জাতীয় পার্টির (রওশন) মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেছেন, দেশব্যাপী হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজিসহ ধারাবাহিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জাতি চরম আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় তটস্থ। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ এসব কল্পনাতীত অপকর্ম আর অপরাধমূলক ঘটনায় ভীষণ অসহায়বোধ করছে।
রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর- রুনি হল মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. মামুনুর রশিদ বলেন, কারোরই জানমাল আজ আর নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশ এক চরম পরিণতির দিকে ধাবিত হয়ে কালো গহ্বরে আটকা পড়ে যাবে, যা আমাদের কারোরই প্রত্যাশা নয়।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি মনে করে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চরম উদাসীনতা কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এথেকে পরিত্রাণের পথ-পদ্ধতি বের করতে হলে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ছাত্রজনতা- তথা গোটা জাতির ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
মো. মামুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের হীন ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি অপশক্তি। তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। তারা চায়, এমন অরাজক পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা চুরমার করে দিতে।
তিনি বলেন, একই অপশক্তি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধেও চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যাপক অবদান রাখার মাধ্যমে আমাদের সেনাবাহিনী যে অভূতপূর্ব সুনাম অর্জন করেছে, এটা তছনছ করে দিতে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ঘোষিত ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্যে এক অশনি সঙ্কেত। গত ১১ মাসে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। সার্বিক অর্থনীতির অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক।
তিনি বলেন, এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্রান্তিলগ্ন উত্তরণে সেনাবাহিনীকে এক্ষুণি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে। নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজিসহ ধারাবাহিক অপরাধমূলক অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদে অনতিবিলম্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মাঝে সর্বক্ষেত্রেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে। জাতীয় পার্টি দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রত্যাশা করে। একইভাবে অবিলম্বে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জোর দাবি জানায়।
জাপার এই নেতা বলেন, আমরা আর কোনো সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না। এক্ষেত্রে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সাহেবের প্রতি আহ্বান, দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনি এক্ষুণি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আমাদেরকে এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করুণ, দেশবাসী আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক, খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, জামাল রানা, উপদেষ্টা হাফসা সুলতানা, যুগ্ম মহাসচিব ওয়াহিদুল ইসলাম তরুন, সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাতুল ইসলাম পাভেল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজমিন সুলতানা তুলি, আজমল হোসেন জিতু প্রমুখ।
টিএ/আরএইচ