ময়মনসিংহ: সোমবার দিন বেশ ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে হরতাল ঘোষণা করেছিলো ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপি। কিন্তু হরতালের দিনে মাঠে না নেমে ঘরে বসে সময় পার করেছেন দলটির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা।
কোন কোন নেতা আবার এ হরতালের সময় ছিলেন রাজধানী অথবা বিদেশে। মাঠে নেমে আন্দোলন করে কারাবরণে মোটেও আগ্রহ ছিলো না এসব নেতাদের।
দলীয় চেয়ারপার্সনকে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যুতে ডাকা হরতালে জেলা শীর্ষ নেতাদের এমন নিষ্ক্রিয়তার ময়না তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন দলটির তৃণমূলের কর্মীরা।
শুধুমাত্র মিডিয়া ফোকাস ও কেন্দ্রীয় নেতাদের গুডবুকে থাকতেই দলটির নেতারা ‘হরতাল হরতাল নাটক’ শেষে ঠিকই পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছেন, এমন হাস্যরসও চলছে রাজনীতির অন্দর-বাহিরে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে হরতাল সমর্থনে ময়মনসিংহ শহরের আঠারবাড়ি বিল্ডিং মোড় এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা লিটন আকন্দের নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল করে শহর ও কোতোয়ালী যুবদল। এরপর আর কোথাও দলীয় নেতা-কর্মীদের হরতাল তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খুররম খান চৌধুরী মোবাইল ফোনে অনেকটা গরম হয়েই বলে উঠলেন ‘ মাঠে নেই লিখেন, এতে আমার পদ যাবে না’।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদে এসে কমিটি বাণিজ্যের ঘটনায় চরমভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন ওয়ান ইলেভেনে সরকারের সময় ‘সংস্কারপন্থি’ তকমা পাওয়া খুররম খান চৌধুরী।
দলের কঠিন দুঃসময়েও ৫ জানুয়ারির আন্দোলন থেকে মঙ্গলবারের স্থানীয় বিএনপি’র ডাকা হরতাল-একদিনের জন্যও মাঠে নামেননি এই ‘খ্যাতিমান’ নেতা। সব সময়ের মতো এখনো রাজধানীর ঢাকার বাসাতেই আছেন তিনি।
শুধু খুররম খান চৌধুরীই নয় তার মত মাঠে নামেননি ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারও। একই অবস্থা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আফজাল এইচ খানেরও।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন একই সঙ্গে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসন থেকে দলীয় মনোনয়নও পান সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী।
সোমবার হরতাল ডাকার সংবাদ সম্মেলনে তার সগৌরব উপস্থিতি লক্ষণীয় হলেও মঙ্গলবার হরতালের সময় মাঠে নামেননি তিনিও।
তাদের পথ অনুসরণ করে শহর বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, কোতোয়ালী বিএনপি’র সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ ওয়ালিদও একইভাবে অনুপস্থিত ছিলেন মাঠে।
বিশেষ করে সদরের হাইভোল্টেজ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করা কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ দলীয় দু’একটি কর্মসূচিতে আসলেও বেশিরভাগ সময়ে তার নিষ্ক্রিয়তা দলীয় পরিমণ্ডলেই সৃষ্টি করেছে আলোচনা-সমালোচনার।
এছাড়া ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ সুযোগ বুঝে দলের দুঃসময়ে বিদেশে কেটে পড়েছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও দীর্ঘদিন যাবত তিনি নিষ্ক্রিয়। অবরোধ কী হরতাল কোন কিছুতেই তাকে কাছে পায় না দলের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় নেতা-কর্মীরা আরো জানান, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া শিল্পপতি জাকির হোসেন বাবলু, ত্রিশাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র একাংশের সভাপতি শাহ নুরুল কবির শাহীন, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ফুলপুরের শাহ শহীদ সারোয়ার, গফরগাঁওয়ের দু’ভাই সুলতান ও সিদ্দিক, ভালুকার ফখরুদ্দিন বাচ্চু ও মোর্শেদ চেয়ারম্যানকেও হরতালে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলেন, ম্যাডামকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গোটা দেশে আন্দোলন গতি পেয়েছে। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এখানে আন্দোলন গতিহীন। এসব নেতাদের আর হুঁশ ফিরবে, কবে প্রশ্ন রাখেন মাঠ পর্যায়ের এক নেতা।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ণ হরতাল হচ্ছে। প্রত্যেক নেতাই নিজের এলাকায় অবস্থান নিয়ে আছেন। ’
হরতাল ডেকে নেতাদের মাঠ ছাড়ার বিষয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ‘হরতালে নেতারা শুধু পুলিশের দৃষ্টি সীমার বাইরে আছেন। হরতালের আগের দিন শহরের ২১ টি ওয়ার্ডেই বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মঙ্গলবারও খণ্ড খণ্ড মিছিল হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের মাঠে না থাকাকে তিনি কৌশল হিসেবে দাবি করেন।
তবে বিপরীত চিত্র দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র অন্যতম সদস্য শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হকের নাতি জামাই আখতারুল আলম ফারুকের বেলায়।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে তার এমন দাবি সূত্রের।
বাংলাদেশ সময়:১৬৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫