ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হলের সংঘর্ষে ৪০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় বাইরের কারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ঘটনার সময় বহিরাগতদেরও দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্রদের থামানোর চেষ্টা করছিলাম তখন হেলমেট পড়া ও মুখে মাফলার বাঁধা কয়েকজনকে দেখেছি। এরা কারা তাদের পরিচয় জানা দরকার।
ব্যাপারটিকে সন্দেহজনক উল্লেখ করে অধ্যাপক ফারুক বলেন, আমার কাছে মনে হয় এ ঘটনায় বাইরের কারও ইন্ধন ছিল। তা না হলে ঘটনাটা এতদূর পর্যন্ত গড়াতো না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রয়েছে এটা অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। যাদের পছন্দ হচ্ছে না তাদেরও কেউ কেউ এতে অংশ নিয়েছে বলে আমার ধারণা।
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কবি জমীম উদ্দীন হল ও জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই হলের অন্তত ৪০ জন আহত হয়।
এদিকে, ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ ও কবি জসীম উদ্দীন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রহমত উল্ল্যাহ অবশ্য অধ্যাপক ফারুকের সঙ্গে একমত হতে পারেননি।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে তাকে অস্থিতিশীল করার জন্য তৃতীয় পক্ষ সব সময়ই তৎপর থাকে। তবে বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় যারা হেলমেট পরা ছিল তাদের কয়েকজনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা বাইরের কেউনা। তারা ইট-পাটকেল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হেলমেট পড়েছিল। তাদের অনেকে শিক্ষার্থীদের থামাতে চেষ্টা করছিল বলেও জানান প্রক্টর।
বাইরের কারো সম্পৃক্ততাকে একেবারেই উড়িয়ে দিয়ে জসীম উদ্দীন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, ঘটনাটি তেমন কোনো কারণ ছাড়া, এমনিতেই ঘটেছে। সংঘর্ষ যখন শুরু হয় তখন বিষয়টি তারুণ্যের ইগোর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, তাই তাদের আর থামানো যায়নি।
বাইরের কারও ইন্ধন সম্বন্ধে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, বাইরের কেউ ছিল কি না তা আমরা নিশ্চিত না। ওই দুই হলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
এদিকে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সোয়া ঘণ্টা পর পুলিশ আসার ফলে আহতের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন দুই হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ পুলিশ যদি সময়মত আসতো তাহলে ঘটনা এতদূর গড়াতো না। আহতদের সংখ্যাও কম হতো।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল অবরোধ থাকায় বেশির ভাগ পুলিশই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তাদের একত্রিত করে নিয়ে আসতে স্বভাবতই সময় একটু বেশি লেগেছে।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় জসীম উদ্দীন ও জিয়া হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট দু’টি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন ওই দুই হলের প্রভোস্ট।
জসীম উদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষক মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে তিনদিনের মধ্যে। জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক মাহফুজুল হক সুপনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা একদিনের মধ্যে।
তদন্ত কমিটির কাজ কি হবে জানতে চাইলে জসীম উদ্দীন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেন, তদন্ত কমিটি দেখবে ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কারা জড়িত ছিল। কর্মচারী বা গেটের নিরাপত্তায় যারা ছিল তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আহতদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে দুই হলের আহতদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫