারম্যানের উদ্দেশে লিখলেন- প্রতিবেদনসহ উপস্থাপন করুন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ প্রতিবেদনের কোনো খবর নেই।

বিমান ভাড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। আমরা দেখছি এখানে একেক বিমানের ভাড়া একেক রকম। এ বৈষম্য কেন? একই দেশে তো দুই নীতি হতে পারে না। এ কারণে সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচলকারী প্রবাসীদের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রে সব প্রকার ছাড় থাকলেও সিলেটের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিমান কর্তৃপক্ষের নজর ভিন্ন। বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে সিলেটিরা জিম্মি। ব্যাপক হারে সিলেটিদের কাছ থেকে টিকিটের দাম নেওয়া হয়। বিমান কর্তৃপক্ষরা যেভাবে চাইবে, সেভাবে সিলেটিদের ব্যবহার করা যাবে, এমন মানসিকতা তৈরি হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট সিলেট থেকে ঢাকা ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং ঢাকা থেকে সিলেট ২১ হাজার ৮৬০ টাকা। আবার একইদিনে সিলেট থেকে ঢাকা নভোএয়ারের ফ্লাইটের টিকিটের দাম ২১ হাজার ৬৫০ টাকা। এখন প্রায় সরকারি-বেসরকারি বিমানের ফ্লাইটের দাম ২১ হাজার, ২০ হাজার, ১১ হাজার, ৮ হাজার কখনো কখনো ৯ ও ১০ হাজার প্রতিদিন ওঠা-নামা করে।

বিমান কর্তৃপক্ষের এমন বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে এসব পরিহার করতে হবে। না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলনে যাবো। অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয় তাহলে বুঝবো সিলেটবাসীর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।