বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিশ্ব এখন সেমিকন্ডাক্টর নির্ভর। তাইওয়ানে যদি যুদ্ধ হয়, গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি থেমে যাবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সব খাত নিয়েই আমরা কথা বলি, কিন্তু সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কেউ ভাবি না। এটা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, যা বন্ধ হয়ে গেলে পুরো অর্থনীতি থেমে যাবে। বাংলাদেশে এই খাতে মানবসম্পদ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর আইইবি মিলনায়তনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক উন্নত বাংলাদেশ বির্নিমাণে প্রকৌশলীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের শিখিয়েছেন উৎপাদনমুখী শিক্ষা ও উৎপাদনমুখী রাজনীতির কথা। যখন সেখানে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন যুক্ত হবে তখনই রাজনীতি উৎপাদনমুখী হবে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। বক্তৃতা, শোষণ ও প্রতারণার রাজনীতির যুগ শেষ। এখন মানুষ জানতে চায়, রাজনীতিবিদরা তাদের জন্য কী করছেন। প্রযুক্তিনির্ভর, মেধানির্ভর রাজনীতির দিকেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে, দেশের নির্মাণগুলো স্থায়ী হয় না কেন? এই পারসেপশন পাল্টাতে হবে। একই বাজেটে তিনগুণ কাজ করা সম্ভব, যদি সততা ও দক্ষতা থাকে।
শ্বেতপত্রের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে শেখ হাসিনার আমলে সময় ও ব্যয় সাত গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে এখন পাঁচ লাখ কোটি টাকার নন-পারফর্মিং অ্যাসেট। এই অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা গরিব রাষ্ট্র ছিলাম না, আমাদের এই তস্কর সম্প্রদায় গরিব রাষ্ট্র বানিয়েছে। ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করলে উন্নয়ন ও সুশাসনই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার একটি বক্তব্যকে অপব্যাখা করা হয়েছে। এবং একটি দল আমাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি দৃঢ়ভাবে জানান যে, তিনি কখনই জুলাইযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার দায়ারোপ করেননি। বরং বিশ্বাস করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি এই ধরনের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ছিল না। বর্তমান সময়ে অপতত্ত্ব ও অপব্যাখ্যা ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। যেকোনো অপব্যাখ্যা হলে সেটি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য রাজনীতি শেখা ও অভিজ্ঞতা অর্জনে করতে হবে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের স্বাক্ষর একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। আমরা চাই, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে জ্ঞাননির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গুড পলিটিক্স রিপ্লেস দ্য ব্যাড পলিটিক্স—এই নীতিতেই আমরা এগোবো।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখলে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।
আলোচনা সভায় অ্যাবের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শাহরীন ইসলাম তুহিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি আইইবির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং অ্যাবের প্রধান উপদেষ্টা প্রকৌশলী এ. এন. এইচ আখতার হোসেন পিইন্জ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রকৌশলী খালিদ হাসান চৌধুরী পাহিন, অ্যাবের উপদেষ্টামণ্ডীর সদস্য প্রকৌশলী সফিউল আলম তালুকদার সবুজসহ আরো অনেকে।
ডিএইচবি/এএটি