বরিশাল থেকে: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির অন্যতম স্থান হিসেবে পরিচিত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। তবে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক ভোটের নীতিই যেন এ অঞ্চলে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এ অঞ্চলে এমন তিনজন রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের ‘ভোটেই’ (সমর্থন) প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। বলা হচ্ছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও যিনি সেই ভোটটি পাবেন, জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবেন তিনিই।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিভাগের আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন ওই তিন শীর্ষ নেতাই। তাদের একজন হলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, যার বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা। অন্যজন হলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, যার একক আধিপত্য ঝালকাঠি জেলা জুড়ে। অপরজন হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, যার কর্তৃত্ব ভোলা জেলায়।
স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররাও বলছেন, বিএনপি মাঠে সক্রিয় নেই। জামায়াত নির্বাচনে অংশই নিতে পারছে না। তাই ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একচ্ছত্র ‘সুবিধা’ নিতে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই জয়ী হবেন বলে ধারণা করছেন তারা। আর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন ওই তিন প্রভাবশালী নেতা।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী ফরিদ হাওলাদার। স্থানীয় পরিবহন বাস মালিক সমিতির কর্মচারী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরো জেলাতে একটাই ভোট। তিনি (আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ) যারে দ্যাবেন সেই পার অইয়া যাইত্তারে। কারণ, তার সিদ্ধান্তই সবাইরে মাইন্ন্যা নিতে অইবে’।
একই কথা জানালেন উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইছুল ইসলাম রিয়ন।
তিনি বলেন, এ জেলায় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সবার নেতা। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। মূলত, তার ভোটটাই (সমর্থন) সবার দরকার। তিনি আরো বলেন, হাসনাত ভাই শুধু বরিশালই নয়, পটুয়াখালী এবং বরগুনাতেও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এসব এলাকায় তার সমর্থন লাগবেই।
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাস চন্দ্র শীল বলেন, হাসনাত ভাই বরিশালসহ এ অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা নেতা বলেন, বরিশাল থেকে পটুয়াখালী এবং বরগুনার পৌরসভা নির্বাচন পদে প্রার্থী হতে হলে তার সমর্থন লাগবে।
এদিকে ঝালকাঠির সর্বস্তরের ভোটাররা বলছেন, এবার শুধু নলছিটিতে নির্বাচন হলেও ভবিষ্যতে পুরো জেলার পৌর নির্বাচনেও প্রার্থী মনোনয়ন আমির হোসেন আমুই দেবেন। তার ভোট ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। ঝালকাঠির ফলবিক্রেতা মো. বাবু বলেন, আমু সাহেবই মনোনয়ন দেবেন। যে মনোনয়ন পাবেন তারই জয় প্রায় নিশ্চিত।
একই অবস্থা ভোলাতেও। সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন হিসেবে স্বীকৃত নেতা তোফায়েল আহমেদ ছাড়া কারো কোনো গতি নেই। সেখানেও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তার ভোটটিই প্রয়োজন।
আগামী ডিসেম্বরে দেশের ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এবারই প্রথমবারের মতো দেশে স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার আয়োজন চলছে। ভবিষ্যতে অন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে আইন সংশোধন করছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
ইইউডি/আরএ/এএসআর
** প্রচারণায় আ’লীগ, মাঠছাড়া বিএনপি