কুড়িগ্রাম থেকে: ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগ সরকার এখানকার বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের আপন করে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বরণের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, কোনো সরকারই স্থল সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রসীমা সমস্যা, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করতে পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এসব সমস্যার সমাধান করেছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগ সরকার এখানকার বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়েছে। ’
‘এখন থেকে আর ছিটমহল বলে কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা তাদের আপন করে নিবেন। তারা আমাদের আপনজন। ’
প্রধানমন্ত্রী এসময় কুড়িগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে শিল্পোন্নয়ন ঘটানো হবে। রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হবে। নদী ড্রেজিং করা হবে। জেলায় আলাদা স্টেডিয়াম বানানো হবে। কেবল কুড়িগ্রামই নয়, পুরো বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ’
জনসভায় যোগ দেওয়া কুড়িগ্রামবাসীকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কাছে দাবি-দাওয়ার প্রয়োজন নেই। উন্নয়নের জন্য কী করতে হবে, তা আওয়ামী লীগ ভালোভাবে জানে। আমাদের উন্নয়ন নীতিমালা আছে। আমরা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ’
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী দেশে থাকতে আন্দোলনের নামে মানুষ মেরেছেন। আর এখন তিনি বিদেশে গেছেন। বিদেশের মাটিতে বসে এখন নতুন ষড়যন্ত্র করছেন। বিদেশের মানুষ যারা এখানে, তাদেরকে হত্যা করে এদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চাইছেন। ’
বিএনপি-জামায়াতকে জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে নির্বাচনের সময় থেকে শত শত মানুষ ওই বিএনপি-জামায়াত জোট পুড়িয়ে মেরেছে। দুই হাজারের বেশি বাস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে, প্রাইভেটকার পুড়িয়ে দিয়েছে। বাসে মানুষ পুড়িয়ে দিয়েছে। ’
‘ওরা মানুষ না, ওরা জানোয়ার। যারা মানুষকে পুড়িয়ে মারে, মানুষের ক্ষতি করে, তারা মানুষের কল্যাণ আনতে পারে না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেড়শ’র বেশি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। এখনও অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাসের ড্রাইভার, শিশু, কলেজের ছাত্রী কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ’
‘আমাদের দেশ যেন উন্নতি লাভ করে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যদিও এটা অনেকের সহ্য হয় না। ’
দেশে জঙ্গিবাদের উথান ঠেকানোর বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। কখনোই এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেব না। ’
বিশ্বসভায় যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গড়ে উঠবে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। ’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডলের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
নাগরিক সমাজের পক্ষে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘এই অঞ্চল দেশের সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা। এখানে মঙ্গা হতো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এটি আর মঙ্গার দেশ নয়। এটি এখন চাঙ্গার দেশ। সব দিক থেকে এখানে মানুষ চাঙ্গা রয়েছে। ’
তিনি কুড়িগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
দুপুর থেকে হাজারো জনতা বর্ণাঢ্য মিছিল সহকারে সভাস্থলে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ২টার মধ্যে কলেজ মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনতার ঢল মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তাগুলোতে উপচে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে কুড়িগ্রামের মানুষের আগ্রহের কমতি ছিলো না। তারা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে সভায় যোগ দেন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ সভায় অংশ নেন। সভায় নারীদেরও ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো।
অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য গাছের মগডালে ওঠে পড়েন। প্রচুর ভিড় সামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
কলেজ মাঠে ১’শত ৩০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া দৃষ্টি নন্দন নৌকার ওপর মঞ্চ তৈরি করা হয়।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ে জনসভা মঞ্চে আসেন। মঞ্চে ওঠার পর হাজারো জনতা তাকে স্বাগত জানায়।
সভাস্থলে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ১৬টি কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
এর আগে, সকালে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামের সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় একটি সুধী সমাবেশে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫/আপডেট ১৬২৩ ঘণ্টা/আপডেট ১৯৩৫ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ
** নতুন নাগরিকদের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন করবো
** আপনারা এখন নাগরিক, একেকজন একেকটি ফুল
** বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো নীলফামারীর বিলুপ্ত ৪ ছিটমহল
** দাসিয়ারছড়ায় প্রধানমন্ত্রী