ঢাকা: বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যে এখন বর্বর, নিপীড়ক, দমন-পীড়ণ, হত্যা, গুম, খুন ও যৌথ বাহিনীর নিষ্ঠুর অপারেশনের প্রতিষ্ঠান তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা যথার্থভাবেই সকলকে টের পাওয়াচ্ছেন।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা রিজভী এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, একেকদিন একেকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শুনলে মনে হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র যেন আওয়ামী লীগের তহবিল থেকে কেনা। সুতরাং এই অস্ত্র ব্যবহারে কোনো জবাবদিহিতার দরকার নেই বলে তারা মনে করেন।
কারণ আওয়ামী লীগপন্থি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানরা ছাড়পত্র দিয়েছেন তাদের জোওয়ানদের। অস্ত্র গোলাবারুদ কেনো অকেজো করে রাখা হয়েছে তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ৠাবের ডিজি। কেন অস্ত্রসস্ত্র খেলার উপকরণ হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে, কেন যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছেনা সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
র্যাবের মহাপরিচালক আরো বলেছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যা বলে নাকি কিছু নাই।
রিজভী আহমেদ বলেন, তাহলে খিলগাঁও ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে কোন বিচারের আওতায় প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে? কোন আদালতের রায়ে সাত মাসের অন্ত:সন্ত্বা স্ত্রীর স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়? সপ্তাহ খানেক আগে দলের চারজন কর্মীকে ধরে নিয়ে গিয়ে টার্গেট হত্যা করা হয় কোন বিচারে?
রোববার খুলনায় র্যাবের মহাপরিচালকের দেয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দর্শন, চিন্তা, নীতি ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দমন করার জন্যই এই বিচার বহির্ভূত টার্গেট হত্যা করা হয় জনগণের টাকায় কেনা বুলেট দিয়ে।
রিজভী আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, এগুলো যদি বিচার বহির্ভূত হত্যা না হয় তাহলে এগুলো কোন বিচারের অন্তর্ভুক্ত তা দেশবাসী জানতে চায়।
রিজভী আহমেদ বলেন, খাল বিল, নদী নালায় এতো লাশ পড়ে আছে কার বিচারে? আজকেও নরসিংদীর তিন কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে সাতটি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো কিসের আলামত? দু:শাসন টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র এখন ভয়াল ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারহীন একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের দলের আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেখানে নিরপেক্ষতার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন করা যায়না। বাংলাদেশে চোখের ইশারাও যদি কাউকে সরকারবিরোধী মনে হয় তাহলে তাকে নিপীড়ণের শিকার হতে হবে, সেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজমান।
তিনি বলেন, অমানবিক নাশকতার বিভৎস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে সারাদেশ জুড়ে। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে দগ্ধ করার বিরামহীন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে। বার্ন ইউনিটের অমানবিক দৃশ্যকে কেন্দ্র করে হাইপার প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের আন্দোলনের বিরুদ্ধে। কয়েকদিন ধরেই জনশ্রুতি ছিল, সরকার নিজেই একটা বড় ধরনের নাশকতা করবে। যাতে পুরো দায়টা বিরোধী দলের ওপর চাপানো যায়।
৩ তারিখ রাতেই ডেমরায় বাসে আগুন দিয়ে ৩৫ জন আরোহীকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো। আর তার পরের দিন শোকে কাতর সন্তানহারা মা খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা দেয়া হলো। সমগ্র ঘটনাটাই একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলে সর্বসাধারণ বিশ্বাস করে।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পেট্রোল বোমা, গান পাউডার, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পোড়ানো, লগী বৈঠার তাণ্ডবে লাশের ওপর নৃত্য ইত্যাদি সর্বনাশা মরণখেলা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সুতরাং এই সমস্ত নাশকতাকারীদের পৃষ্ঠপোষকরাই জানে কিভাবে নিজেদের স্বার্থে অমানবিক ঘটনা ঘটাতে হয়, তার প্রমান হলো- বিএনপি’র শাসনামলে হোটেল শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে নয়জনকে পুড়িয়ে মারা এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আকরামকে হত্যা করার পর লাশ পোড়ানোর বিভৎস ঘটনা।
রিজভী আহমেদ আবারও দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, আমরা অব্যাহত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপি ঘোষিত নীতিমালাই হচ্ছে বহু দল ও মতে বিশ্বাস করা, মানবতা ও মানুষের মানবিক সাম্য উর্দ্ধে তুলে ধরা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম আর গুপ্তহত্যা যাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নাশকতার মতো বন্য ও আদিম হিংস্রতার মানবতাবিরোধী কাজ তারাই সংঘটিত করছে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৫