ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই শহীদরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে জাতিকে ঋণে আবদ্ধ করে গিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে চিরঋণী।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ’ দিবস জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় ও বেদনাবিধুর দিন। এ দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করি সেই সব শহীদ ভাই-বোনদের, যারা বৈষম্য, জুলুম-নির্যাতন ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের প্রতি এবং নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কৃতিছাত্র আবু সাঈদ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পুলিশের সামনে বুক পেতে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। এ সময় শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ গুলি করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আবু সাঈদের শাহাদাত বরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
তিনি বলেন, এ গণআন্দোলন ছিল একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, তরুণ-তরুণী, নাগরিক সমাজ ও সর্বস্তরের পেশাজীবীরা একই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। একপর্যায়ে ছাত্রদের এ আন্দোলন ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের এক দফার গণআন্দোলনে পরিণত হয়।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে উন্মাদ শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দেয়। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালিয়ে প্রায় দুই হাজার মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে গুরুতরভাবে আহত করে। কয়েক হাজার মানুষ হাত-পা-চোখ হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন।
একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা একনায়ক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। শেখ হাসিনাসহ তার দলের উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপি ভারতে পালিয়ে যায়। দেশের জনগণ খুনি শেখ হাসিনা ও তার বিদেশি প্রভু আধিপাত্যবাদীদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। দেশের জনগণ মুক্ত-স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বিঘ্নে তৎপরতা চালাতে পারছে। এ সবই জুলাই গণআন্দোলনের ফসল, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই শহীদরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে জাতিকে ঋণে আবদ্ধ করে গিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে চিরঋণী। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই, শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, ন্যায়-ইনসাফপূর্ণ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামীকাল ১৬ জুলাই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে মহান ‘জুলাই শহীদ দিবস’ যাথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সব শাখা ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
টিএ/এসআই