গুলশান থেকে: ‘স্বামীর খোঁজ পেতে থানায় গিয়েছি জিডি করতে, তারা জিডি নেয়নি। আদালতে তাদের স্টেটমেন্টটিও অসত্য।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের সহধর্মিণী হাসিনা আহমেদ বলেন, আমার স্বামী যদি অপরাধী হন, কোন অপরাধে তাকে আটক করা হয়, তাকে আদালতে হাজির করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি তাকে সুস্থ ও প্রকাশ্য দেখতে চাই।
সোমবার (১৬ মার্চ) রাতে গুলশান-২ এর ৭২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়িটিতে নিজের ফ্ল্যাটে বসে কথাগুলো বলছিলেন হাসিনা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই ছেলে-মেয়ে।
হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আর্জি জানাই। তিনি যেন একটু জোর দিয়ে বলেন, যেন আমার স্বামীকে খুঁজে এনে দেয়। ’
একই কথা তাদের ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাফিদার কণ্ঠে। বাংলানিউজকে রাফিদা বলছিলো, ‘আম্মু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একটু কড়া করে বলে দিলে, আব্বুকে ঠিকই খুঁজে এনে দেবে পুলিশ। ’

গত ১০ মার্চ রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। তবে যেই সময় থেকে তিনি নিখোঁজ বলে পরিবার দাবি করছে তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বিষয়টি গণমাধ্যমে জানাজানি হয়।
শুরু থেকেই পরিবার ও বিএনপির দাবি, তাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা নিয়ে গেছে। তবে কোন বাহিনীই তাকে আটকের দায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্বীকার করেনি।
তবে আগে থেকেই আত্মগোপনে থাকা সালাউদ্দিন আহমেদ আত্মগোপনেই রয়েছেন অথবা বিএনপিই তাকে লুকিয়ে রেখেছে, এমন নানামূখী গুঞ্জনও রয়েছে।
সালাউদ্দিনের স্ত্রী এসব প্রসঙ্গে বলেন, আমার মানসিক অবস্থা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। আমাকে বিব্রত করার জন্য কেউ কেউ এসব কথা জিজ্ঞেস করে। রাজনীতির কথা আমি বলছি না, আমি তার সন্ধান ও নিরাপত্তা চাই। আদালতে নিয়ে আসা হোক তাকে।
হাসিনা আহমেদ বলেন, এক সপ্তাহ হতে চললো। কোন খোঁজ পাইনি আমার স্বামীর। তাকে সুস্থ দেহে আদালতে হাজির করার আর্জি জানাচ্ছি আমি।
হাসিনা জানালেন, স্বামীর সুস্থ প্রত্যাবর্তনের জন্য নিয়মিত রোজা রাখছেন তিনি। কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চার সন্তানকে নিয়ে তাদের পরিবারে এখন অনিশ্চয়তা। কিন্তু খারাপ কিছু তারা ভাবতে চান না।

রাত থেকে সালাউদ্দিনকে পাওয়া যাচ্ছিল না, কিন্তু বিষয়টি একদিন পরে জানানো কারণ নিয়ে জনমনে কৌতুহল রয়েছে। সে প্রসঙ্গে হাসিনা আহমেদ বলেন, আমার স্বামীকে আটকের বিষয়টি আমি তখনো জানতাম না। নিশ্চিত ছিলাম না পরদিন দুপুর পর্যন্ত।
‘প্রতিদিনের মতোই আমার স্বামী ছেলে-মেয়েদের খোঁজ নিলেন রাতে। তাদের খেয়াল রাখতে বললেন। এরপর ১০টা বেজে ৮ মিনিটে তার নম্বর থেকে একটি কল আসে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখনও জানি না আমার জন্য কোন খবর, কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে’- বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিয়মিত হাসিনা আহমেদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলেও জানালেন। তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন খালেদা জিয়ার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন বলেই তাকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন তিনি। ’
হাসিনা বলেন, ‘ম্যাডাম খুবই বিচলিত হয়েছেন। তিনি আইনজীবীদের বলেছেন, আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। সালাউদ্দিনকে অক্ষত ও সুস্থ অবস্থায় সামনে দেখতে চাই। এরজন্য যা যা করা লাগে, সবই করুন আপনারা। ’
স্বামীকে ফেরত পেতে হাসিনা আহমেদ প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বলেও জানালেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, আমার স্বামীকে ফেরত পেতে সব সহযোগিতা তিনি করবেন। যদি তার সঙ্গে দেখা করলে ভালো হয়, আমি ম্যাডামের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। ’
তিনি বলেন, আমার বাচ্চাগুলোর দিকে তাকাতে পারছি না। বাবাকে ফেরত পেতে বড় মেয়ে রোজা রাখছে। আমিও রোজা রেখে রেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

রাফিদা ও ইউসুফ দুজনই বিশ্বাস করে, তাদের বাবা ভালো আছেন।
হাসিনা জানালেন, বড় দুই ছেলে-মেয়ে কিছুক্ষণ পরপর ফোন করে বাবার খবর জানতে চায়। প্রতিবারই একই কথা বলছি তাদের। আশা দিচ্ছি, সান্ত্বনা দিচ্ছি। তারা ছটফট করছে ওখানে। আমি সহ্য করতে পারছি না তাদের কষ্ট।
স্বামীর স্মৃতিচারণে হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আইনের শিক্ষার্থী ছিলাম। তিনি আমার সিনিয়র ছিলেন। তখন থেকে তার আদর্শে আমি মুগ্ধ।
হাসিনা বলেন, এলাকায় সালাউদ্দিন আহমেদ খুব জনপ্রিয়, তার অনেক সুনাম। সবাই তাকে পছন্দ করে। তার স্ত্রী বলেই আমাকেও তারা ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছিল।
আমাকে সালাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হিসেবেই তারা চেনে। আমিও সেই পরিচয়ে গর্বিত।
স্বামীকে ফেরত পেতে তিনি গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা কামনা করেন, বলেন, ‘আমরা এখন বিপদে আছি। আমাদের পাশে থাকুন। নেতিবাচক লেখালেখি করে আমাদের কষ্ট বাড়িয়ে দেবেন না- এটা আমার মিনতি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫