বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের মানুষের মনোজগতে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে। যেসব রাজনৈতিক দল জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারবে না, তাদের বাংলাদেশে কোন ভবিষ্যৎ নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশের জনগণের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা জেগেছে, যে রাজনীতিক দল সেটা বুঝতে পারবে না। অনুধাবন করতে পারবে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামীতে তাদের কোন জায়গা থাকবে না। নতুন বাংলাদেশে মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশার জায়গাটা অন্য জায়গায় চলে গেছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিস্ট আমলে গণমাধ্যম, বর্তমান অবস্থা: জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান স্টাডি সার্কেল, যুক্তরাষ্ট্র এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আশিক ইসলাম।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানীর পরিচালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জিয়াউর রহমান স্টাডি সার্কেল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ কাসেম। এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক জিএম রাজিব হোসেন প্রমুখ।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা রেজিমের আমলে গণমাধ্যম বন্ধসহ যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো ঘটারই কথা। আমি কিন্তু মোটেও আশ্চর্য হইনি ঘটনাগুলো জন্য, কারণ জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করলে এ ধরনের ঘটনা না ঘটলে হাসিনা রেজিম ক্ষমতায় থাকতে পারতো না। এটা সম্ভবই ছিল না। ফলে এ ঘটনাগুলো তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বাভাবিক ছিল। স্বৈরাচার টিকে থাকতে হলে গণমাধ্যমের অধিকার কেড়ে নিয়েই তাদের টিকে থাকতে হয়।
আমির খসরু অভিযোগ করে বলেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সাংবাদিকতা শুধু নয়, যারা সত্যিকার অর্থে ব্যবসা করতে চেয়েছিল তারা ঠিকমত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেনি। ব্যবসা ছিল লুটপাটের ব্যবসা। এজন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ ছিল না। একইভাবে সাংবাদিকতার বেলায়ও তাই হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। রাজনীতিকে শুধু গণতন্ত্রায়ণ করলে চলবে না, অর্থনীতিকেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। মিডিয়াকেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। গণতন্ত্র শুধু ভোট দিয়ে সরকার গঠন করলেই হবে না। প্রত্যেকটি জায়গায় গণতন্ত্রের প্রতিফলন যদি ঘটাতে না পারেন তাহলে গণতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করবে না। অর্থনীতিকে যদি গণতন্ত্রায়ণ করতে না পারেন, সাধারণ মানুষ যদি অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে আপনার রাজনীতি সফল হবে না। সাংবাদিকরা যদি মুক্তভাবে তাদের কাজ করতে না পারে তাহলে গণতন্ত্র প্রতিফলিত হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও গণমাধ্যমের এখনকার অবস্থাটা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। গণমাধ্যম প্রধানত বিজ্ঞাপনের ওপর চলে। মানুষের অথনৈতিক অবস্থা, সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ভালো না হয়, তাহলে বিজ্ঞাপনই থাকবে না। কোনো গণমাধ্যমের অবস্থাই ভালো না। ছোটো কাগজগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কাগজেই চার থেকে পাঁচ মাস ধরে সাংবাদিকদের বেতন নেই। বড় বড় কাগজ এবং বড় বড় টেলিভিশনগুলোই এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এখন একমাত্র পেশা হিসেবে এই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের পেশা- যেখানে হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি ছাড়া ৮০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি সংখ্যক সাংবাদিকই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে নেই। যেটা বিভূরঞ্জনের মৃত্যুতে আমরা দেখলাম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে আশিক ইসলাম বলেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের অধীনে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৪৩৬টি মামলা হয় এবং কমপক্ষে চার হাজার ৫২০ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া এ আইনে ওই পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৪৫১ জন সাংবাদিকের নামে মামলা হয়।
অভিযুক্ত ৪৫১ জনের মধ্যে ২০৯ জন সাংবাদিক জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত এবং ১৯৭ জন স্থানীয় সাংবাদিক। অন্তত ৯৭ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৫০ জন স্থানীয় সাংবাদিক।
এএটি