রাজশাহী: এক সময় রাজশাহীকে বলা হতো বিএনপির ‘দূর্গ’। চিরচেনা রাজশাহী শহর এখনও বহাল।
রাজশাহীতে সবার আগে গা ঢাকা দেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও নগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু। এখন নিজের ফোনটিও রেখেছেন বন্ধ। আত্মগোপনে চলে গেছেন নগর সম্পাদক শফিকুল হক মিলনও। গ্রেফতার হয়েছেন জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফা। চোখের আড়ালে আছেন সাধারণ সম্পাদক কামরুল মনির। নিজের ফোন রেখেছেন বন্ধ। অন্য কোনো নম্বর থেকেও যোগাযোগ রাখছেন না কর্মীদের সঙ্গে। মাঠে আন্দোলন কীভাবে চলবে তারও কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না কর্মীরা। ফলে গায়েবানা নেতৃত্বে চলছে প্রাণহীন হরতাল-অবরোধ। কেন্দ্র থেকে সামান্য মিছিলের ঘোষণা দিলেও তা পালন হচ্ছে না তৃণমূল রাজনীতির মাঠে।
রাজশাহী মহানগর শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতে মিছিল-সমাবেশ করে কয়েকদিন মাঠ গরম রাখছিলেন যুবদল নেতা ও রাজশাহী সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতার একাধিক মামলায় আসামি হয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন তিনি।
আর রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাকে জেলখানায় দেখতে গিয়ে ফেরার পথে গ্রেফতার হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত। নাদিম মোস্তফার অনুপস্থিতিতে তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত সমাপ্তই নেতাকর্মীদের একট্টা করে কর্মসূচি পালন করছিলেন। কিন্তু তার গ্রেফতারের পর জেলার অন্য নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় ২০ দলের অবরোধ ও হরতালসহ সকল কর্মসূচিই এখন স্থবির।
এ অবস্থায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ আসে গত ২ মার্চ। জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এ নির্দেশের কথা জানান। কিন্তু তিমিরেই থেকে গেছে খালেদার নির্দেশ। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের জন্য নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৫ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধের বুধবার ৬৪তম দিন। এর মাঝে মাঝে আবার হরতাল। আন্দোলনের প্রথম দিকে নাশকতার ভয়ে সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হলেও নগরে এখন আর কেউ আন্দোলন মানছে না। বিএনপি কর্মীরাও হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফোন করেও আত্মগোপনে থাকা নেতাদের না পেয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মীরা। দলের কার্যক্রম তো দূরের কথা, নিজেরা কীভাবে ঝামেলা থেকে বাঁচবেন তা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন সবাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, বিএনপি নেতারা নিজেরা বাঁচতে কর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কোথায় আন্দোলন করব, কোথায় মিছিল শুরু করব, কোথায় শেষ করব-এ বিষয়ে নেতাদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাচ্ছি না।
বিএনপির আরেক কর্মী অভিযোগ করে বলেন, নেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে কর্মীদের মনে আরও বেশি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যেখানে নেতরা-ই মাঠে নেই, সেখানে মাঠে নেমে বিপদ ডেকে আনার কোনো মানেই হয় না। আর এ ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশ মানার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।
এদিকে, মনের ক্ষোভে রাজশাহী জেলা বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান মার্কনী সম্প্রতি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘লাইফ সাপোর্টে রাজশাহী যুবদল’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন- ‘লাইফ সাপোর্টে রাজশাহী জেলা যুবদল। হিমাগারে মহানগর যুবদল। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় জেলা যুবদলের ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২১ জনের ৮ জন মাদকসেবী। যুবদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক এমনই মাদকাসক্ত, কথা বলতে গিয়ে তিনি কাঁপতে থাকেন। কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক একেএম শফিউল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি। বর্তমানে ভারতে রয়েছেন এই পলাতক আহ্বায়ক। রাজশাহী জেলার ৯ থানা এবং ১৪ পৌরসভার কোনো ইউনিট তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। থানা ও উপজেলায় রয়েছে একাধিক কমিটি। পবা উপজেলায় রয়েছে তিনটি কমিটি। এই কমিটির কারও মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই।
তিনি আরও লিখেছেন- ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দু’জনেই যুবদল নেতা ছিলেন। ২০০৪ সালে জেলার ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ২৮ জনই ছিলেন যুবদল নেতা। সেই যুবদল এখন মৃতপ্রায়। নেতৃত্বের অভাবে মাঠে নামতে পারছে না। ২০১৪ সালে নতুন কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় মিনু এবং বুলবুলের মাঝে। কেন্দ্র থেকে সেই কমিটি স্থগিত করা হয়। পুরাতন কমিটি আবার সচল হবে কি না, তা সে সময় বলা হয়নি। যুবদলের প্রচুর কর্মী আছে, কিন্তু নেতাদের যোগাযোগ নেই। ’
প্রসঙ্গত, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুকে গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশ্যে রাজপথে দেখা গেছে। বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়েও দেখা গেছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১০ জানুয়ারি ভুবনমোহন পার্কের সমাবেশ থেকে ঢাকাকে অচল করতে ট্রাক আটকে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই রাতেই মিনু ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। এরপর মিনুকে আর দেখা যায়নি কোন কর্মসূচিতে। তিনি চলে যান আত্মগোপনে। মিলনও রয়েছেন কর্মসূচির বাইরে। এছাড়া সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি নগরের ভদ্রায় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আসামি করার পর আত্মগোপনে চলে যান সিটি মেয়র যুবদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫
** খালেদার নি্র্দেশ বাস্তবায়নে দায়সারাভাব খুলনায়!
** খালেদার নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামে