ঢাকা, শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

শোষণমুক্ত দেশ গড়তে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০২, আগস্ট ১, ২০২৫
শোষণমুক্ত দেশ গড়তে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে শুক্রবার ‘জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা ও ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, বিচার ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ জন্ম নেবে না। আর এ জন্যই জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে।

আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসররা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে, যারা নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা এবং ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি। মানুষের ওপর মানুষের গোলামি খতম করে আল্লাহর গোলামি কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয়বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাস করতে হবে। মানুষের রচিত কোনো মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না। এজন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে।
 
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এই জাতীয় সেমিনারে ‘জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এতে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মো. আব্দুর রব ও মোবারক হোসাইন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এম. এ আজিজ হাওলাদার, সহ-সভাপতি জাফর ইকবাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক খান আসাদ, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাইযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

সেমিনার যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যারা জীবন দান করে তারা শহীদ। আল্লাহ তায়ালা শহীদদের বিরাট পুরস্কারে ভূষিত করবেন। গত বছর জুলাই-আগস্টে যারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছেন তারা সবাই শহীদ। শহীদ ও আহতদের সর্বোত্তম পুরস্কার দেয়ার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করবো।  

আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

‘লক্ষ লক্ষ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে আ.লীগ’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ১৯৭১ সালের পর স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে আওয়ামী লীগ জাতির ওপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট চালিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। আবার ’৯০ সালের গণঅভুত্থানের পরে আরেকটি দল ক্ষমতায় এসে লুটপাট, চাঁদাবাজি করেছে। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। তাই এবার আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লুটপাট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি।  

তিনি বলেন, ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা-না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

‘ফ্যাসিস্টের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে, বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চালাচ্ছে’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসররা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে, যারা নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকারীদের বেশিরভাগ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, দলীয়করণ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, বিচার ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ জন্ম নেবে না।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। জুলাইয়ের অর্জনকে টেকসই করতে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য জরুরি।

জুলাই সনদ ও ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, একইসঙ্গে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

‘জামায়াত-শিবির ও মসজিদের ইমামদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী শহীদদের তালিকা করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদের জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির ও মসজিদের ইমামদেরকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হয়েছে। দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হলে তাতে তাদের সমস্যা কী? দক্ষিণপন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।  

এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে নাসীরুদ্দীন সবার প্রতি আহ্বান জানান।

জুলাই শহীদরা কোনো দলের নয়, গোটা জাতির গর্ব
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই শহীদরা কোনো দলের নয়। তারা গোটা জাতির গর্ব। কাজেই শহীদ পরিবারের লোকদেরকে চাকরি দেওয়া, আহতদের প্রতিষ্ঠিত করা সরকারের দায়িত্ব।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাইয়ের গণহত্যা, বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা অফিসারদের হত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাসহ হাসিনার আমলে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই।  

টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।