ঢাকা, বুধবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

নীরব তারেক, থেমে গেছে ‘ইতিহাসের পাঠদান’

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২৯, মার্চ ১৪, ২০১৫
নীরব তারেক, থেমে গেছে ‘ইতিহাসের পাঠদান’ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: লন্ডনে অনেকটাই নীরব হয়ে গেছেন তারেক রহমান। থেমেছে তার `ইতিহাসের পাঠদান’।

রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে যখন তখন দলীয় কর্মসূচির নামে দেশের সরকারবিরোধী, ইতিহাস ঐতিহ্য-চেতনাবিরোধী যেসব কথাবার্তা সারাক্ষণই বলতেন বিএনপি’র এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, তা এখন আপাতত বন্ধ।  

ধারণা করা হচ্ছে, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক আসামি বলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করা যাবে না মর্মে দেশের সংবাদমাধ্যমকে উচ্চ আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ বন্ধ আছে তারেক রহমানের।

লন্ডনে দলীয় নেতাদের বক্তব্যেও পাওয়া যাচ্ছে তারই আভাস। তারাও ধারণা করছেন, দেশের সংবাদমাধ্যমে যদি তার কথা প্রকাশ নাই হয়তো কি ফায়দা।

যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করে দিন কয়েক আগেও নির্বিচারে ‘ইতিহাসের পাঠদান’ করে যাচ্ছিলেন তারেক রহমান।   ঘন ঘন সমাবেশ ডেকে নিজের মত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, জাতির জনকের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া কথা বলতেন তিনি। কিন্তু লন্ডনে দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও এখন আর উপস্থিতি নেই বললেই চলে তারেক রহমানের।

সবশেষ কুইন্স মেরি ইউনিভার্সিটির লেকচার থিয়েটারে সদ্যপ্রয়াত ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোস্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায় সস্ত্রীক উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেদিনও কোনো বক্তব্য রাখেননি।

’সিটিজেন্স কন্ডোলেন্স’ নাম দিয়ে আয়োজিত ওই শোকসভায় তারেক রহমান বক্তব্য রাখবেন, সে প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের ছিলো। কিন্তু কোনও কথাই বলেননি তিনি। এতে অবশ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটু ক্ষোভও সৃষ্টি হয়। তাদের মতে, দেশের রাজনীতি নিয়ে নাহয় না-ই বললেন, ভাইয়ের মৃত্যুতে তাকে নিয়েও তো দুটি কথা বলতে পারতেন তারেক রহমান! দেশে প্রচার না হলেও সেখানকার নেতা-কর্মীরা তো শুনতে পেতেন সেকথা।

ওই দিন দর্শক সারিতে স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে নিয়েই বসেছিলেন তারেক রহমান।

এ সময় অবশ্য ঘটে আরেকটি ঘটনা। ওই কর্মসূচিতে যারা বক্তব্য রেখেছিলেন তাদের মুখে সেদিন তারেক-বন্দনার চেয়ে বেশি বেশি ফুটছিলো জোবাইদা-বন্দনার খই। এতে নতুন আলোচনার খোরাক পেলেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপি রাজনীতিতে জোবাইদাকে সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা হচ্ছে! এমন একটি কথা আগে থেকেই গুঞ্জনে ছিলো। ওই দিন জোবাইদা বন্দনা যেনো সে ভাবনায় ইতিবাচক পেরেকই ঠোকা হলো, বলে মনে করছেন কর্মীরা।
Tarek_jubaida
এর বিচার-বিশ্লেষণও শোনা গেলো তাদের কথাবার্তায়। কারো কারো জিজ্ঞাসা, তারেক কি তাহলে বুঝে গেছেন বাংলাদেশে গিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তার কমে আসছে?

প্রশ্নগুলো ওই বৈঠকের পরেও ঘুরপাক খাচ্ছে লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে।

‘দলীয় কর্মসূচিতে তারেক কেন আর যাচ্ছেন না?’-- যুক্তরাজ্য বিএনপি’র একজন নেতাকে সে প্রশ্ন করা হলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বক্তব্য যদি দেশবাসীর কাছে না-ই পৌঁছালো তাহলে কেন আর বক্তব্য দেওয়া!’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্রিটেনের বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার হলে তাতে দলের তেমন কোনো লাভ নেই। বর্তমান ‘ক্রান্তিকালে’ দলের কর্মীরা তারেক রহমানের কথাই শুনতে চায়, এই কথা যদি তাদের কাছে না পৌঁছানো যায়, তাহলে বক্তব্য দিয়ে লাভ কি!’

তবে এই নীরব হয়ে যাওয়ার আগে প্রায় সব ধরনের দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিতই বক্তব্য রাখছিলেন তারেক রহমান। প্রতিটি বক্তব্যেই তিনি নিজের মত করে মুক্তিযুদ্ধের ‘ইতিহাস রচনা’ করে শোনাতেন নেতাকর্মীদের।

শুধু ইতিহাস পাঠ নয়, এইসব বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দেওয়ার এক খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। এইসব আপত্তিকর মন্তব্যের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, বিশেষ করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতারা যখন তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়তেন, তারেক তখন বঙ্গবন্ধুর চরিত্রহননে আরও নতুন নতুন মনগড়া বক্তব্য নিয়ে আসতেন।

বাংলাদেশ সময় ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।