ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০০ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

নির্বাচনের তৃতীয় পদ্ধতি প্রস্তাব করল খেলাফত মজলিস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৪, জুলাই ২৫, ২০২৫
নির্বাচনের তৃতীয় পদ্ধতি প্রস্তাব করল খেলাফত মজলিস বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। ছবি: বাংলানিউজ

দেশে বর্তমানে কার্যকর রয়েছে এফপিটিপি (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) পদ্ধতির নির্বাচন। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহল, রাজনৈতিক দল ও পক্ষ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলেছে।

আসন্ন নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তৃতীয় একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে, যা এমএমপিআর (মিক্সড মেম্বার সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি বলা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

এসময় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেন, এমএমপিআর পদ্ধতিতে জনমতের সঠিক প্রতিফলন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভোটারের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সমাধান দিয়েছে ইসলাম। সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক বন্দোবস্তও দিয়েছে ইসলাম। ইসলামে শাসক নির্বাচনের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে সব ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। ইসলামী ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় এখন বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনকে মন্দের ভালো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানারকম নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে কার্যকর রয়েছে এফপিটিপি পদ্ধতি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক দল এবং পক্ষসমূহ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি তুলেছে। উভয় পদ্ধতির নানারকম দুর্বলতা ও আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণমানুষের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তৃতীয় একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে, যা এমএমপিআর পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে।

প্রস্তাবিত পদ্ধতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে চলমান এফপিটিপি পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে নির্বাচন হবে এবং প্রতি আসনের বিপরীতে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি সরাসরি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। এরপর পিআর পদ্ধতিতে দলীয় প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের হিসাব করা হবে। প্রত্যেক দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুপাতের সঙ্গে দলের সাকুল্যে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত তুলনা করা হবে এবং যেসব দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে পর্যাপ্ত সংসদীয় আসন পায়নি, সেসব দলকে পিআর পদ্ধতিতে অতিরিক্ত আসন দিয়ে তাদের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটপ্রাপ্ত দল সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাবে।

এতে সংসদীয় আসন সংখ্যা আগে থেকে চূড়ান্ত থাকবে না। ৩০০ আসনকে ভিত্তি ধরে সব অনুপাত নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো দল যদি ৫০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১৫০ আসন পাওয়ার কথা। তারা যদি সেই পরিমাণ আসন না পায়, তাহলে সেই দলকে পিআর পদ্ধতিতে আসন দিয়ে ১৫০ আসন নিশ্চিত করা হবে। আবার কোনো দল যদি ৫ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১৫টি আসন পাওয়ার কথা। তারা যদি ১৫টি আসন না পেয়ে থাকে, তাহলে পিআর পদ্ধতিতে তাদের ১৫ আসন নিশ্চিত করা হবে।

খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার তিনটি উল্লেখিত পদ্ধতির মধ্যে এমএমপিআর তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হতে পারে। এতে জনমতের সঠিক প্রতিফলন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভোটারের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

তিনটি পদ্ধতির পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় বৈঠকে।

১. এফপিটিপি
ব্যাখ্যা: প্রতিটি আসনে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, সে-ই জয়ী হয়।

সুবিধা: সহজ ও দ্রুত ফলাফল। স্থিতিশীল সরকার গঠন সহজ (বেশি আসন পাওয়া দলই সরকার গঠন করে)। স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব জোরদার হয়।

অসুবিধা: ভোট ও আসনের অনুপাতে অমিল (একটি দল ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬০ শতাংশ আসন পেতে পারে)। ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কম। বহু ভোট ‘ব্যর্থ’ হয় (যারা জয়ী না, তাদের ভোট বাদ পড়ে)।

২. পিআর
ব্যাখ্যা: ভোটের শতকরা হারে দলগুলো আসন পায়।

সুবিধা: ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে। সংখ্যালঘু ও ছোট দলগুলোও সুযোগ পায়। ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক।

অসুবিধা: অনেক দল সরকার গঠনে অংশ নেয়, যা কখনো অস্থিরতা তৈরি করে। স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব দুর্বল। জনগণ কেবল দল বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়, নির্দিষ্ট প্রার্থী নয়।

৩. এমএমপিআর
ব্যাখ্যা: একাংশ এফপিটিপি (স্থানীয় প্রার্থী) এবং একাংশ পিআর (দলভিত্তিক)।

সুবিধা: স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব বজায় থাকে (এফপিটিপি অংশ)। ভোটের ন্যায্য প্রতিফলন ঘটে (পিআর অংশ)। ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। অধিকাংশ ভোট ‘ব্যর্থ’ হয় না, বরং প্রায় সব ভোটই কার্যকর। জনগণের পছন্দ আরও বেশি প্রতিফলিত হয়।

অসুবিধা: কখনো সরকার গঠনে সময় লাগে, বিশেষ করে যদি জোটের প্রয়োজন হয়।

আল্লামা মামুনুল হক বলেন, নিউজিল্যান্ড, জার্মানিসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এমএমপিআর পদ্ধতির নির্বাচন প্রচলিত আছে। আমরা মনে করি, গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের স্থিতিশীলতা বিবেচনায় অন্য দুই পদ্ধতির তুলনায় এমএমপিআর পদ্ধতি উত্তম এবং চলমান বিতর্ক নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এমএমপিআর পদ্ধতির অসুবিধার দিকও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দুটি পদ্ধতির চেয়ে অনেক কম। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এমএমপিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

আল্লামা মামুনুল হকের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।

ডিএইচবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।