ঢাকা: ২৮তম সম্মেলনের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতাদের জীবন-বৃত্তান্ত যাছাই-বাছাই চলছে।
চলতি বছরের ২৬ জুলাই সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য তিনজন হলেন- সিনিয়র সহ সভাপতি আজিজুল হক রান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম এবং সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন।
আংশিক কমিটি ঘোষণার সময় সংশ্লিষ্টদের গত সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু এরপর সাড়ে তিনমাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বাকি ২৪৬ সদস্যের ঠিকানা নির্ধারিত হয়নি।
দলীয় নেতারা জানান, আংশিক কমিটি ঘোষণার পর বলা হচ্ছিল-শোকের মাস আগস্ট জুড়ে নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।
তাই সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা ঘোষণা পরামর্শ ছিল সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের। তবে এ নিয়ে সংগঠনের বর্তমান নেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, পদ প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত যাছাই বাছাই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
তবে কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চান তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘শীর্ষ পদের জন্য যোগ্যদের যাছাই বাছাইয়ের জন্য প্রায় আড়াই মাস হাতে রেখে সম্মেলনের সূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের যেমন সময় নিয়ে যাচাই বাছাই করে নির্বাচিত করা হয়েছে আমরাও একটু সময় নিয়ে যোগ্যদেরই আনতে চাই। ’
তার সঙ্গে একমত পোষন করলেন আরও কয়েকজন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাও।
নতুন এ কমিটিতে তাদেরও শীর্ষ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করছে একাধিক সূত্র।
তারা বলছেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য অনেক ভূঁইফোর নেতা ‘কঠিন ছাত্রলীগার’ সেজে তাদের চারপাশে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু কমিটি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের কঠিন পরিস্থিতিতে এদের কারও নাম-গন্ধ ছিল না। তাই একটু সময় নিয়ে দেখে-শুনে কমিটি করাই ভালো হবে।
তবে এর বিপক্ষেও যুক্তিও দেখালেন বেশ কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, যোগ্য কারা সেটা সিভি দেখে যাচাই করা সম্ভব নয়। বিগত সময়ের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
আর এ জন্য কালক্ষেপণের খুব দরকার আছে বলে মনে করেন না তারা।
এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পদহীন থাকা অনেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর কণ্ঠে হতাশাও শোনা গেল।
তাদের অভিযোগ, নিজেদের অনুসারীদের কমিটিতে জায়গা দিতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
এদিকে নেতা নির্বাচনে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।
সূত্রের দাবি, সভাপতি সোহাগ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অনেকটা পোড় খাওয়া হলেও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন সে তুলনায় অনেকটাই নবীন।
সোহাগ আগের কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তারও আগে ছিলেন জিয়া হলের সাধারণ সম্পাদক। আর জাকির ছিলেন সোহাগ-নাজমুল কমিটির বর্ধিতাংশের সহ-সম্পাদক।
এর আগে তিনি কোনো পদ-পদবীতে ছিলেন না। তাই সোহাগের মাঠ অনেকটা গোছানো থাকলেও জাকিরের সব কিছু নতুন করে গোছাতে হচ্ছে।
তাছাড়া সিনিয়র জুনিয়রের সমন্বয়ও জাকিরের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের অনুসারীদের মধ্যে যারা শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছিলেন তাদের মধ্যে জাকিরই সর্বকনিষ্ঠ।
বাকিরা শীর্ষ পদের দৌড়ে পিছিয়ে থেকে এখন দ্বিতীয় সারির পদে আসার জন্য অপেক্ষামান। এই পদ প্রত্যাশীদের অনেকেই জাকিরের চেয়ে বয়সে ও রাজনীতিতে সিনিয়র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, জাকির ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। কিন্তু পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা রয়েছেন, যারা ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। তাই ‘সিনিয়রদের’ অধীনস্থ রেখে নেতৃত্ব মসৃন রাখা জাকিরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে মতামত জানতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গত ৫ থেকে ১২ অক্টোবর ছাত্রলীগের দফতর সেলের তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়।
দফতর সেলের তথ্যানুযায়ী ৪ হাজারেরও বেশি পদপ্রত্যাশী তাদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
এসএ/এমএ