ঢাকা: এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে একমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক শেষে এ কথা জানান দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা আজকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এখানে এসেছি। আমরা দীর্ঘ সময় আলোচনার পরও আমাদের আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। বিষয়গুলো খুব পটেনশিয়ালি বের হয়ে আসা উচিত, এজন্য আমরা তাড়াহুড়ো করছি না।
তিনি আরও বলেন, আজকে অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা (জামায়াতে ইসলামী) কিছু কিছু বিষয়ে একমত হতে পেরেছি৷ কিছু কিছু বিষয়ে আমরা তাদের (ঐকমত্য কমিশন) প্রস্তাব দিয়েছি৷ সেটা ওনারা বিবেচনার জন্য রেখেছেন। কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের আরও আলোচনার প্রয়োজন। সেজন্য সেগুলো আমরা পরের আলোচনার জন্য রেখেছি।
তিনি বলেন, যে কয়টি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তার ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ দশ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, দুই নম্বর আমরা একমত হয়েছি, আর্টিকেল ৭০ এর কিছু অ্যামেন্ডমেন্টসহ ওনাদের (ঐকমত্য কমিশন) প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি৷ সেটি হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন, অর্থবিল বা বাজেট অনুমোদন এবং আস্থা ভোট ছাড়া বাকি যেকোনো বিষয়ে একজন সংসদ সদস্য যেকোনো দলের ও মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সংবিধান কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। কিন্তু পাওয়ার এবং অথোরিটির জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন। আমরা সেটি বলেছি, ওনারাও আলোচনার জন্য অগ্রসর হয়েছেন। যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে করে এনসিসি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেখানে তারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির কথা বলেছেন৷ আমরা তাতে না বলেছি। ওনারা দুইজন রাষ্ট্রের দুইটি জায়গার সর্বোচ্চ জায়গায় আছেন। দেশে জরুরি অবস্থায় অনেক সময রাষ্ট্রপতির কাছে ধরনা দিতে হয়, অনেক সময় জুডিসিয়াল সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। তাই ওনাদের কমিটির ভেতর অন্তর্ভুক্ত না করাই ভালো হবে। অনেকটা নীতিগতভাবেই বিবেচনার কথা ওনারা (ঐক্যমত কমিশন) বলেছেন। এগুলো ছাড়া এনসিসির কাঠামোগত দিকের সঙ্গে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। এটা একটা নতুন প্রস্তাব।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, সেখানে আমরা পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের কথা বলেছি। তার মানে সারাদেশে একসঙ্গে নির্বাচন হবে মার্কা বা দলের ভিত্তিতে৷ এবং সারাদেশে যে দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সেই পরিমাণে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল হচ্ছে এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের যে ফলাফল হচ্ছে এটি তখন বন্ধ হয়ে যাবে। টাকার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে৷ এটা পৃথিবীর ৬০টির বেশি দেশে চর্চা হচ্ছে৷ দুই একটি প্রশ্ন ছাড়া এটা মোটামুটিভাবে কার্যকর বলে প্রমাণিত। গত তিন মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উত্তম হবে এবং অনেক ঝামেলার থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।
তিনি বলেন, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট নির্বাচনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য আমরা এতে একমত হয়েছি। এছাড়া আরো অনেক বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সেগুলো নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রয়েছেন কমিশনে সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ সাবেক এমপি, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এসসি/জেএইচ