ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিনগত রাতে ঢাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছাত্রদল সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অতীতে এমন ছিল না কখনো। সর্বশেষ প্রশাসনে যে দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে তার প্রতিফলন আজকের এ ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তার গাফিলতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করে তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এগুলো মাসের পর মাস চলছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পরবর্তী বাস্তবতায় এদের ধরার মতো কোনো সামর্থ্য পুলিশ প্রশাসনের রয়েছে কিনা এ নিয়ে আমি সন্দিহান। আমরা বিভিন্ন সময় এগুলো বলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো প্রতিকার পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আজকের ঘটনার পর আমি মনে করি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পুরোপুরি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সেখানে যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। সেখানে যাতে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের একজনও প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
সাম্য হত্যার বিচার অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হতে হবে জানিয়ে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, অতিদ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এর অর্থ এ নয়, এ ঘটনার মাধ্যমে কোনো মব কালচার সৃষ্টি হবে। সেটিকে ছাত্রদল পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করছে। আমরা আইন নিজের হতে তুলে নেবো না। আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো, প্রয়োজনে কর্মসূচি দেবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্য আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতা। বিগত ফ্যাসিস্টদের আমলে তার রাজপথে অনেক ভূমিকা ছিল এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল। তিনি সহপাঠীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও মেধাবী একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। আমরা এখনই এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ খুঁজছি না। আমাদের সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। সেজন্য আমরা এর পেছনে কোনো কারণ খুঁজতে চাই না। আমরা আমাদের সহযোদ্ধা হত্যার বিচার দাবি করছি। যে বা যারাই জড়িত থাকুক, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। তারা যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বের করে নিয়ে আসে। এটি নিয়ে রাজনীতিকরণ যাতে না হয়, সেজন্য আমরা সচেতন রয়েছি। যে বা যারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের এ এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর রুমে থাকতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়।
দিনগত রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক।
তিনি জানান, রাতে সহপাঠীরা সাম্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে সাম্য হত্যার প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনার প্রতিবাদের একাধিক মিছিল বের করে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দিনগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে একটি মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরসহ বিভিন্ন ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন।
এসসি/ এফএইচ/আরআইএস