ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমরা একটা ‘ফাংশনাল রিলেশনশিপ’ রাখতে চাই। প্রথম কথা হচ্ছে, তাকে সম্পর্ক ভালো করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং বাংলাদেশকে ছোট ভাই মনে না করে ইকুয়াল লেভেলে মনে করতে হবে যে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, ইকুয়াল স্ট্যাটাস দিয়ে করতে হবে এবং সম্মানসূচক সম্পর্ক হতে হবে।
গত রবিবার বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজটোয়েন্টিফোরকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত যদি ভালো প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে, এখন হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে, তাঁকে যদি ফেরত দেয় এবং বাংলাদেশে ‘ইন্টারফেয়ার’ না করে, পানি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ‘ইমিডিয়েটলি’ পদক্ষেপ নেয়, সীমানার হত্যা বন্ধ করে, তাহলে অবশ্যই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না করার কোনো কারণ নেই।
‘মাইনাস টু ফর্মুলা এখনো সক্রিয়’-এমন আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব ‘গসিপ’ মনে হয় আমার কাছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের মানুষ একটু গল্প করতে পছন্দ করে, তর্ক করতে পছন্দ করে, আড্ডা মারতে পছন্দ করে-এগুলো মানুষের দীর্ঘকালের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমি নেগেটিভ বলছি না।
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। নির্বাচন হয়ে গেলে রাজনৈতিক যে সমস্যাগুলো আছে, সেই সমস্যাগুলো এবং একই সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে।
ভারতের সঙ্গে বিএনপির লাইন হয়েছে- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, বললাম না যে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য। এটা দীর্ঘকাল গণতন্ত্রের চর্চা না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে গুজব তৈরি করা, গল্প তৈরি করা, আড্ডা মারার ব্যাপারগুলোকে অন্যভাবে নিয়ে আসা-সেই জায়গাগুলোতেই সমস্যাটা আছে। একটা রাজনৈতিক দল অন্য দেশের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক হবে, না হবে বা কী করবে-সেটা আমরা ঘোষণাই করেছি। আমাদের ঘোষণার মধ্যেই আছে যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুরোপুরিভাবে আমাদের যে ঘোষিত নীতি, অর্থাৎ সবাই আমাদের বন্ধু হবেন, কেউ আমাদের শত্রু হবেন না-সেভাবেই আমরা মনে করি আছে এবং সেটাকে আরো প্রমোট করার ব্যবস্থা করব। কারণ কতগুলো বাস্তবতার ব্যাপার আছে তো। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতবর্ষ আমাদের প্রতিবেশী। বড় প্রতিবেশী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেনি ভারতের সঙ্গে, পানির সমস্যার সমাধান হয়নি, হিস্যা সমাধান হয়নি, সীমান্তে হত্যার সমাধান হয়নি, নির্বাচনের মধ্যে হস্তক্ষেপ করা, প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা, অন্যদিকে এখন আবার পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া-এসবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নিঃসন্দেহে একটা বড় রকমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সে জন্যই মানুষের খুব আগ্রহ যে, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন? জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? আমরা আমাদের সম্পর্ক ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যে রকম সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই, ভারতের সঙ্গে আমরা একটা ‘ফাংশনাল রিলেশনশিপ’ রাখতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট রেজিমের পরে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে এবং একটা নন-পলিটিক্যাল একটা সরকার, যারা মধ্যবর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করছে। তাদের অধীনে আমি মনে করি যে এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক মতো চলছে। বিশেষ করে, সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে গিয়েছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তারা ভেঙে দিয়েছিল, সেগুলোকে আবার একটু পুনর্গঠনের চেষ্টা করা, সে কাজগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ল্য অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন নিয়ে অনেকেই খুব নেগেটিভ কথা বলছেন। কিন্তু আমি মনে করি যে, সেখানেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্রবলেম আছে অনেক। সেই সঙ্গে জুডিশিয়ারিতে উন্নতি হয়েছে। সংস্কার কর্মসূচিগুলো এগিয়ে চলেছে বেশ সময় মতো, টার্গেট ঠিক রেখেই। সুতরাং খুব একটা সমস্যা আমি দেখছি না। পলিটিক্যাল ইস্যুতে তর্ক-বিতর্ক হবে। গণতান্ত্রিক একটা দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে, কথাবার্তা হবে। এটা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, সবাই যদি আমরা একটু উদ্যোগী হই, আমরা সহযোগিতা করি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চয়ই আগের চেয়ে ইমপ্রুভ করবে। সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা সেটা হচ্ছে, নির্বাচনের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। এরই মধ্যে লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার যে সভা হয়েছে, বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আশা করছি যে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই নির্বাচনটা হলে এবং নির্বাচন ট্র্যাকেই যখন দেশ উঠবে, তখন দেশ অনেকটা গতি ফিরে পাবে এবং একটা সঠিক পথে এগিয়ে চলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সংস্কার না করে নির্বাচন হলে বিএনপি ফ্যাসিবাদ কায়েম করবে, বিভিন্ন মহলের এমন অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একেবারে ভিত্তিহীন এবং আমার মনে হয় সত্যকে একটু বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা। কারণ কথাটাই হচ্ছে এটা, আমাদের প্রধান উপদেষ্টাই বলেছিলেন, যখন প্রথম যে মিটিংয়ে আসছিলাম, আমরা সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে একমত হওয়ার চেষ্টা করব। সব বিষয়ে যে একমত হবে, তা তো হবে না। কারো মতভেদ থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। তো যেগুলোতে একমত হব, সেগুলো আমরা ইমপ্লিমেন্ট করব। আর যেগুলোতে একমত হব না, সেটা আমরা সামনের পার্লামেন্টের জন্য রেখে দেব। পার্লামেন্টে সেগুলো আমরা জনগণের সামনে নিয়ে যাব। মূল বিষয়টি হচ্ছে জনগণ। যেকোনো রিফর্ম বলুন, যেকোনো পরিবর্তন বলুন-এটা করতে হলে বিশেষ করে সংবিধানের ক্ষেত্রে আপনাকে জনগণের মতামতটা অত্যন্ত জরুরি। সেটার একমাত্র পথ হচ্ছে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যে পার্লামেন্ট আসবে, সে পার্লামেন্ট দ্বারা যখন সেটা ইমপ্লিমেন্টেড হবে তখন।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন