বরিশাল থেকে: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম পীঠস্থান জেলা বরিশাল। তাই পৌরসভা নির্বাচনের হাওয়াও এখানে বেশ জোরালোভাবেই লেগেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় ছয়টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলো হলো গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী ও বাকেরগঞ্জ।
সরেজমিন জেলা পৌরসভাগুলো ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা পুরোদমে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এসব প্রচার-প্রচারণার সবই প্রায় হাট-বাজার বা বন্দর কেন্দ্রিক। অবশ্য কিছু কিছু প্রার্থী সীমিত পর্যায়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জনসংযোগও করছেন। চায়ের স্টলগুলোতেও চলছে নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা, ভোটের হিসাব নিকাশ।
স্থানীয় নেতাকর্মী, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরিশালের ওই ছয়টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের গড়ে কমপক্ষে পাঁচজন করে প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ এগিয়ে আছেন জনপ্রিয়তায় কেউ বা আবার শীর্ষনেতাদের আশীর্বাদের জোরে। এছাড়া দল নিরপেক্ষ প্রার্থীরাও মাঠে আছেন জোরেশোরে।
স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, দলকে প্রথমে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দিতে হবে। এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম জমা দিতে হবে। বাকি প্রার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে গণ্য হবে। তাই প্রার্থী বেশি থাকলেও আপাত দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই দলের। তবে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী দলত্যাগ করলে বা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলে বিপদ হবে সংশ্লিষ্ট দল সমর্থিত প্রার্থীর।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীই সীমিত আকারে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি কিংবা অন্য দলের প্রার্থীরা মাঠে নেই। যদিও এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন- বিনা চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন দলকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কোথাও কোথাও দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও তারা মাঠে নেই।
স্থানীয়দের মতে, বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে না থাকার একটাই কারণ। আর তা হলো মামলা বা গ্রেফতার ভীতি। গত কয়েকদিন অনেক প্রার্থীর দেখা মিললেও গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা গ্রেফতার হওয়ার তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
গৌরনদীতে স্থানীয়রা বলছেন,সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর ই আলম হাওলাদার ও বর্তমান পৌর বিএনপির সভাপতি এসএম মনিরুজ্জামান প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের কোনো প্রচারণা নেই। এদিকে প্রার্থী হিসেবে জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মো. হারিছুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মনির মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া।
আওয়ামী লীগ কর্মী ফরিদ হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা ভয়েই মাঠে নেই। কিন্তু নির্বাচন করতে হলে মাঠে থাকবে হবে। এক্ষেত্রে তাদের অনুপস্থিতিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কাজে লাগাচ্ছে।
উজিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ শিকদারসহ অন্তত ছয়জন প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির চারজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বর্তমানে তারা কোনো সাড়াশব্দ করছেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন-উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হুময়ুন খান, আব্দুল হক বালি ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শাহীন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইছুল ইসলাম রিয়ন বলেন, বিএনপির কোনো প্রার্থীকে তো চোখে পড়ে না। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে তাদের কথা মাঝে মাঝে শোনা যায়। যদি তারা অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আমরাও সেভাবেই মোকাবেলা করবো।
বানারীপাড়া উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্তত ছয়জন প্রার্থী নিজেদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে দু’জনের নাম বেশ জোরালো ভাবেই শোনা যাচ্ছে। এদের একজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাস চন্দ্র শীল, অন্যজন বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা, যিনি পরপর তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বানারীপাড়ার মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের এ নিয়ে ক্ষোভেরও শেষ নেই। বলা হচ্ছে, তিনবার ক্ষমতায় থাকলেও পৌরসভার কোনো উন্নয়ন নেই। তাই এবার মেয়র হিসেবে তারা অন্য কাউকেই চান।
বানারীপাড়ায় ওই দুই প্রার্থীই জনসংযোগ করছেন সমানতালে। কিন্তু সুভাস চন্দ্র শীল দলের কাছে মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করবেন না বলেও জানান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যদি চেয়ে না পাই, তবে তো বর্তমান পদ থেকেই পদত্যাগ করতে হবে। সেটা অপমানজনক হয়ে যাবে। রাজনীতি করতে চাই, দল যদি যোগ্য মনে করে; তবে দলই খোঁজ নেবে। সিদ্ধান্ত নেবে কাকে প্রার্থী করা হবে।
৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইউনুস মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই, নেই কোনো ড্রেনেজ সিস্টেম। বাজারে পানি উঠে যায়, আগুন লাগলে চিপা গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকে না। এছাড়া এলাকার রাস্তা-ঘাটেরও উন্নয়ন নেই। তাই এবার অন্য কোনো মেয়র দরকার।
এদিকে বাকেরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের চারপ্রার্থী রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে বর্তমান মেয়র লোকমান হোসেনের ওপর শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু এই আসনটি পুরোপুরি জাতীয় পার্টির দখলে। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই এ আসন দলটির হাতছাড়া হয়নি। এখানকার বর্তমান এমপি হচ্ছেন রত্না আমিন। জানা গেছে, তার মেয়ে ব্যরিস্টার ফারাহকে মনোয়ন দেওয়া হতে পারে। এদিকে পৌর বিএনপির সভাপতি মতিউর রহমান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এর ভাই খবির শিকদার নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির এ নেতারাও কোনো প্রচারণায় নেই। একই অবস্থা চলছে মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জেও।
অন্যদিকে ভোটের মাঠে পরস্পর বিরোধী দুই জোটের অন্য শরিকদলগুলোও প্রার্থিতা নিয়ে কোনো আওয়াজ দিচ্ছে না। এই অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো তেমন কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি।
আগামী ডিসেম্বরের শেষে দেশের ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে সংশোধিত আইনের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনী বিধিমালা ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালাও সংশোধন করছে ইসি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
ইইউডি/আইএ/আরআই