বরিশাল থেকে: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সতর্ক হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপিকে দূর করতে হবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
বরিশালের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো কোন্দল না থাকলেও বিভিন্ন কোরাম রয়েছে। আর কোরাম নেতাদের নিজস্ব ভোটবাক্সও রয়েছে। আবার কেউ হচ্ছেন ত্যাগী নেতা। যারা আওয়ামী লীগের কর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। তাই চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনমত বুঝে প্রার্থী না দিলে ভোট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হলে বরিশালের প্রায় প্রতিটি উপজেলায়ই বিএনপির প্রার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বিএনপিরও নেতায়-নেতায় ঐক্য গড়ার বিকল্প নেই। স্থানীয় পর্যায়ে যে বিভেদ রয়েছে, সেগুলো মিটিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে হবে দলটিকে। অন্যথায় ভরাডুবি ছাড়া পথ নেই।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ জেলার ছয়টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী ও বাকেরগঞ্জ।
গৌরনদীর স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বরিশালের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার মো. আলাউদ্দীন ভূঁইয়া সবচেয়ে জনপ্রিয়। তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সাধারণ ভোটারের ভোটও পাবেন। তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলেরই ৩ জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। যদি আওয়ামী লীগ হারিছুর রহমানকে প্রার্থী করে আর আলাউদ্দীন ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, তবে বিএনপির প্রার্থীর এখানে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপিকে ঐক্যের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করতে হবে।
উন্নয়নকর্মী মানিক সাহা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন দলের প্রার্থী জিতবেন, তা নির্ভর করবে শর্ত পূরণের উপর। আওয়ামী লীগকে সতর্কতার সঙ্গে প্রার্থী বাছাই করতে হবে আর বিএনপিকে ঐক্য গড়তে হবে।
উজিরপুরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জামাল হোসেন, সহ সভাপতি অশোক কুমার হালদার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ শিকদার, ঢাকার উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অহেদুজ্জামান খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দীন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বালী।
অন্যদিকে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন-উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি হুমায়ুন খান, আব্দুল হক বালি, উপজেলা যু্বদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শাহীন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহসীন কবীর ও যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম খান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রইছুল ইসলাম রিয়ন বাংলানিউজকে বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেখা যাক কি হয়। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন- আওয়ামী লীগের আব্দুল মজিদ শিকদার এবং বিএনপির শহীদুল ইসলাম খানের জনপ্রিয়তা এ আসনে বেশি।
বানারীপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইউনুস মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাস চন্দ্র শীল, বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সুব্রত লাল কুণ্ডু, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ তসলিম তালুকদার এবং পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য মোহাম্মদ হারুন।
তবে তাদের মধ্যে সুভাস চন্দ্র শীলের জনপ্রিয়তা বেশি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, সুভাস চন্দ্র শীল ত্যাগী নেতা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন। এবার সাধারণ ভোটাররা তার পক্ষেই রয়েছেন। তিনি মনোনয়ন না পেলে হিসাব-নিকাশ উল্টে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান মেয়র এলাকার কোনো উন্নয়ন না করায় তিনি মনোনয়ন পেলে ভোট অন্য দলের প্রার্থীরা পেতে পারেন।
এদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মাস্টার এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে তথ্যমন্ত্রীর এপিএস সাজ্জাত হোসেনের প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে সুভাষ চন্দ্র শীল মনোনয়ন পেলে তারা ধোপে টিকবেন না বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা।
বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের চার মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন- বর্তমান মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া, সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান মাহবুব আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল হোসেন ডাকুয়া।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- পৌর বিএনপির সভাপতি মতিউর রহমান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের ভাই খবির শিকদার। এছাড়া জাতীয় পার্টির এমপি রত্না আমিনের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারাহ মনোনয়ন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য এ আসনে জয়ী হওয়া কঠিন হবে। কেননা, আজ পর্যন্ত কোনো সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টি হারেনি।
একই অবস্থা চলছে মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জেও। এ দুই পৌরসভারও নাগরিকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বিএনপিরও ঐক্য গড়ার বিকল্প নেই।
আগামী ডিসেম্বরে ২৪৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করছে ইসি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
ইইউডি/আরএ/এএসআর
** ভোট একটি, যিনি পাবেন তিনিই পার!
** প্রচারণায় আ’লীগ, মাঠছাড়া বিএনপি