ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সুফল পাবে আ’লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সুফল পাবে আ’লীগ

ঢাকা: দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক বেশি সুবিধা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচননে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারার সুবিধার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর ঝামেলা পোহাতে হবে না দলটিকে।

পাশাপাশি দলের কাছেও নির্বাচিত প্রার্থীরা দায়বদ্ধ থাকবেন।

চলমান ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারে যারা নির্বাচিত হন তারা দলের লোক হলেও দলের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থাকে না। কারণ দল তাদের সমর্থন দিলেও নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্দলীয় হওয়ায় দল তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনেই প্রতিটি জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকে কয়েকজন করে। প্রত্যেকেই দলের মনোনয়ন বা সমর্থনের জন্য শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। একমাত্র সংসদ নির্বাচনেই একজন করে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব হয় না। ফলে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে যান। দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েন ওই সব প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে। দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। এর ফলে ভোটও ভাগ হয়ে যায় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে বিজয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় দলের প্রার্থীরা পরাজিত হন। গত বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হওয়ায় একক প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ।

সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার আইন (সংশোধন) পাশ হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীক ও দলীয় মনোনয়নে।

এদিকে দলীয়ভাবে নির্বাচনের যে পদ্ধতি চালু আছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেওয়া হবে। এই সব স্তরে যে কমিটিগুলো রয়েছে সেই কমিটির মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মোনয়ন দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলের সংসদীয় বোর্ড রয়েছে। এই সংসদীয় বোর্ডের পক্ষে সম্ভব না ইউনিয়ন পর্যায়ে বা পৌরসভায় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কাজ করা। এর জন্য আলাদা ফোরাম থাকতে হবে। সংসদীয় বোর্ডের মতোই বোর্ড গঠন করে দেওয়া হবে। তবে কোন পর্যায়ের জন্য কোন বোর্ড কাজ করবে সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। এ জন্য দলের গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আসবে বলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান।

গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আইন পাশ হয়। এ বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদীয় বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বোর্ড গঠন করে দেওয়া হবে। এ বোর্ড দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড রয়েছে। এই বোর্ড দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এ ধরনের বোর্ড গঠন করা হবে।

এদিকে এই সার্বিক বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম, দলের গঠনতন্ত্র, ইশতেহার ইত্যাদি তৈরির কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকেন তারা এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন।
 
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আগে দল সমর্থিত প্রার্থী থাকতো এখন দল মনোনীত প্রার্থী থাকবে। দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারা মনোনয়ন দেবেন সেটা ঠিক করা হবে। এ জন্য আমাদের যারা নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা এই ধরনের কাজ করে থাকেন তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ব্যাপারে গাইড লাইন এলে অফিসিয়ালি কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা দলের জন্য ইতিবাচক। এ আইন হলে স্থানীয় সরকারে দলের যারা নির্বাচিত হবেন তাদের দলের কাছে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা থাকবে। এখন কোনো জবাবদিহিতা নেই। এই নির্বাচনে প্রস্তুতির ব্যাপারে আমরা কী করবো সেটা দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।