ঢাকা: লন্ডনে সফররত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছেও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
কারাবন্দি হওয়ার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে ও খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্ভাব্য যে দু’টি তারিখের কথা বলেন, এক সপ্তাহ আগে তারিখ দু’টি পার হয়ে গেছে।
কয়েক দফা প্লেনের টিকিট বুকিং দেওয়ার খবর শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত দেশের উদ্দেশ্যে প্লেনে ওঠা হয়নি খালেদা জিয়ার। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দেশে ফেরার আরেকটি ‘ডেটলাইন’ শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
এদিকে দুই মাসের বেশি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে রাজনীতিতে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন নানা কথা। পর্যবেক্ষক মহলও বিষয়টিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন।
সূত্র মতে, বিএনপির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার পর গত প্রায় ৩২ বছরের মধ্যে কোনো দিনই টানা দুই মাস দেশের বাইরে অবস্থান করেননি খালেদা জিয়া। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশ ছাড়েননি বিএনপির চেয়ারপারসন, যাকে ‘আপসহীন নেত্রী’ বলে দাবি করেন তার সমর্থকরা।
রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে- এমন কি ঘটল যে দলের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
দলের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও খালেদা জিয়ার ফেরা না ফেরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত সফরে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার আগে ফেরার কোনো তারিখ কেন বলে যাননি দলের চেয়ারপারসন? কেনই বা বার বার টিকিট বুকিং দিয়ে তা বাতিল করছেন তিনি?
সূত্র মতে, সাত বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসার কাছেই ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এবং দুই নাতনি জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে সেখানে বাস করছেন খালেদা জিয়া।
লন্ডন সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে দুই দফা চোখের অপারেশন করিয়েছেন খালেদা জিয়া। পায়ের চিকিৎসাও নিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু লন্ডনের মতো একটি জায়গায় চোখের ও পায়ের চিকিৎসা গ্রহণে টানা ২ মাস সময় লেগে যাওয়ার বিষয়টি বিএনপির নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও স্বাভাবিক মনে করছেন না। তারা অধীর আগ্রহে তাদের নেত্রীর দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে, তিনি তো চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে গেছেন। যেহেতু এটা পলিটিক্যাল সফর নয়, সেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কমপ্লিট কোনো ইনফরমেশন নেই। আমরা আশা করছি, তিনি চিকিৎসা শেষে সুস্থ শরীরে দেশে ফিরে আসবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার কোনো খবর বিএনপি নেতাদের কাছে না থাকলেও বিয়ষটি নিয়ে নিয়মিত কথা বলে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খুব শিগগিরই শেষ হবে। এতে কী হবে খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন। তাই তিনি দেশে ফিরবেন কি-না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
আরেকটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে, খালেদা জিয়া আর দেশে ফিরবেন না। তিনি সেখানে বাসা ভাড়া করেছেন। সেখানেই থেকে যাবেন।
তবে প্রতিপক্ষের এ ধরনের বক্তব্যে কান দিতে রাজি নন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, চিকিৎসা শেষ করেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। ফিরে এসে নেতৃত্ব দেবেন দলের। দল গোছানো, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন।
বিএনপির নেতাদের দাবি, লন্ডনে বসে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দীর্ঘ পরিকল্পনা করছেন খালেদা। আগামী দিনে সাংগঠনিক কাঠামোয় কাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া যায়, সে বিষয়টিও তারেক রহমানের সঙ্গে শেয়ার করছেন। এসব কারণেই তার দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিলম্বিত দেশে ফেরা নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই। তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। চিকিৎসা শেষ হলেই ফিরে আসবেন। তবে তার ফেরার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এজেড/এএসআর